ইলেক্ট্রিক ব্রেড বোর্ড বা প্রজেক্ট বোর্ড সম্পর্কে বিস্তারিত


ব্রেডবোর্ড বা প্রজেক্ট বোর্ডে সম্পর্কে যে বিষয় এখানে আলোচনা করা হবে তার সংক্ষিপ্ত পরিচ্ছেদসমূহ
  1. ব্রেডবোর্ড কি ?
  2. ব্রেডবোর্ড/প্রজেক্ট বোর্ডের পরিচিতিঃ
  3. ব্রেডবোর্ডের বিবরণঃ
  4. কিভাবে ব্রেডবোর্ডে কানেকশন দেয়?
  5. জাম্পার ওয়্যার কত প্রকার?
  6. জাম্পার ওয়্যার এর পরিবর্তে কি ব্যবহার করতে পারি?
  7. ব্রেডবোর্ডের দাম কেমন?
  8. কিভাবে ভালো ব্রেডবোর্ড চিনবো?
  9. ব্রেডবোর্ড দিয়ে বেসিক ইলেকট্রনিক্স সার্কিটঃ
  10. কম্পোনেন্ট লিস্টঃ
  11. সার্কিট ডায়াগ্রামঃ
  12. ব্রেডবোর্ডে সার্কিট টি যেমন দেখাবেঃ

ব্রেডবোর্ড

ব্রেডবোর্ড ইলেকট্রনিকস ল্যাবরেটরির জন্য ব্যবহার্য একটি ভোরোবোর্ড এর বিকল্প বোর্ড।
এতে সোল্ডারিং ছাড়াই ইচ্ছেমত পার্টসগুলো বসানো ও খোলা যায়, যা নতুন ব্যবহার কারিদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় উপাদান।
কোন সার্কিট ডায়াগ্রামের টেস্টিং এর জন্য এটি ব্যবহার হয়। এখানে কোন সার্কিটটি তার ডায়াগ্রাম অনুযায়ি ডামি তৈরি করে ডিজাইনটি পরীক্ষা করে দেখা যায়। এটি ভেরোবোর্ড বা স্ট্রিপবোর্ড থেকে আলাদা এখানে ঝালাই বা সোল্ডারিং করতে হয়না সংযোগগুলো তার এর মাধ্যমে দেয়া হয়, এতে পার্টস সমূহের ও তেমন কোন পরিবর্তন ( পা বা লেগ কাটা কাটি) প্রয়োজন পড়েনা। সবচেয়ে বড় সুবিধাটি হল এটি অসংখ্যবার ব্যবহার করা যায়।

ব্রেডবোর্ড/প্রজেক্ট বোর্ডের পরিচিতিঃ

ব্রেডবোর্ড (breadboard) এর নামের মধ্যে ব্রেড থাকলেও আসলে এটির সাথে রুটির, এমনকি খাদ্যেরও কোনও সম্পর্ক নেই। ব্রেডবোর্ড হচ্ছে সার্কিট প্রোটোটাইপ করার জন্য বিশেষ ধরণের বোর্ড যা প্রজেক্ট তৈরি করতে দ্রুত সাহায্য করে থাকে। এজন্য এর অপর নাম প্রজেক্ট বোর্ড। নিচে ব্রেডবোর্ডের একটি ছবি দেখি -

ব্রেডবোর্ড বা প্রজেক্ট বোর্ড
ব্রেডবোর্ড বা প্রজেক্ট বোর্ড


ব্রেডবোর্ডে যে ছিদ্রগুলো দেখা যাচ্ছে ওগুলো কম্পোনেন্ট বসানোর জন্য। মাঝখানের যে ২ সারি ছিদ্র দেখা যাচ্ছে ও গুলো লম্বালম্বি ভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত। উপরের ও নিচের সারির ছিদ্রগুলো পাশাপাশি ভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত। নিচের ছবি দেখে ব্যাপারটি ভালোমত বোঝা যাবে।
ব্রেডবোর্ড/প্রজেক্ট বোর্ডে ছিদ্রগুলো যেভাবে থাকে
ব্রেডবোর্ড/প্রজেক্ট বোর্ডে ছিদ্রগুলো কিভাবে থাকে



ব্রেডবোর্ডের বিবরণঃ

✪ মাঝখানের ছিদ্রগুলোর ১টি সারির ৫টি ছিদ্র লম্বালম্বি ভাবে কানেক্টেড। কিন্তু পাশাপাশি একটি সারির সাথে আরেকটি সারি কানেক্টেড না।
✪ আবার নিচের ছিদ্রগুলোর ৫০টি ছিদ্র পাশাপাশি যুক্ত, কিন্তু উপরের ও নিচের সারি যুক্ত নয়।
✪ মাঝখানে যে একটি ফাঁকা আছে, এই ফাঁকটি প্রস্থ আইসির এক পা থেকে অপরদিকের আরেক পায়ের দূরত্বের সমান। এবং এই ফাঁকের দুইপাশের সারি যুক্ত না। তাই এই জায়গায় আইসি বসিয়ে কাজ করা যাবে। মাঝখানের ফাঁকের ফলে আইসির দুইদিকের পিন শর্ট হয়ে যাবেনা।
✪ ব্রেডবোর্ডের উপরের ও নিচের সারি কে সাধারণত কমন পাওয়ার লাইন হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং মাঝখানে কম্পনেন্ট বসানো হয়।
✪ কিছু ব্রেডবোর্ডে আবার পাওয়ার লাইনের মাঝখানে ব্রেক থাকে। যেগুলোতে ব্রেক থাকে সেগুলোতে মাঝখানে দুইটা সারির মাঝের দূরত্ব একটু বেশি থাকে। তবে শিওর হওার জন্য মিটার দিয়ে চেক করে নেয়া উচিত।
✪ ব্রেডবোর্ডের সুবিধা হল এখানে কম্পোনেন্ট গুলোকে পার্মানেন্টলি সোল্ডার করতে হয় না। যেকোনো সময় খুলে ফেলা যায়। তাই র‍্যাপিড প্রটোটাইপিং এর জন্য ব্রেডবোর্ড খুব কাজে লাগে।

কিভাবে ব্রেডবোর্ডে কানেকশন দেয়?

জাম্পার ওয়্যার/হেডার ক্যাবল
জাম্পার ওয়্যার/হেডার ক্যাবল

ব্রেডবোর্ডে এক পয়েন্ট থেকে আরেক পয়েন্টে কানেকশন দেয়ার জন্য জাম্পার ওয়্যার (Jumper wire) নামে বিশেষ ধরণের তার ব্যবহার করা হয়। একে মাঝেমাঝে হেডার ওয়্যার ও বলে। জাম্পার ওয়্যার আসলে চিকন সাধারণ তার। যার দুই মাথায় প্লাস্টিকের হাউজিং থেকে শক্ত পিন বের হয়ে থাকে। এই পিন ব্রেডবোর্ডের ছিদ্রতে ঢুকানো হয়।


জাম্পার ওয়্যার কত প্রকার?

জাম্পার ওয়্যার ৩ ধরণের হয়-
  • ১। মেইল টু মেইল- এধরণের জাম্পারের দুইমাথা থেকে পিন বের হয়ে থাকে
  • ২। ফিমেইল টু ফিমেইল - এধরণের জাম্পারের দুইমাথায় পিন ঢোকানোর জায়গা থাকে।
  • ৩। মেইল টু ফিমেইল - এধরণের জাম্পার একমাথা থেকে পিন বেরিয়ে থাকে, অপর মাথায় পিন ঢুকানোর জায়গা থাকে।

জাম্পার ওয়্যার এর পরিবর্তে কি ব্যবহার করতে পারি?

জাম্পার ওয়্যারের দাম একটু বেশি হওায় অনেকে ইথারনেট কেবলের তার বা Cat5 ক্যাবল ইউজ করেন। আবার সলিড কোর তামার তার ব্যবহার করা যায়।

ব্রেডবোর্ডের দাম কেমন?

ব্রেডবোর্ড বিভিন্ন সাইজের হয় এবং কোয়ালিটি ও সাইজ অনুযায়ী দামও কম-বেশি হয়। একদম ছোট মিনি ব্রেডবোর্ড ৫০-১০০ টাকা দামে পাওয়া যায় এবং স্ট্যান্ডার্ড সাইজের গুলো ১৫০-৩০০ টাকায় পাওয়া যায়। ভালো মানের গুলো দামে বেশী হয়।

ভালো ব্রেডবোর্ড কিভাবে চিনবো?

ভালো মানের ব্রেডবোর্ডে  পাওয়ার লাইনে কোনটা পজিটিভ কোনটা নেগেটিভ ইত্যাদি মারকিং করা থাকে। আর সব ব্রেডবোর্ডের নিচেই ডাবল সাইডেড টেপ লাগানো থাকে। যার কভারটা খুলে ব্রেডবোর্ডকে পার্মানেন্টলি কোনও জায়গায় ফিক্স করা যায়।

ব্রেডবোর্ড দিয়ে বেসিক ইলেকট্রনিক্স সার্কিটঃ

চলুন এবার ব্রেডবোর্ডে একটি সার্কিট বানাই। যেহেতু ব্রেডবোর্ডে এটি আমাদের প্রথম সার্কিট, তাই আমরা খুব সহজ ও কাজের একটি সার্কিট, ডার্ক ডিটেক্টর বানাবো। সার্কিটটি বানাতে আমাদের যেসব কম্পোনেন্ট লাগবে, তা হল -

কম্পোনেন্ট লিস্টঃ

১। BC547 ট্রানজিস্টর – ১টি
২। LDR – ১টি
৩। 5k/10k/50k/100k পটেনশিওমিটার
৪। 500Ω এর মধ্যে যেকোনো রেজিস্টর (অপশনাল)
৫। এলইডি

সার্কিট ডায়াগ্রামঃ

ব্রেডবোর্ড সার্কিট ডায়াগ্রাম
ব্রেডবোর্ড সার্কিট ডায়াগ্রাম



ব্রেডবোর্ডে সার্কিট টি যেমন দেখাবেঃ

সার্কিট ডায়াগ্রামটি ফলো করে ব্রেডবোর্ডে এভাবে কম্পোনেন্টগুলো বসিয়ে ফেলি –
ব্রেডবোর্ডে সার্কিট টি যেমন দেখাবে




এখানে জাম্পারের কানেকশনগুলো সবুজ দাগ দিয়ে বোঝানো হয়েছে। নিচের পাওয়ার লাইন গ্রাউন্ড লাইন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং উপরের পাওয়ার লাইন কে পজিটিভ লাইন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। LDR এর ওপর আলো না পড়লেই LED টি জ্বলে উঠবে এবং আলো পড়লেই LEDটি নিভে যাবে। পটেনশিওমিটার বা ভেরিয়েবল ঘুরিয়ে এর সেন্সিটিভিটি কনট্রোল করা যাবে।


EmoticonEmoticon