ইউটিউব এর জন্য (Best Youtube Video Editor apps) বেস্ট ভিডিও এডিটর সফটওয়্যার (2018)

ইউটিউবিং এ দিন দিন মানুষের বেশি ঝোক এর ফলে ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার গুলোর প্রতি মানুষের চাহিদা বেড়েই চলেছে। মানসম্মত ভিডিও প্রস্তুত করে ইউটিউবে তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ভিডিও এডিটর সফটওয়্যারের বিকল্প নেই। একটি মানসম্মত ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার এবং এর সুন্দর ইন্টারফেসই কেবল ভিডিও ক্রিয়েটরকে একটি ভালো কনটেন্ট বানানের জন্য সহযোগিতা করে।
আজ আমরা ভালো ইউটিউব ভিডিও বানানোর জন্য মানসম্মত ভিডিও এডিটর সম্পর্কে জানব।ইউটিউবিং এর জন্য যা হবে আপনার নিত্যদিনের সাথী। এই আর্টিকেলটি কেবল ইউটিউবে যারা ভিডিও বানাচ্ছেন তাদের জন্য না, বাকিরাও ভিডিও এডিটিং এর জন্য এসব সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবেন, নিঃসন্দেহে। যারা নতুন নতুন ইউটিউবিং শুরু করছেন তাদের মানসম্মত ভিডিও কনটেন্ট তৈরির যাত্রা শুরু করার জন্য লাইটওয়ার্কস, ফিলমোরা এর মত সফটওয়্যার দিয়ে শুরু করতে পারেন। কোয়ালিটি বজায় রেখে আপনার ভিডিওগ্রাফীতে প্রান দিতে ও নতুনত্ব আনতে এগুলো আপনার দারুনভাবে কাজে আসবে।

লাইটওয়ার্কসঃ

এটি  প্রথমদিককার তৈরি একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। ১৯৮৯ সালে লাইটওয়ার্কস উন্মুক্ত হয়। ৯০ এর দশকে হলিউড এর বেশ কিছু ছবি এবং টেলিভিশন সিরিজও এটি ব্যবহার করে এডিট করা হত।
লাইটওয়ার্কস বর্তমানে উইন্ডোজ,লিনাক্স ও ম্যাক (ডাউনলোড)  অপারেটিং সিস্টেম এর জন্য উন্মুক্ত। আগের মত এর চাহিদা অতটা না হলেও,এখনও নতুনদের জন্য লাইটওয়ার্কস ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারটি পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে।লাইটওয়ার্কস সম্পূর্ন ফ্রীএবং ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। তবে এর একটি প্রো ভার্সনও রয়েছে। তবে নতুনদের জন্য লাইওয়ার্কস এর ফ্রী ভার্সনই সেরা।

ইন্টরনেটে যে অবৈধ কাজ গুলো আমরা সবাই প্রতিদিন করে থাকি! বিস্তারিত জেনে নিন

ইন্টরনেটে যে অবৈধ কাজ গুলো আমরা সবাই প্রতিদিন করে থাকি! বিস্তারিত জেনে নিন

লাইটওয়ার্কসে মাল্টি-ক্যামেরা এডিটিং,রিয়েল টাইম ভিজুয়াল ইফেক্টস এর মত ফিচার সহ; আপনার যদি ডুয়াল মনিটর সাপোর্ট থাকে, তবে এর সেকেন্ড মনিটর সাপোর্টও রয়েছে। ডুয়াল মনিটর ব্যবহার করে এই লাইটওয়ার্কসকে এক্সপান্ড করে ব্যবহার করা যাবে। এখানে এডিটিং এর পর ৭২০ পিক্সেল পর্যন্ত ভিডিও সরাসরি ইউটিউব এবং ভিমিও তে এক্সপোর্ট করা যাবে।

ফিলমোরাঃ


Source: FileHorse

ওয়ান্ডারশেয়ার এর তৈরি ফিলমোরা হল বিশ্বব্যাপি জনপ্রিয় বর্তমান সময়ের একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। মূলত যারা ভিডিওগ্রাফীতে বেশি মনোযোগী হয়ে, ভিডিও এডিটিং এ কম সময় দিতে চান, তাদের জন্য ফিলমোরা সেরা। ফিলমোরা হল পার্সোনাল কম্পিউটারে ব্যবহার করার জন্য সহজ সাবলীল ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার।এটি ঠিকমত ব্যবহার করতে পারলে দারুন একটা প্রিমিয়াম আউটপুট পাওয়া যায়। ফিলমোরা ব্যবহারের জন্য কোন প্রোফেশনাল ভিডিও এডিটিং কোর্স করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে ফিলমোরা হল একটি পেইড অ্যাপলিকেশন এবং এটিকে কিনতে আপনাকে ৩৯$ ডলার খরচ করতে হবে। তবে এর পারর্ফমেন্স এর হিসেবে এই টাকা খরচ করা যায়।
ভিডিও এডিটিং এর ক্ষেত্রে ফিলমোরাতে টিল্ট স্ক্রীন,স্প্লিট স্ক্রীন,অডিও মিক্সার, GIF সাপোর্ট, মাল্টি ভিডিও সাপোর্ট,অডিও রেকর্ডার সহ ৪কে মানের রেজুলেশনে ভিডিও রেন্ডারিং করার ক্ষমতা রয়েছে।

ক্যামটাসিয়াঃ

যারা মূলত ইউটিউবে টিউটোরিয়াল বানান তাদের জন্য নিঃসন্দেহে রেকমেন্ডেড সফটওয়্যার ক্যামটাসিয়া, যার পুরো নাম ক্যামটাসিয়া স্টুডিও (Camtasia Studio)। টেকস্মিথ এর তৈরি এই ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারটি টিউটোরিয়াল তৈরিকারকদের অন্যতম হাতিয়ার। এর মূলত দুটি অংশ – ক্যামটাসিয়া রেকর্ডার ও ক্যামটাসিয়া এডিটর।এখানে এডিটরটি একটি সেপারেট টুল যেটি স্ক্রিন ভিডিও এবং অডিও ক্যাপচারিং এর কাজ করে। অন্যদিকে,এর এডিটরটি দিয়ে এসব ক্লিপ জোড়া লাগানো, লোয়ার থার্ড তৈরি, টেক্সট এডিট, ইফেক্ট দেয়া ইত্যাদি কাজ করা যায়।
এটি একটি পেইড সফটওয়্যার। ব্যাক্তিগত ব্যবহারের জন্য ২৯৯$ ডলার খরচ করে এটি পারচেজ করতে পারেন। তাছাড়াও ৫,১০,১৫ ইউজারদের জন্য আলাদা আলাদা প্যাকেজ রয়েছে। আর ক্র্যাক করেও ব্যবহার করা যায়, অর্থাত টাকা না দিয়ে অবৈধ ভাবে, তবে এভাবে ব্যবহার করা আপনার দায়িত্ব।

আপনি যদি প্রোফেশনাল হন,আপনি যদি ব্যাক্তিগত বা কোন সংগঠন, প্রতিষ্ঠান এর জন্য ভিডিও এডিটিং এর কাজ করতে চান তবে আপনাকে এডবি প্রিমিয়ার প্রো, ভেগাস প্রো এর মত প্রিমিয়াম সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এতে করে কোয়ালিটি যেমন ভালো হবে, তেমনই কাজের পেশাদারিত্ব বজায় রাখা সহজ হবে।

এডবি প্রিমিয়ার প্রোঃ


Source: PcMag

১৯৯১ সালে লঞ্চ হওয়া এডবি প্রিমিয়ার এর সাক্সেসর হিসেবে ২০০৩ সালে এডবি সিস্টেমস লঞ্চ করে এডবি প্রিমিয়ার প্রো এডবি ক্রিয়েটিভ ক্লাউড এর অধীনে। বর্তমানে এটিও একটি বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। মানুষ যেমন ফটো ম্যানুপুলেশন এবং এডিটিং এর জন্য এডবি এর জনপ্রিয় ফটোশপ এর ওপর নির্ভরশীল,সেই ভরসায় মানুষ এডবি প্রিমিয়ার প্রো ব্যবহারেও বেশি আগ্রহী। এডবি প্রোডাক্টস এর ওপর মানুষের ভেতর একটি আলাদা আগ্রহ কাজ করে। আর সেই আগ্রহের কারনে এডবি এর অন্যসব সফটওয়্যার এর মত প্রিমিয়ার প্রো প্রায় এক যুগ ধরে মানুষের কাছে প্রিয়।
CNN এবং BBC এর মত নিউজ প্রতিষ্ঠান তাদের প্রত্যাহিক কাজে প্রিমিয়ার প্রো ব্যবহার করছে। যেহেতু এডবির কোনো সফটওয়্যার ফ্রি নয়, তাই আপনাকে প্রিমিয়ার প্রো পেইড এবং লাইসেন্সিং এর সাথে ব্যবহার করতে অবশ্যই মাসিক হিসেবে টাকা প্রদান করতে হবে। তবে হ্যা, ক্র্যাক করে ব্যবহার করাও খুব সহজ, তবে এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না। ক্র্যাক করে ব্যবহার করলে আপনাকে এক টাকাও দিতে হবে না ; কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ক্র্যাক ব্যবহার অবৈধ।

সাইবারলিংক পাওয়ার ডাইরেক্টরঃ

সাইবারলিংক এর তৈরি একটি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার হল পাওয়ার ডাইরেক্টর। ভিডিও ট্রিমিং,জয়েনিং,৩৬০ ডিগ্রী ফুটেজ এডিট, অডিও ম্যানেজমেন্ট ও টেক্সট এডিটিং এর মত কাজ গুলো এই সফটওয়্যারে যাবে সহজেই। এটি একটি পেইড সফটওয়্যার, আর বর্তমানে এর দাম হল ১৩০$ ডলার। পিসিম্যাগ এর এডিটর রেটিংসে একে ৫ এর ভেতর ৪.৫ রেটিং দিয়ে এক্সিলেন্ট মার্ক করা হয়েছে। দ্রুত ভিডিও রেন্ডারিং, মোশন ট্র্যাকিং, ৩ডি ও ৪কে ভিডিও এডিটিং ক্যাপাবিলিটি,মাল্টি ক্যামেরা এডিটিং এর মত সুবিধা পাওয়া যাবে এই ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার টিতে।

Source: CNet

যেসব ইউটিউবার ভিডিও কনটেন্ট বানানোর জন্য একের অধিক ক্যামেরা ব্যবহার করে থাকেন, তাদের জন্য আমি এই সফটওয়্যারটি রেকমেন্ড করলাম। এর সিম্পল ইন্টারফেস এবং স্মুথ পারফর্মেন্স এর সাথে ভিডিও ক্রিয়েটরদের মানিয়ে নিতে বেশি বেগ পেতে হবে না।

ভেগাস প্রোঃ

ভেগাস প্রো খুবই শক্তিসালী এবং প্রোফেশনাল ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। প্রোফেশনাল এডিটিং এর জন্য প্রায় সব রকম ফিচারসই পাওয়া যাবে এতে । অডিও এর জন্য ভেগাস প্রোতে রয়েছে, অডিও মিক্সিং কনসোল। সনি ভেগাসে ভিজুয়াল ইফেক্টস এর অপশন রয়েছে, প্রিমিয়ার প্রো তে যা করা যায় না, আফটার ইফেক্টস ব্যবহার করতে হয়।
সর্বপ্রথম সনিক ফাউন্ডারি নামক কোম্পানি ভেগাস প্রো তৈরি করলেও পরবর্তীতে সনি ক্রিয়েটিভ সফটওয়্যার এটি কিনে নেয় এবং তাদের অধিনে প্রকাশ করে। এবং বর্তমানে ভেগাস প্রো সফটওয়্যার ম্যাজিক্স সফটওয়্যাট কতৃক নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

ফাইনাল কাট প্রোঃ

ম্যাক্রোমিডিয়ার তৈরি ফাইনাল কাট প্রো ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারটি খুবই কাজের এবং শক্তিসালী একটি সফটওয়্যার,পরবর্তীতে অ্যাপেল ইনকরর্পোরেট একে ম্যাক্রোমিডিয়া’র কাছে থেকে কিনে নেয়। এটি কেবল ইন্টেল প্রোসেসর ভিত্তিক ম্যাক কম্পিউটারে চলে।
বেশিরভাগ প্রোফেশনাল ভিডিও এডিটর এবং ইউটিউবার যারা ম্যাক ব্যবহার করে, তারা সাধারনত এই ফাইনাল কাট প্রো কে ব্যবহার করে। যদিও অনেকে এডবি সফটওয়্যার ব্যবহার করে, তবে ফাইনাল কাট প্রো এর ব্যবহারকারী ম্যাকে বেশি। এখানে অনেক কিছু প্রি বিল্ট হিসেবে থাকে, প্রিমিয়ার প্রো’তে আবার সেসব কিছু একদম নতুন করে শুরু করতে হয়।

স্মার্টফোনে ভিডিও এডিটিং এর জন্যঃ

স্মার্টফোনের ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার নিয়ে কথা বলাও কিন্তু জরুরী। কেননা এখন যারা এই আর্টিকেলটি পড়ছেন, অনেককেরই হয়ত ব্যাক্তিগত কম্পিউটার নেই। তবুও আপনারা ভিডিও বানাতে চান, আর এর জন্য আপনাদের ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার দরকার। তাই স্মার্টফোনের জন্য আমি বেশি সফটওয়্যার এর নাম বলব না। স্মার্টফোনে ভিডিও এডিটিং এর জন্য নির্ভরযোগ্য তথা রিলায়েবল সফটওয়্যার হল কাইনমাস্টার। প্লে স্টোর থেকে কাইনমাস্টার প্রো সফটওয়্যারটি ইনস্টল করে নিয়ে সহজেই আপনার ছোট খাট এইচডি ভিডিও এডিট করার কার্য সমাধা করতে পারেন।


EmoticonEmoticon