অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এই নিয়ে আমাদের জীবন। সাফল্য লাভের জন্য নিত্য নতুন উপায় বের করতেই কেটে যায় জীবনের অনেকটা সময়। অথচ, এর উপায় আছে আমাদের নিজেদের হাতেই। সেলফ মোটিভেশনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের সফলতার রাস্তা নিজেরাই তৈরি করতে পারি। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলি প্রতিদিন অন্তত একবার নিজেকে বলুন, দেখবেন রোজকার পথচলা একটু হলেও সহজ হবে, একটু হলেও এগিয়ে যাবেন সফলতার দিকে। আসুন জেনে নিই কি সেই কথা –
আমার কাজ পৃথিবীর কেউ এগিয়ে দেবে না, আমার কাজ আমাকেই করতে হবে :
নিজের কাজ করতে হবে নিজেকেই। ক্ষেত্রবিশেষে অন্যের সাহায্য নেয়া যেতে পারে, তবে বেশির ভাগ সময় তা পাওয়া যায় না। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রত্যেক মানুষ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। অন্যের সুখ সুবিধা দেখার, পরের কাজ এগিয়ে দেয়ার সময় কোথায়! পরের ভরসায় না থেকে নিজের কাজটুকু নিজেই করে নেওয়ার অভ্যাস থাকা ভালো। “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে” – রবিঠাকুরের এই গান গুনগুন করতে করতেই না হয় গুছিয়ে ফেলুন নিজের কর্মপরিকল্পনা।
আমি বিশ্বাস করি, আমার সাথে খুব ভালো কিছু হতে যাচ্ছে :
জীবনে যাই হয়ে যাক না কেন, যেমন পরিস্থিতিই আসুক এর ভালো দিকটা খুঁজে বের করুন। যা হচ্ছে, যা হবে এবং যা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে সব কিছুই ভালোর জন্য হয়েছে; এই মানসিকতা থাকলে যেকোনো পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হয়। ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা মানসিক অস্থিরতা কমিয়ে সঠিক পথ বেছে নেয়ার শক্তি যোগায়। ইতিবাচক থাকুন, নিজের উপর বিশ্বাস ধরে রাখুন, আজ নয়তো কাল সাফল্য আসবেই।
পৃথিবীর কোনোকিছুই স্থায়ী নয়, আমার সমস্যাগুলোও নয় :
সমস্যা থাকবেই। আমাদের ছোট্ট জীবনে হাজারো সমস্যা। খাদ্য বস্ত্রের সমস্যা তো রয়েছেই, পারিবারিক সমস্যা, বন্ধুর সাথে ঝগড়া, অফিসের বসের সাথে মনোমালিন্য, শেয়ার বাজারে ধস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এমন নানা সমস্যা আমাদের ঘিরে রয়েছে। সমস্যা যাই হোক, তার সমাধান আছে। একটু খুঁজুন, পেয়ে যাবেন। পৃথিবী নশ্বর, সেই সাথে আমাদের সমস্যাগুলোও নশ্বর। হতাশ না হয়ে হাসিমুখে সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করুন। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করুন, সমস্যা সাময়িক। দেখবেন, খুব সহজেই আপনি সমস্যার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন।
হয়তো আমার স্বপ্নপূরণ খুব সহজে হবে না, কিন্তু আমাকে পারতেই হবে :
স্বপ্ন আমরা দু’রকমের দেখি। জেগে জেগে আর ঘুমের ঘোরে। ছোটবেলার সেই রাক্ষস খোক্কসের স্বপ্ন পিছনে ফেলে এখন আমাদের স্বপ্ন মানেই হল বড় কিছু করার স্বপ্ন, লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন, সাফল্যের মুকুট মাথায় দিয়ে দুনিয়া দাপড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন। ছোটবেলার ঘুমের ঘোরে দেখা স্বপ্নগুলি ছিল শুধুই স্বপ্ন। আর এখনকার স্বপ্নগুলি সত্যি হতে পারে শুধুমাত্র নিজের প্রচেষ্টার মাধ্যমে। সহজ হবে না, বাধা আসবে, সমস্যা থাকবে; কিন্তু নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও পারতে হবে, পারতে হয়। নিজের সামর্থ্য সীমাবদ্ধতার দিকে খেয়াল রেখে নিজের স্বপ্নলোক রচনা করতে হবে নিজেকেই।
বাজে অভ্যাসগুলো ছাড়তে হবে, আমি আমার পরিশ্রমের ফল সুস্থভাবে দেখে যেতে চাই :
বাজে অভ্যাসগুলো খানিকটা অক্টোপাসের মতন। আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে রাখে, যতই ছাড়াতে চাইবেন, ততই আরো কঠিনভাবে আপনাকে জড়িয়ে ধরবে। ভালো বা খারাপ, যেকোনো অভ্যাসে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ কঠিন। ধূমপান, মদ্যপানের মত অভ্যাস শুধু অর্থের অপচয়ই করে না, আপনার কার্যক্ষমতা হ্রাস করে, শুষে নেয় আপনার জীবনীশক্তি। তাই আজই প্রতিজ্ঞা করুন, বাজে অভ্যাসগুলো ছেড়ে দেবেন, তাতে যত কষ্টই হোক। নিজের কঠোর পরিশ্রমের ফল সুস্থভাবে উপভোগ করার জন্য হলেও খারাপ অভ্যাস ছেড়ে ভালো অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আমি কখনোই আশা হারাবো না, কারণ কাল কি হবে আমি জানি না :
‘আশায় বাঁচে চাষা’ – শুধু চাষী নয়, আমরা সবাই আশায় আশায় বেঁচে থাকি। কাল আরো ভাল কিছু হবে, এরপর থেকে সব ঠিকঠাক চলবে এমন হাজারো আশা আমাদের বেঁচে থাকার শক্তি যোগায়, সাহস যোগায়। যে মুহূর্তে আপনি ভাবছেন সব হারিয়ে ফেলেছেন, সব শেষ; কে জানে হয়তো তার পরমুহূর্তেই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে দারুণ বিস্ময়কর কিছু! কে বলতে পারে হয়ত নিকষ কালো রাত্রের পর ভোরের উষ্ণতা নিয়ে দেখা দেবে কোনো নতুন সম্ভাবনা। লেগে থাকুন, কাল আপনার সাথে কি হবে তা আপনি জানেন না, আমরা কেউ জানি না। সব ব্যর্থতা মুছে গিয়ে সাফল্য আসবেই, শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা, আরো একটু ধৈর্যের পরীক্ষা।
জীবন অনেক কঠিন, কিন্তু আমি তার চেয়েও কঠিন :
If life hits hard, hit back harder
কঠিন জীবন সহজ করার উপায় একটাই – নিজেকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তোলা। জীবন আমাদের নানান অদ্ভুত অসহায় অসহ্য পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করায়। জীবনের নিয়মই এই। জীবন মানুষকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে; সহ্যের পরীক্ষা, ধৈর্যের পরীক্ষা, সামর্থ্যের পরীক্ষা। এত এত পরীক্ষার মাঝে হতাশ হয়ে পড়া অস্বাভাবিক না। তবে মনে রাখবেন, সাফল্যের কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। তার জন্য আপনাকে এই দীর্ঘ সমস্যাবহুল, পরীক্ষাসাপেক্ষ রাস্তার মধ্য দিয়ে যেতেই হবে। নিজেকে শক্ত করুন। আপনি পারবেন, পারতে যে হবেই! টিকে থাকার জন্য আপনাকে পারতেই হবে, নিজের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য পারতে হবে, ছোট ছোট ছেলেমানুষি স্বপ্নগুলিকে সত্যি করার জন্য পারতে হবে।
নীরবে কাজ করে যাব, আমার কাজই একদিন চিৎকার করে সবার নজর কাড়বে :
যতই নিঃস্পৃহ, যতই উদাসীন হই না কেন নিজের একটা পরিচিতি আমরা সবাই চাই। সবাই আমাকে এক নামে চিনুক, আমাকে জানুক – এমন একটা গোপন ইচ্ছা কম বেশি আমাদের সবারই থাকে। এই সুযোগটা আপনি পেতে পারেন শুধুমাত্র আপনার কাজের মাধ্যমে। আপনার কাজই আপনাকে পরিচিতি এনে দেবে; আপনার পরিশ্রম, আপনার মেধার স্বীকৃতি পাইয়ে দেবে আপনার কাজ। শুধু চুপচাপ কাজ করে যান আর দেখে যান, আপনার নিজের কর্মই আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে সাফল্যের দিকে। যতই উপেক্ষা আসুক আপনার কাজ আপনার পরিচয় জানান দেবেই। আপনাকে কেউ আটকাতে পারবে না, কেউ দমাতে পারবে না।
সবশেষে শুধু এটুকুই বলা যায়, এ জীবন আপনার। আপনাকেই সাফল্যের দুয়ার খুঁজে নিতে হবে। আপনার ভাগ্য আপনার কপালে নয়, আপনার হাতেই। তাই এখন থেকেই নিজেকে গড়ে তুলুন সফলতার মুকুট পরার জন্য।
EmoticonEmoticon