কম্পিউটার টিপস: কম্পিউটার (Computer) কে ভালো রাখার জন্য কিছু টিপস এন্ড ট্রিক্সস জেনে নিন

Tags

বর্তমানে আমাদের জীবনে কম্পিউটার একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিটি ঘরে অন্তত একটি করে কম্পিউটার আজকাল দেখা যায়। আর কম্পিউটারের দাম কিন্তু এখনো আমাদের হাতের নাগালে নয়। আর তাই আমাদের অনেকেই টাকা জমিয়ে নিয়ে কম্পিউটার কিনে থাকেন। আর শখের এই কম্পিউটারটিকে সবসময় স্মুথ এবং স্পিডি রাখার জন্য আমাদেরকে কম্পিউটারকে নিয়মিত যত্ন করতে হবে, মানে নিয়মিত মেইনটেন্স করতে হবে। তা না হলে নতুন কম্পিউটারেই মাস দুয়েক পড়েই দেখবেন যে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আর নিয়মিত কিভাবে কি করে কম্পিউটারের যত্ন নেবেন সে ব্যাপারেই আজ আলোচনা করবো। আজকের পোষ্টের দেখানো টিপসগুলো যদি আপনি নিয়মিত ফলো করতে পারেন তাহলে আপনার পিসি অনেকদিন পর্যন্ত ভালো পারফরমেন্স দিতে পারবে।

ধুলোবালি থেকে পিসি মুক্ত রাখুন

বাংলাদেশে কম্পিউটারের সবথেকে বড় শত্রু হচ্ছে ধুলোবালি। কম্পিউটারে ধুলোবালি জমে গেলে সেখান থেকে হরেক রকমের সমস্যার উৎপত্তি হতে পারে। আপনার রুমটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখলো সপ্তাহ খানেক বা মাস খানেক পর লক্ষ্য করলে দেখবেন যে কম্পিউটারে ধুলোবালি জমে থাকে। আর এই ধুলোবালি যদি কম্পিউটারের ভেতরেও জমতে থাকে তাহলে এর জন্য হার্ডওয়্যার ম্যালফাংশন হতে পারে এবং পিসি স্লো হয়ে যেতে পারে। আর কুলিং ফ্যানে ধুলো জমলে সেখান থেকে উচ্চ শব্দ আসবে এটা তো আপনারা জানেনই। তাই নিয়মিত চেষ্টা করবেন পিসিকে ধুলোবালি মুক্ত রাখার জন্য। মনিটর, কিবোর্ড, স্পিকার, সিপিইউ সব পিসির সব ক্যাবলকেও নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।

মাসে একবার সিপিইউ কেসিং খুলে পরিস্কার করুন

আপনি যদি ডেক্সটপ ইউজার হন তাহলে নিয়মিত সিপিইউ বক্স খুলে এর ভেতরের হার্ডওয়্যারগুলোকে পরিস্কার করুন। বিশেষ করে আপনার রুমটিতে যদি নিয়মিত ধুলোবালি জমে তাহলে প্রতি ১৫দিনে একবার অন্যথায় প্রতি মাসে একবার করে সিপিইউ বক্স বা কেসিংটি খুলে নিয়ে ভেতরের মাদারবোর্ড, র‌্যাম, প্রসেসর স্লটের আনাচে কানাচে ইত্যাদি স্থানে দেখবেন ময়লা জমে রয়েছে, ওইগুলো পরিস্কার করে নিন। যদি সিপিইউ কেসিং খুলতে না পারেন কিংবা এর ভেতরের হার্ডওয়্যারগুলোকে সঠিকভাবে কিভাবে পরিস্কার করতে হয় সেটা না জানেন তাহলে সিপিইউ কেসিং বক্সটিকে খুলে নিয়ে নিকটস্থ যেকোনো কম্পিউটার সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যান, সেখান থেকেও আপনি একে পরিস্কার করিয়ে নিয়ে আসতে পারেন।

সঠিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করুন

একটি কম্পিউটারকে সঠিকভাবে সুস্থমতো চালাতে হলে চাই বিদ্যুৎ। আর এই বিদ্যুৎ হতে হবে সঠিক পরিমাণের। দরকারের চেয়ে কম এবং দরকারের চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কম্পিউটারে দেওয়া হলে দুটি ক্ষেত্রেই তা আপনার পিসির জন্য ক্ষতিকর। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে এটা আবার শিথিলযোগ্য, কারণ ল্যাপটপের সাথে যে চার্জিং এডাপ্টার দেওয়া থাকে সেটায় ল্যাপটপের জন্য সঠিক বিদ্যুৎতের অপটিমাইজেশন করা থাকে। তবে ডেক্সটপের ক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য ভালো কোয়ালিটির সুইচ, প্লাগ ইত্যাদি ব্যবহার করবেন। অনেক সময় দেখা যায় যে একটি মাল্টিপ্লাগে কম্পিউটার সহ আমরা অনেক ডিভাইস লাগিয়ে রাখি, এটাও করা উচিত নয়। বিদ্যুৎ সরবরহারে আপডাউন হলে পিসির পাওয়ার স্লাপাই থেকে শুরু করে অনেকসময় মাদারবোর্ডও নস্ট হয়ে যেতে পারে।

বছরে ২/৩ বার পিসি রিসেট করুন

এটা ডেক্সটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আর এক্ষেত্রে একটি কম্পিউটার কিভাবে সেটআপ করতে হয় সে ব্যাপারেও আপনার জ্ঞান থাকা লাগবে। তাহলে আপনি ৬ মাসে ১ বার করে পুরো পিসিকে রিসেট করতে পারেন। যেমন মনিটর, মাউস, কিবোর্ড ইত্যাদি খুলে ফেললেন, সিপিইউ কেসিং খুলে মাদারবোর্ড, র‌্যাম, হার্ডডিক্স, ডিভিডি ড্রাইভ, গ্রাফিক্স কার্ড ইত্যাদি সকল অংশকে খুলে নিয়ে ১০ মিনিট পিসিকে এভাবেই ফেলে রাখুন। আর একই সাথে লক্ষ্য রাখবেন কোনো অংশে ময়লা বা ধুলোবালি জমে রয়েছে কিনা, থাকলে পরিস্কার করে ফেলুন। ১০ মিনিট পিসির পার্টসকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে আবারো সকল অংশকে একত্রে লাগিয়ে পিসিকে সেট করে নিতে পারেন, এই পদ্ধতি বছরে ২ বার ফলো করলে পিসি দীর্ঘদিন আপনাকে ব্যাকআপ দিতে পারবে। এছাড়াও যদি পারেন তাহলে এই রিসেটিংয়ের সময় নতুন করে উইন্ডোজ সেটআপ করে নিবেন, তাহলে বাহ্যিক দিকের সাথে সাথে পিসির সফটওয়্যারের দিকেও মেইনটেন্স হয়ে যাবে।

ল্যাপটপের জন্য কুলার স্ট্যান্ড ব্যবহার করুন

কম্পিউটার

আপনি যদি ল্যাপটপে হেভি ডিউটি কাজ করে থাকেন তাহলে যত দামীই ল্যাপটপ আপনি ব্যবহার করেন না কেন এটা গরম হবেই। আর কমদামী ল্যাপটপ হলে তো এত গরম হবে যে সেটাকে আর আপনি কোলে করে নিয়ে কাজ করতে পারবেন না। এছাড়াও যারা ল্যাপটকে সবসময় ডেক্সে রেখে ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ল্যাপটপের কুলিং ফিচারটি ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। এই দুটি ক্ষেত্রেই সহজ সমাধানের জন্য আপনি কুলার স্ট্যান্ড ব্যবহার করতে পারেন। কুলার স্ট্যান্ডে এক বা একাধিক কুলিং ফ্যান দেওয়া থাকে যা একই সাথে স্ট্যান্ডের পাশাপাশি এক্সট্রা কুলিং ফিচার হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ এই কুলার স্ট্যান্ড আপনার ল্যাপটপকে সবসময়ই এক্সটা ফ্যানের সরবরাহ করতে পারবে। যারা ল্যাপটপে বেশিক্ষণ কাজ করে থাকেন তারা একটি কুলার স্ট্যান্ড কিনে নিতে পারেন এবং এগুলো দামও তেমন বেশি নয়।

বিল্ট ইন কিবোর্ডের সংযত ব্যবহার

এটাও ল্যাপটপ ইউজারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা আমার মতো ব্লগিং করে থাকেন কিংবা কিবোর্ডে বেশির ভাগ সময় টাইপিং করে থাকেন তারা অনেক সময়ই ল্যাপটপের বিল্ট ইন কিবোর্ডের উপর চাপ কমাতে আলাদা কিবোর্ড কিনে নেন। যেটা অবশ্যই ভালো। তবে অনেক সময় এর উল্টোটাও হয়ে থাকে। আমার এক পরিচিত ভাই সারাদিন এক্সট্রা কিবোর্ডে কাজ করতেন, প্রায় ৪/৫ মাস ধরে তিনি ল্যাপটপের বিল্ট ইন কিবোর্ড ব্যবহার করেননি এবং একদিন তিনি দেখলেন যে বিল্ট ইন কিবোর্ডের কয়েকটি কী কাজ করছে না! পরবর্তীতে তাকে কীগুলো পাল্টাতে হয়েছিলো। তাই এখানে আমি বলবো ল্যাপটপের কীবোর্ড সংযত ভাবে ব্যবহার করুন, আবার এক্সটারনাল কিবোর্ডের কারণে একেবারেই ব্যবহার না করা থেকেও বিরত থাকুন।

আপডেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করুন

কম্পিউটারের সফটওয়্যার অংশকে সুস্থ রাখার অন্যতম একটি টিপস হলো সব সময় আপডেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা। এটা অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে যেকোনো সফটওয়্যারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আপনি যদি পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে থাকেন তাহলে নিত্যনতুন OS আপডেট থেকে বঞ্চিত থাকবেন, একই ভাবে অনান্য সফটওয়্যারেও যদি পাইরেট ভাবে ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সেখানেও নতুন আপডেটগুলোর থেকে বঞ্চিত থাকবেন। নতুন আপডেটগুলোতে উন্নত সিকিউরিটি ফিচার ছাড়াও অনেক অপটিমাইজেশন থাকে যা আপনি মিস করবেন। তাই আমদের পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা উচিত নয়, বিশেষ করে পাইরেটেড অপারেটিং সিস্টেম তো আরো নয়। কারণ একটি অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে আপনি আপনার পুরো পিসিকে চালিয়ে থাকেন, এই মূল সফটওয়্যারটিই যদি পাইরেটেড হয় তাহলে পিসিতে ভাইরাস প্রোটেকশন সহ অনান্য অপটিমাইজেশন থেকে আপনি বঞ্চিত থাকবেন।

এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন

আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করেন তাহলে আপনার কাছে দুটি পদ্ধতি খোলা রয়েছে। প্রথমটি হলো আপনি উইন্ডোজের ডিফল্ট সিকিউরিটি সিস্টেমে Windows Defender ব্যবহার করতে পারেন (যেটি আপনি না চাইলেও অটোমেটিক ভাবে চলবে থাকবে)। আরেকটি হলো আপনি যদি আরো বেশি ফিচার চান তাহলে আলাদা ব্রান্ডের যেমন Kaspersky, Bitdefender, Norton, Avast ইত্যাদির অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে পারেন। যারা যারা পিসিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বা অনলাইন ইউজারদের জন্য তো এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা ফরজের পর্যায়ে পড়ে। আর শুধু এন্টিভাইরাস ব্যবহার করলেই চলবে না, নিয়মিত পিসিকে এন্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যানও করিয়ে নিতে হবে। আরেকটি কথা, দরকার হলে ফ্রি এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন তাও পাইরেটেড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা থেকে সর্বদা বিরত থাকুন।

Anti-Malware সফটওয়্যার ব্যবহার করুন

মনে রাখবেন Anti-Virus এবং অ্যান্টি ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার কিন্তু এক নয়। এই দুটির কাজ ভিন্ন। কারণ সকল malware কিন্তু ভাইরাস নয়, কিন্তু সকল ভাইরাসই হলো malware । তাই সাধারণ এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারগুলে ক্ষতিকর malware প্রোগ্রামগুলোকে ধরতে পারে না। তবে বর্তমানে প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাসগুলোতে আলাদাভাবে malware সেকশন অর্ন্তভুক্ত করা থাকে।

আরও জানুন

ডিভাইস ড্রাইভার আপডেট করুন

পিসিকে সুস্থ রাখার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ টিপস হচ্ছে আপডেটেড ড্রাইভার ব্যবহার করা। বিশেষ করে আপনি যদি এক্সটারনাল গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এই গ্রাফিক্স কার্ডের ড্রাইভারটি নিয়মিত আপডেট করা উচিত। এছাড়াও অনান্য সকল ড্রাইভারগুলোরও আপডেটেড সংস্করণ ব্যবহার করা উচিত। এটা আপনার পিসির পারফরমেন্সের জন্য খুবই দরকারি। যারা যারা জেনুইন উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য আলাদা করে ডিভাইস ড্রাইভার আপডেট চেক করার প্রয়োজন পড়ে না, কারণ উইন্ডোজ ১০ এর উইন্ডোজ আপডেটগুলেতেই দরকারি ডিভাইসের ড্রাইভার আপডেটগুলোও অর্ন্তভুক্ত করা থাকে।

নিয়মিত জাঙ্ক ফাইলস পরিস্কার করুন

জাঙ্ক ফাইলস (Junk Files) হলো একটি কম্পিউটারের “ডিজিটাল ময়লা”! কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার অংশে ধুলোবালি বা ময়লা জমলে সেটা যেমন সমস্যা ঠিক তেমনি কম্পিউটারে অতিরিক্ত পরিমাণ জাঙ্ক ফাইলস জমলে সেটা একদিকে যেমন হার্ডডিক্সের জায়গা দখল করে রাখে (বিশেষ করে C ড্রাইভের), ঠিক তেমনি এর কারণে পিসির পারফরমেন্সও কমে যায়। তাই আমাদেরকে নিয়মিত জাঙ্ক ফাইলসগুলো পরিস্কার করতে হবে। এ জন্য উইন্ডোজের বিল্ট ইন জাঙ্ক রিমুভারের পাশাপাশি আপনি CCleaner সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এ সফটওয়্যারে জাঙ্ক ফাইলের পাশাপাশি রেজিস্টিং ক্লিনিং ফিচারটিও রয়েছে।

এ কাজগুলো যদি আমরা নিয়মিত করতে পারি তাহলে আমাদের পিসি থেকে দীর্ঘদিনের জন্য আমরা ব্যাকআপ পেতে পারবো। এই কাজগুলো ছাড়াও আমাদের পিসিতে বিভিন্ন কাজের জন্য আমরা বিভিন্ন সফটওয়্যার ইন্সটল দিয়ে রাখি, পরবর্তীতে এগুলোকে আর আনইন্সটল করা হয় না, অদরকারী সফটওয়্যারগুলোকে আমাদের সময় নিয়ে অবশ্যই আনইন্সটল করে রাখা দরকার। এছাড়াও Auto-Startup প্রোগ্রামগুলো দিকেও একটু খেয়াল রাখতে হবে, যত কম সংখ্যাক র্স্টাটআপ প্রোগ্রাম থাকবে আপনার পিসি ততদ্রুতই বুট আপ হবে। আর দরকার না থাকলে বড় বড় ফাইল যেমন মুভি, মিউসিক, সফটওয়্যার সেটআপ ইত্যাদি পিসিতে স্টোর করা থেকে বিরত থাকুন বা আলাদা স্টোরেজ ব্যবহার করুন। পিসি মেইনটেন্স করার জন্য আজকের পোষ্টে দেখানো বিষয়গুলো ছাড়াও আপনি যদি অন্য কোনো কাজ করে থাকেন তাহলে সেটা নিজের কমেন্ট বক্সে আমাদের সাথে শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন।


EmoticonEmoticon