দাজ্জাল সম্পর্কে একটি দীর্ঘ হাদীস
আমের বিন শুরাহিল থেকে বর্ণিত,
তিনি ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা)-কে বললেন-
সরাসরি নবী করীম (সা) থেকে শুনেছেন, এমন
একটি হাদিস আমাকে শুনান!
ফাতেমা (রা) বললেন- আমার কাছে সেরকম হাদিসই
আছে! বর্ণনাকারী বললেন- তাহলে শুনান!
বলতে লাগলেন-
“একদা মুয়াজ্জিনের নামায দাঁড়িয়েছে-
ঘোষণা শুনে মসজিদে গেলাম। পুরুষদের
পেছনে মহিলাদের কাতারে দাড়িয়ে নবীজীর
ইমামতিতে আমরা নামায আদায় করলাম। নামায শেষে মৃদু
হাঁসি নিয়ে নবীজী মিম্বরে বসলেন।
● বললেন, সবাই নিজ নিজ স্থানে বসে থাক!
কিছুক্ষণ পর বললেন- বুঝতে পেরেছ? কি জন্য
তোমাদের বসতে বলেছি!!
● সবাই বলল- আল্লাহ্* এবং তাঁর রাসূলই বেশি জানেন!!
● বললেন- আল্লাহ্*র শপথ! কোন উৎসাহ
বা ভীতিপ্রদর্শনের জন্য তোমাদের
বসতে বলিনি। তামিম দারী একজন খৃষ্টান ছিল।
এখানে এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে। মাছীহ
দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের কাছে যা বলতাম,
সেও আমাকে সে রকম কিছু শুনিয়েছে।
বলেছে- একদা লাখম ও জুযাম গোত্রদ্বয়ের কিছু
ব্যক্তিকে নিয়ে সে সমুদ্র ভ্রমণে বের হয়।
অতঃপর সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে তারা দিকভ্রান্ত
হয়ে পড়ে। এক মাস পর্যন্ত ঢেও তাদের
নিয়ে খেলা করতে থাকে। অবশেষে একদিন
সূর্য প্রস্থানের সময় তাদের জাহাজটি এক অচিন
দ্বীপে গিয়ে ভিড়ে। জাহাজ থেকে অবতরণ
মাত্রই এক অদ্ভুত প্রাণীর সাথে তাদের সাক্ষাত
ঘটে। চুল দিয়ে সারা গা ঢাকা থাকায় সামন-পেছন
বুঝা যাচ্ছিল না।
● তারা বলল- কপাল পুড়ুক তোর! কে তুই?
● প্রাণীটি বলল- আমি হলাম গুপ্তচর!
● গুপ্তচর মানে?
● এত কিছু জেনে তোমাদের লাভ নেই! ঐ
জনশূন্য প্রান্তরে এক ব্যক্তি অধির
আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষা করছে। যাও! তাঁর
সাথে গিয়ে সাক্ষাত কর!
● তামীম বলল- অতঃপর শয়তান মনে করে আমার তার
থেকে কেটে পড়লাম। জনশূন্য প্রান্তরে (দুর্গ
সদৃশ) গিয়ে দেখি এক মহা মানব। দু-হাত ঘাড় পর্যন্ত
এবং দু-হাটু থেকে পায়ের গিঁঠ পর্যন্ত লোহার
শিকলে বাঁধা। এমন সুবিশাল মানব এবং শক্তি বাধনযুক্ত
বরকতই ব্যক্তি ইতিপূর্বে কোনদিন আমরা দেখিনি।
● বললাম- ধ্বংস হোক তোর! কে তুই!
● মহা মানব বলল- এসেই যখন পড়েছ!
তবে অচিরেই জানতে পারবে।
● আগে বল- তোমরা কারা?
● আমরা আরব্য জাতি। নৌ ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলাম।
ঝড়ের কবলে পড়ে দীর্ঘ এক মাস দিকভ্রান্ত
থাকার পর অবশেষে জাহাজ এই
দ্বীপে এসে ভিড়েছে। জাহাজের নিকটেই
আমরা বসেছিলাম। হঠাৎ এক অদ্ভুত প্রাণীর
দেখা মিলল। সে নিজের পরিচয় গোপন
রেখে তার কাছে আসতে বলল। তুই নাকি আমাদের
জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিস!
আমের বিন শুরাহিল থেকে বর্ণিত,
তিনি ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা)-কে বললেন-
সরাসরি নবী করীম (সা) থেকে শুনেছেন, এমন
একটি হাদিস আমাকে শুনান!
ফাতেমা (রা) বললেন- আমার কাছে সেরকম হাদিসই
আছে! বর্ণনাকারী বললেন- তাহলে শুনান!
বলতে লাগলেন-
“একদা মুয়াজ্জিনের নামায দাঁড়িয়েছে-
ঘোষণা শুনে মসজিদে গেলাম। পুরুষদের
পেছনে মহিলাদের কাতারে দাড়িয়ে নবীজীর
ইমামতিতে আমরা নামায আদায় করলাম। নামায শেষে মৃদু
হাঁসি নিয়ে নবীজী মিম্বরে বসলেন।
● বললেন, সবাই নিজ নিজ স্থানে বসে থাক!
কিছুক্ষণ পর বললেন- বুঝতে পেরেছ? কি জন্য
তোমাদের বসতে বলেছি!!
● সবাই বলল- আল্লাহ্* এবং তাঁর রাসূলই বেশি জানেন!!
● বললেন- আল্লাহ্*র শপথ! কোন উৎসাহ
বা ভীতিপ্রদর্শনের জন্য তোমাদের
বসতে বলিনি। তামিম দারী একজন খৃষ্টান ছিল।
এখানে এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে। মাছীহ
দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের কাছে যা বলতাম,
সেও আমাকে সে রকম কিছু শুনিয়েছে।
বলেছে- একদা লাখম ও জুযাম গোত্রদ্বয়ের কিছু
ব্যক্তিকে নিয়ে সে সমুদ্র ভ্রমণে বের হয়।
অতঃপর সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে তারা দিকভ্রান্ত
হয়ে পড়ে। এক মাস পর্যন্ত ঢেও তাদের
নিয়ে খেলা করতে থাকে। অবশেষে একদিন
সূর্য প্রস্থানের সময় তাদের জাহাজটি এক অচিন
দ্বীপে গিয়ে ভিড়ে। জাহাজ থেকে অবতরণ
মাত্রই এক অদ্ভুত প্রাণীর সাথে তাদের সাক্ষাত
ঘটে। চুল দিয়ে সারা গা ঢাকা থাকায় সামন-পেছন
বুঝা যাচ্ছিল না।
● তারা বলল- কপাল পুড়ুক তোর! কে তুই?
● প্রাণীটি বলল- আমি হলাম গুপ্তচর!
● গুপ্তচর মানে?
● এত কিছু জেনে তোমাদের লাভ নেই! ঐ
জনশূন্য প্রান্তরে এক ব্যক্তি অধির
আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষা করছে। যাও! তাঁর
সাথে গিয়ে সাক্ষাত কর!
● তামীম বলল- অতঃপর শয়তান মনে করে আমার তার
থেকে কেটে পড়লাম। জনশূন্য প্রান্তরে (দুর্গ
সদৃশ) গিয়ে দেখি এক মহা মানব। দু-হাত ঘাড় পর্যন্ত
এবং দু-হাটু থেকে পায়ের গিঁঠ পর্যন্ত লোহার
শিকলে বাঁধা। এমন সুবিশাল মানব এবং শক্তি বাধনযুক্ত
বরকতই ব্যক্তি ইতিপূর্বে কোনদিন আমরা দেখিনি।
● বললাম- ধ্বংস হোক তোর! কে তুই!
● মহা মানব বলল- এসেই যখন পড়েছ!
তবে অচিরেই জানতে পারবে।
● আগে বল- তোমরা কারা?
● আমরা আরব্য জাতি। নৌ ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলাম।
ঝড়ের কবলে পড়ে দীর্ঘ এক মাস দিকভ্রান্ত
থাকার পর অবশেষে জাহাজ এই
দ্বীপে এসে ভিড়েছে। জাহাজের নিকটেই
আমরা বসেছিলাম। হঠাৎ এক অদ্ভুত প্রাণীর
দেখা মিলল। সে নিজের পরিচয় গোপন
রেখে তার কাছে আসতে বলল। তুই নাকি আমাদের
জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিস!
ইসলাম বিষয়ক প্রশ্নোত্তর
● মহা মানব বলল- বাইছান এলাকার খেজুর বাগানের
কি অবস্থা?
● মানে?
● অর্থাৎ বৃক্ষ গুলি থেকে কি এখনো খেজুর হয়?
● বললাম- হাঁ…!
● অচিরেই খেজুর বন্ধ হয়ে যাবে!
● মহা মানব বলল- বুহাইরা তাবারিয়ার কি অবস্থা?
● মানে?
● সেই লেকে কি এখনো পানি আছে?
● হাঁ…! ওখানে প্রচুর পানি!
● অচিরেই সেই পানি চলে যাবে।
● মহা মানব বলল- যুগার ঝর্ণার কি অবস্থা?
● মানে?
● ঝর্ণায় কি আদৌ পানি অবশিষ্ট আছে?
নাকি শুকিয়ে গেছে! স্থানীয়
লোকেরা কি চাষাবাদের জন্য ঝর্ণার পানি ব্যবহার
করতে পারে?
● হাঁ…! ঐ ঝর্ণা থেকে প্রচুর পানি প্রবাহিত হয়।
স্থানীয়রা চাষাবাদে সে পানি ব্যবহার করে থাকে।
● মহা মানব বলল- আরবের শেষ
নবী সম্পর্কে আমাকে বল!
সে কি কি করেছে!!
তারা বললাম- তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায়
চলে গেছেন।
● আরব জাতিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি?
● হাঁ…! করেছে।
● ফলাফল কি?
● আশপাশের আরবদের উপর
তিনি বিজয়ী হয়েছেন সবাই তার
অনুসরণে এগিয়ে আসছে।
(মহা মানব বলল) বাস্তবেই এমনটা হয়ে গেছে?
● হাঁ…!
● তাঁকে অনুসরণের মাঝেই আরবের কল্যাণ নিহিত।
● মহা মানব বলল- আমি এখন নিজের পরিচয় দিচ্ছি। শুন!
আমি হলাম মাছীহ দাজ্জাল! অচিরেই আমাকে বাঁধন
মুক্ত করা হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ
দিনে সারাবিশ্ব ভ্রমণ করব। তবে মক্কা এবং তাইবায়
আমাকে ঢুকতে দেয়া হবে না। যখনই
এলাকা দ্বয়ে ঢুকতে চাইব,
তরবারি হাতে ফেরেস্তা আমাকে ধাওয়া করবে।
সেদিন মক্কা-মদিনার
সড়কে ফেরেস্তারা প্রহরী থাকবে।
দীর্ঘ হাদিসটি বর্ণনার পর লাঠি দিয়ে মাটিতে আঘাত
করে নবীজী বলতে লাগলেন- এটাই
হচ্ছে তাইবা নগরী, এটাই হচ্ছে তাইবা নগরী, এটাই
হচ্ছে তাইবা নগরী (অর্থাৎ মদিনার অপর নাম তাইবা)!
আমি কি তোমাদের কাছে স্পষ্ট
রূপে বর্ণনা করতে পেরেছি?!! সকলেই
এজবাক্যে বলল- হাঁ…! অতঃপর নবীজী বললেন-
দাজ্জাল সম্পর্কে আমি তোমাদের
কাছে যা বর্ণনা করতাম, অনেকাংশেই তা শামের
সাগরে আছে অথবা ইয়েমেনের সাগরে আছে;
না…! বরং সে পূর্ব দিকে আছে… পূর্ব
দিকে আছে… পূর্ব দিকে আছে…!!! (পূর্ব
দিকে হাতে ইশারা করেছিলেন),
বর্ণনাকারী ফাতেমা (রা) বলেন- নবীজীর এই
হাদিসটি আমি উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছি!! -…[মুসলিম]
● মহা মানব বলল- বাইছান এলাকার খেজুর বাগানের
কি অবস্থা?
● মানে?
● অর্থাৎ বৃক্ষ গুলি থেকে কি এখনো খেজুর হয়?
● বললাম- হাঁ…!
● অচিরেই খেজুর বন্ধ হয়ে যাবে!
● মহা মানব বলল- বুহাইরা তাবারিয়ার কি অবস্থা?
● মানে?
● সেই লেকে কি এখনো পানি আছে?
● হাঁ…! ওখানে প্রচুর পানি!
● অচিরেই সেই পানি চলে যাবে।
● মহা মানব বলল- যুগার ঝর্ণার কি অবস্থা?
● মানে?
● ঝর্ণায় কি আদৌ পানি অবশিষ্ট আছে?
নাকি শুকিয়ে গেছে! স্থানীয়
লোকেরা কি চাষাবাদের জন্য ঝর্ণার পানি ব্যবহার
করতে পারে?
● হাঁ…! ঐ ঝর্ণা থেকে প্রচুর পানি প্রবাহিত হয়।
স্থানীয়রা চাষাবাদে সে পানি ব্যবহার করে থাকে।
● মহা মানব বলল- আরবের শেষ
নবী সম্পর্কে আমাকে বল!
সে কি কি করেছে!!
তারা বললাম- তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায়
চলে গেছেন।
● আরব জাতিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি?
● হাঁ…! করেছে।
● ফলাফল কি?
● আশপাশের আরবদের উপর
তিনি বিজয়ী হয়েছেন সবাই তার
অনুসরণে এগিয়ে আসছে।
(মহা মানব বলল) বাস্তবেই এমনটা হয়ে গেছে?
● হাঁ…!
● তাঁকে অনুসরণের মাঝেই আরবের কল্যাণ নিহিত।
● মহা মানব বলল- আমি এখন নিজের পরিচয় দিচ্ছি। শুন!
আমি হলাম মাছীহ দাজ্জাল! অচিরেই আমাকে বাঁধন
মুক্ত করা হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ
দিনে সারাবিশ্ব ভ্রমণ করব। তবে মক্কা এবং তাইবায়
আমাকে ঢুকতে দেয়া হবে না। যখনই
এলাকা দ্বয়ে ঢুকতে চাইব,
তরবারি হাতে ফেরেস্তা আমাকে ধাওয়া করবে।
সেদিন মক্কা-মদিনার
সড়কে ফেরেস্তারা প্রহরী থাকবে।
দীর্ঘ হাদিসটি বর্ণনার পর লাঠি দিয়ে মাটিতে আঘাত
করে নবীজী বলতে লাগলেন- এটাই
হচ্ছে তাইবা নগরী, এটাই হচ্ছে তাইবা নগরী, এটাই
হচ্ছে তাইবা নগরী (অর্থাৎ মদিনার অপর নাম তাইবা)!
আমি কি তোমাদের কাছে স্পষ্ট
রূপে বর্ণনা করতে পেরেছি?!! সকলেই
এজবাক্যে বলল- হাঁ…! অতঃপর নবীজী বললেন-
দাজ্জাল সম্পর্কে আমি তোমাদের
কাছে যা বর্ণনা করতাম, অনেকাংশেই তা শামের
সাগরে আছে অথবা ইয়েমেনের সাগরে আছে;
না…! বরং সে পূর্ব দিকে আছে… পূর্ব
দিকে আছে… পূর্ব দিকে আছে…!!! (পূর্ব
দিকে হাতে ইশারা করেছিলেন),
বর্ণনাকারী ফাতেমা (রা) বলেন- নবীজীর এই
হাদিসটি আমি উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছি!! -…[মুসলিম]
👉আল্লহর একাত্তবাদ সম্পর্কে👇
১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই) আমার দুর্গ। তাতে যে প্রবেশ করেছে, সে আমার শাস্তি থেকে নিরাপদ হয়েছে।”
১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেছেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই) আমার দুর্গ। তাতে যে প্রবেশ করেছে, সে আমার শাস্তি থেকে নিরাপদ হয়েছে।”
এ হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) থেকে ইবনু নাজাজ সংগ্রহ করেছেন।
২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন – সুমহান আল্লাহ্ হযরত মূসা ইবনে ইমরানের প্রতি প্রত্যাদেশ নাযিল করলেন যে, “তাঁর উম্মতের মধ্যে এমন কিছু সংখ্যক লোক হবে, তারা উঁচু নিচু স্থানে উঠা নামার সময় ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই)’ সাক্ষ্য দিতে থাকবেন, তাদের জন্য আম্বিয়ায়ে কেরামের অনুরূপ পুরস্কার রয়েছে।”
দায়লামী এ হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজে যা কিছু লিখেছেন তা হচ্ছে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম – পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি, নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। আমার কোন শরীক নেই, যে আমার বিচার-মীমাংসার প্রতি আত্নসমর্পণ করেছে। আমার কঠিন পরীক্ষার সময় সবর এখতিয়ার করেছে এবং আমার শাসনে সন্তুষ্ঠ রয়েছে, তাকে আমি সত্যবাদীরূপে লিখেছি; এবং কিয়ামতের দিন তাকে সত্যবাদীদের সাথে পুনরুন্থিত করব।”
ইবনুন নাজ্জার এ হাদীসটি হযরত আলী (রাঃ) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
৪. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ্ বলেন, “আমি আল্লাহ্, আমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, এ আমার উক্তি; এটা যে স্বীকার করে তাকে আমি আমার বেহেশতে প্রবেশ করাই, আর আমি যাকে আমার বেহেশতে প্রবেশ করাই, নিশ্চয়ই সে আমার শাস্তি থেকে নিরাপদ হয়। কুরআন আমার বাণী, আর আমার কাছ থেকে তা নাযিল হয়েছে।”
খাতীব এ হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে সংগ্রহ করেছেন।
👉মুসলিমদের আদব বা শিস্টাচার👇
ইসলাম এমন কিছু উন্নত শিষ্টাচার, সুন্দর স্বভাব ও
বৈশিষ্ট্যের উপর মুসলিম সন্তানদের গড়ে তোলার
উপর গুরুত্বারোপ করেছে, যেটা মুসলিম
প্রজন্মের শিক্ষা প্রশিক্ষণ, লালন-পালন ও তাদের
চরিত্র বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করে থাকে।
কথা কাজের ক্ষেত্রে উন্নত পন্থা অবলম্বন, সৎ
স্বভাব গ্রহণ ও ঘৃণিত তথা মন্দ স্বভাব
পরিত্যাগে নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের
জন্য আদব তথা শিষ্টাচারের সকল দিকগুলোই
বর্ণনা দিয়েছেন। এমনকি যুদ্ধের ময়দানের শিষ্টাচার
কি হবে, তাও বলে দিয়েছেন।
তিনি তাদেরকে যুদ্ধের সময় নারী-শিশু
এবং যে সকল বৃদ্ধ যুদ্ধ
করে না তাদেরকে হত্যা করতে নিষেধ
করেছেন। বারণ করেছেন গির্জা ও
আশ্রমে আশ্রয় গ্রহণকারী পাদ্রী, ধর্মযাজক ও
সন্নাসী এবং শষ্যক্ষেত্রে চাষাবাদরত
চাষীকে হত্যা করতে। এবং মৃতের দেহ বিকৃত
করতে ও নিষেধ করেছেন।
এমনিভাবে আরো অনেক আদব রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
বলে দেয়া শিষ্টাচার তথা আদবের
মধ্যে রয়েছে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোষাক-
পরিচ্ছদ, নিদ্রা, স্ত্রী মিলন ও দাম্পত্য জীবনের
আদব ছাড়াও অনেক বিষয়। এমনকি তিনি পায়খানায়
প্রবেশের আদব ও বলে দিয়েছেন, যেমন:
সালমান ফারেসী (রাঃ) থেকে বর্ণনা এসেছে,
তিনি বলেন, ‘মুশরিকরা আমাদেরকে বলে, এ
কেমন কথা তোমাদের
নবী তোমাদেরকে সকল কিছুই শিক্ষা দেন,
এমনকি পায়খানা করার নিয়মও ?! তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ!
তিনি আমাদেরকে পায়খানা -পেশাবের সময়
কেবলা মূখী অথবা কেবলাকে পিছনে দিয়ে
বসতে বারণ করেছেন। ডান হাতে ঢিলা- কুলুখ
ব্যবহার, তিনটির কম পাথর ঢিলা হিসাবে ব্যবহার অথবা হাড়
কিংবা গোবর দিয়ে ঢিলা ব্যবহার থেকে বিরত থাকার
নির্দেশ দিয়েছেন।’ মুসলিম
ইসলামই হচ্ছে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যা সমগ্র
মানব জীবনের জন্য একটি নির্ভুল
পদ্ধতি এঁকে দিয়েছে। যার
মাঝে রয়েছে জীবনের প্রতিটি স্তর ও
বিভাগের সুষ্ঠু সমাধান। এটা মানব রচিত কোন জীবন
বিধান নয় যে, তার মাঝে সত্য মিথ্যার সম্ভাবনা থাকবে,
বরং এটা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান, যা তার
অনুসারীদের জন্য দুনিয়ার
জীবনে বয়ে নিয়ে আসে কল্যাণ, শান্তি— ও
মানুষিক স্বস্তি, আর কিয়ামতের কঠিন দিনে পুরস্কৃত
করে তার চিরস্থায়ী সুখের জান্নাত। আল্লাহ
বলেন- “আমরা কিতাবে (কুরআনে) কোন কিছুই
বাদ দেইনি।”[ সূরা আনআম ৩৮ আয়াত ]
আত্মার সুষ্ঠু গঠন ও পরিশুদ্ধি এবং সুন্দর চরিত্র
বিনির্মাণে নবুওয়তী আদবের একটি সুন্দর প্রভাব ও
সুদূর প্রসারী ফলাফল রয়েছে। নবুওয়তী আদব
তথা ইসলামী শিষ্টাচার জাতির জন্য এমন কিছু ধারাবাহিক
প্রজন্ম উপহার দিয়েছে, সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা,
চারিত্রিক নিষ্কুলুষতা, পবিত্রতা, আদল ইনসাফ, ব্যক্তিত্ব,
লজ্জাশীলতা, দয়া দাক্ষিণ্য এবং শক্তি-সামর্থ ও
বীরত্বে যাদের তুলনা ইতিহাসে বিরল। হতাশাগ্রস্থ
মজলুমের সহযোগিতায় ও তাদের জুড়ি নেই।
ইসলামী শিষ্টাচার ও নবুয়তী চরিত্র
থেকে দূরে সরে যাওয়াই হচ্ছে বর্তমান মুসলিম
উম্মার দুর্বলতার কারণ। মুসলিম উম্মাহ যদি অপর জাতির
দাস সূলভ অনুসরণ
থেকে বেরিয়ে আসতে পারে,
যদি ফিরে আসে তাদের সক্বীয়তা এবং সত্যিকার
ইসলামী শিষ্টাচারের দিকে, তাহলে অবশ্যই তাদের
হারানো গৌরব, সম্মান ও মর্যাদা ফিরে আসবে। মুসলিম
জাতি কি এ ব্যাপারটি অনুধাবন করবে ?
আমরা সামনের পৃষ্ঠাগুলোতে আল্লাহ, তাঁর রাসূল
এবং দ্বীনের সাথে মুসলিমের আদব
সম্পর্কে জানতে পারবো, জানতে পারবো তার
নিজের সাথে এবং প্রতিবেশীদের সাথে তার
আচরণবিধি এমনকি অমুসলিম ও অন্যান্য জীব-জন্তুর
সাথে ও তাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ,
সে সম্পর্কে জানতে পারবো।
১. নিয়তের আদব
প্রতিটি মুসলিমই অবগত যে, নিয়তের একটি অসাধারণ
গুরুত্ব রয়েছে। নিয়তের বিশুদ্ধতার উপর নির্ভর
করে কাজের গ্রহণযোগ্যতা। নিয়ত শুদ্ধ
না হলে আমল তথা কাজও বাতিল হয়ে যায়। নিয়ত
হচ্ছে কোন কাজের জন্য প্রগাঢ় ইচ্ছা পোষণ।
যখন এই ইচ্ছাটা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর আদেশ
পালনার্থে হয়, তখনই তা হয় বিশুদ্ধ এবং এর
থেকে বেরিয়ে আসে উত্তম ও গ্রহণযোগ্য
আমল। যখন এই নিয়ত হবে দুনিয়ার জন্য,
অথবা মানুষের প্রশংসা ও বাহবা অর্জনের জন্য,
অথবা খ্যাতির জন্য অথবা আলোকিত
বিশ্বে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য অথবা অপর
কোন অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য, তখন নিয়তও বাতিল
হয়ে যাবে এবং তার ফলে অগ্রহণযোগ্য ও বাতিল
যোগ্য কাজই বের হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,“নিশ্চয়্ই সকল আমলই
নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তির
জন্য সেটাই রয়েছে যার জন্য সে নিয়ত
করেছে।” বুখারী ও মুসলিম
২. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে শিষ্টাচার
১. একজন মুসলিম এটা ভালভাবে অবগত যে আল্লাহ
রাব্বুল আলামীনই তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই
তাকে রিযিক দিয়েছেন, তিনিই তাকে সকল নিআমাত
দিয়েছেন এবং তার উপর থেকে সকল প্রকার কষ্ট
বিদূরিত করেছেন। সুতরাং তাকে অবশ্যই তার রবের
সাথে সর্বোচ্চ শিষ্টাচার প্রদর্শন করতে হবে।
২. আল্লাহর সাথে শিষ্টাচারের অন্যতম একটি দিক
হলোÑ তাঁর শরীয়তের পরিপূর্ণ অনুসরণ, আর
তা হবে আদিষ্ট বিষয়াবলী পালন এবং নিষেধকৃত
বিষয়াবলী বর্জনের মাধ্যমে।
৩. আল্লাহর সাথে আদবের মধ্যে শরীয়ত বিধৃত
কোন কাজের বিপক্ষে যুক্তি পেশ
করা থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ বলেন,
ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﻤُﺆْﻣِﻦٍ ﻭَﻟَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻨَﺔٍ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻀَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﻣْﺮًﺍ
ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟْﺨِﻴَﺮَﺓُ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻫِﻢْ
৪. “কোন মুমিন পুরুষ কিংবা নারীর উচিৎ নয় আল্লাহ
এবং তাঁর রাসূলের দেয়া ফায়সালার উপর নিজস্ব সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করা।” সূরা আল-আহযাব : ৩৬
৫. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন:
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﺩُﻋُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ
ﻟِﻴَﺤْﻜُﻢَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻭَﺃَﻃَﻌْﻨَﺎ
৬. “মুমিনদের কথাতো এমনই হবে যে, যখনই
তাদের মধ্যকার কোন ফায়সালার জন্য
তাদেরকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান
করা হবে, তখন তারা বলবে: শুনলাম এবং মানলাম।” সূরা-
নূর-৫১
আল্লাহর সাথে আদব রক্ষার অপর একটি দিক হলো-
তার নেআ’মাতের শুকরিয়া আদায় করা এবং তার
স্তুতি করা, তাঁকে বেশী বেশী স্মরণ
করা এবং অধিক পরিমাণে দো‘আ করা এবং তাঁর সকল
কাজেই তাঁর কাছে আশ্রয় গ্রহণ করা, তাঁকে ভালবাসা,
তাঁর সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করা, তাঁর শাস্তিকে ভয়
করা, তাঁর কাছে সওয়াব তথা পূণ্যের আশা করা, তাঁর
মহান কিতাব পবিত্র কোরআন অধিক তেলাওয়াত করা,
সকল প্রকার কবিরা ও সগীরা গুনাহ
থেকে বেঁচে থাকা।
৩. কোরআনের সাথে আদব বা শিষ্টাচার
একজন মুসলিম আল্লাহ তাআ’লার কিতাব
কোরআনে কারীমের সাথে ও আদব
রক্ষা করে চলবে, উহাকে সম্মান করবে, সকল
কথার উপর এ কালামকে প্রাধান্য দিবে।
এমনিভাবে সে কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন আহকাম,
আদব ও আখলাক অনুসরণ করে চলবে। কোরআন
তেলাওয়াতের সময় নিুোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য
রাখবে।
১. পরিপূর্ণ পবিত্রতার সাথে, কিবলার
দিকে বসে অত্যন্ত সম্মানের সাথে তেলাওয়াত
করা।
২. কোরআনের আয়াত এবং তার অর্থ নিয়ে চিন্তা ও
গবেষণা করা।
৩. শুধু জানা বা আমলের জন্য নয় বরং ইবাদতের
নিয়তে তেলাওয়াত করা।
৪. অত্যন্ত ধীরে তারতীল সহকারে তেলাওয়াত
করা, তাড়াহুড়া না করা।
৫. স্বতন্ত্র আহকাম হিসেবে কোরআন
তেলাওয়াতের ও অধ্যয়নের নিয়ম শিক্ষা করা।
৬. সুন্দর স্বরে তেলাওয়াত করা এবং কিতাবের
মর্যাদা বিবেচনায় বিনম্র ও ভদ্রভাব তথা খুশু ও খুজু
বজায় রাখা।
৪. রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
সাথে শিষ্টাচার
একজন মুসলিম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর সাথেও যথোচিৎ আদব রক্ষা করবে।
কেননা তিনিই হলেন সর্বশেষ নবী, যাকে আল্লাহ
তা‘আলা মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর
দিকে নিয়ে আসার জন্য প্রেরণ করেছেন।
রাসুূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
সাথে আদব রক্ষা করার দিকগুলো হলোঃ
১. তার আদেশের অনুগত হওয়া, এবং তিনি যে সকল
কাজ থেকে নিষধ করেছেন এবং ধমকি দিয়েছেন,
সেগুলো থেকে বিরত থাকা ।
২. অপরিহার্যভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা।
৩. তাঁর সুন্নাতের অনুগত হওয়া এবং আদব আখলাক
তথা শিষ্টাচারে তাঁরই মত হওয়া।
৪. তাঁর আনিত বিধান জীবনের
সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করা, বিশেষ
করে যে কোন বিবাদের ক্ষেত্রে। আল্লাহ
বলেন:
ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ
ﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺣَﺮَﺟًﺎ ﻣِﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ
৫. “কক্ষণও নয়, আপনার রবের কসম, তারা ততক্ষণ
পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের
বিবাদমান বিষয়ে আপনাকে বিচারক মানবে, এবং আপনার
দেয়া ফয়সালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোন
খুঁত পাবে না,
এবং সে ফায়সালা সন্তুষ্টচিওে মেনে নেবে।”
সূরা আন -নিসা: ৬৪
৬. তাঁর অনুগামী, সাহাবী ও
বন্ধুদেরকে ভালবাসা এবং তাদের
শত্র“দেরকে ঘৃণা করা।
৫. স্বীয় আত্মার সাথে শিষ্টাচার
১. একজন মুসলিম সর্বদা মনে মনে হিতোপদেশ
এবং শিষ্টাচারের দিকগুলো স্মরণ করবে,
যাতে করে পবিত্র ও উন্নত রাখতে পারে তার
নফসকে।ইনজ আতœাকে প্রবৃত্তির ও লালসার
পেছনে ছেড়ে দিবে না, যাতে সে স্খলিত
হয়ে যায় এবং অন্যায় করে। যারা নিজেদের
নফসের হিসাব নিজেরা রাখে এবং নফসের
তদারকি করে, তাদের প্রশংসায় আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন বলেন,
ﻗَﺪْ ﺃَﻓْﻠَﺢَ ﻣَﻦْ ﺯَﻛَّﺎﻫَﺎ ﴿ ৯ ﴾ ﻭَﻗَﺪْ ﺧَﺎﺏَ ﻣَﻦْ ﺩَﺳَّﺎﻫَﺎ ﴿ ১০﴾
২. “সেই সফলকাম যে নফসকে পরিশুদ্ধ
করেছে,আর সেই ক্ষতিগ্রস্ত
যে আত্মাকে কলুষিত করেছে।” সূরা- আশ-শামস্ :
৯,১০
৩. মুসলিম মা’সুম তথা বেগুনাহ নয়,
বরং সে কখনো কখনো ভ্রান্তি ও গুনাহে লিপ্ত
হয়ে যায় কিন্তু মুসলিম হিসেবে তাকে নফসের
সাথে জিহাদ করতে হবে, যাতে সে অবাধ্য গুনাহগার
হয়ে না যায়। যদি ও কখনো তার আত্মা তার ইচ্ছার
বিরুদ্ধে কোন গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়,
তাহলে সে মুষড়ে পড়বে না। সে হতাশ হবে না।
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবেনা।
বরং সে আল্লাহর দরবারে ফিরে আসবে এবং দ্রুত
তওবা করবে এবং গুনাহের জন্য তাঁর
নফসকে ভর্ৎসনা করবে। সম্ভব
হলে নফসকে অনুমোদিত খাহেশ থেকেও বিরত
রাখতে হবে, যাতে করে সে পরবর্তিতে কোন
গুনাহের নির্দ্দেশনা দিতে না পারে
মনে রাখা দরকার , তওবা তিনটি জিনিসকে শামিল করে।
ক্স গুনাহ থেকে ফিরে আসা।
ক্স গুনার কাজের জন্য অনুশোচনা।
ক্স কৃতগুনাহের দিকে ভবিষ্যতে ফিরে না যাওয়ার দৃঢ়
সিদ্ধান্ত।
যখন মুসলিম সত্যিকারার্থে তওবা করে, আল্লাহ তার
তওবা কবুল করেন, তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন, তার
মন্দ কাজগুলো মিটিয়ে দেন তিনি বলেন ঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺗُﻮﺑُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻮْﺑَﺔً ﻧَﺼُﻮﺣًﺎ ﻋَﺴَﻰ
ﺭَﺑُّﻜُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﻋَﻨْﻜُﻢْ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺗِﻜُﻢْ ﻭَﻳُﺪْﺧِﻠَﻜُﻢْ ﺟَﻨَّﺎﺕٍ ﺗَﺠْﺮِﻱ ﻣِﻦْ
ﺗَﺤْﺘِﻬَﺎ ﺍﻟْﺄَﻧْﻬَﺎﺭُ
“হে মুমিনগণ! তোমরা খালেসভাবে আল্লাহর
কাছে তওবা কর সম্ভবত তোমাদের রব
তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দিবেন
এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার
তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।” সূরা আত তাহরীম: ৮
৬. মানুষের সাথে শিষ্টাচার
একজন মুসলিম তার কথা-বার্তা, চাল-চলন, আচার
আচরণে মানুষের সাথে শিষ্টাচার প্রদর্শন করবে।
কেননা স্তর বা মর্যাদার বিবেচনায় প্রতি শ্রেণীর
মানুষেরই পৃথক আদব তথা শিষ্টাচার রয়েছে।
মানুষের সাথে আচার-আচরণে শিষ্টাচার প্রদর্শনের
প্রকৃতি ও নমুনা নিুরূপ হওয়া উচিৎ ঃ
১) মুসলিম তার পিতা-মাতার
সাথে সর্বক্ষেত্রে আনুগত্য প্রদর্শন করবে,
তবে আল্লাহর অবাধ্যতায় নয়।
সে তাদেরকে সমীহ করবে, মর্যাদা দেবে,
এবং তাদের অনুগত থাকবে। কথা-
কাজে তাদেরকে সম্মান দেখাবে। তাদের
সাথে কর্কশ আওয়াজে কথা বলবেনা। তাদের
উপরে নিজের আওয়াজকে উচুঁ করবে না।
তাদেরকে নাম ধরে ডাকবে না,
বরং তাদেরকে সম্বোধন করবে সম্মানজনক
শব্দে। তাদের প্রতি যথোচিৎ ইহসান-সুন্দর আচরণ
করবে, এবং তাদের প্রয়োজনে তাদের জন্য
অর্থ ব্যয় করবে।
২) মুসলিম মাত্রই একথা জানে যে তার সন্তানদের
উপর তার কিছু কর্তব্য রয়েছে যেমন: তাদের
জন্য স্ত্রী নির্বাচন করা, যারা তাদের সন্তানদের
মা হবে, আর সন্তানদের প্রতি পিতার কর্তব্য
হচ্ছে তাদেরকে উওম লালন-পালন, শিক্ষা প্রশিক্ষণ,
এবং তাদের ব্যয়ভার গ্রহণ করা এবং তাদের
প্রতি কোমল আচরণ করা, এটা তারা উপযুক্ত
হয়ে কর্মক্ষম হওয়া পর্যন্ত।
৩) আর মুসলমান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার পারস্পরিক
শিষ্টাচার এর স্বীকৃতি দিবে।
আর এটা এমন কয়েকটি দায়িত্ব যা প্রত্যেকের
সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন, আল-কুরআনের বাণীঃ
ﻭَﻟَﻬُﻦَّ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﻟِﻠﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﺩَﺭَﺟَﺔٌ
“নারীদের উপর যেমন পুরুষদের ন্যায় সংগত
অধিকার রয়েছে তেমনি অধিকার
রয়েছে নারীদের স্বামীদের উপরও।
তবে পুরুষদের অধিকার স্ত্রীদের উপর
বেশী।” সূরা আল- বাকারাহ ২২৮ আয়াত
আর ইসলাম ধর্ম স্বামীকে তার স্ত্রীর
সাথে নিুলিখিত শিষ্টাচার বজায় রাখতে নির্দেশ
দিয়েছে
ক. ধৈর্যশীলতা: এবং কোমল আচরণ। যেমন:
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন: “তোমরা মহিলাদের কল্যাণ
কামনা করবে। কেননা তাদেরকে পাজর
থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি পাজরের কোন
একটি বেকে যায়
তাহলে এটা আরো চওড়া হয়ে যাবে।
তুমি এটাকে সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে যাবে।
আর তুমি এটাকে ছেড়ে দিলে সর্বদাই
বাকা থাকবে। সুতরাং মহিলাদের ক্ষেত্রে কল্যাণ
কামনা কর।” বুখারী ও মুসলিম
খ. ন্যায় সংগতভাবে তার ভরণ পোষণের
ব্যবস্থা করা। এটা ইসলাম ধর্ম স্বামীর উপর ওয়াজিব
করে দিয়েছে।
গ. তার সাথে সদাচরণ করা: যেহেতু নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর
কাছে উত্তম।” আহমাদ এবং তিরমিযী
ঘ. তাকে ভালবাসা এবং ঘৃণা না করা। যেহেতু রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: “কোন মুমিন
স্বামী যেন কোন মুমিন স্ত্রীকে পৃথক
না করে। যদি সে তার কোন একটি আচরণ অপছন্দ
করে তাহলে অপর একটি আচরণ তার পছন্দ হবে।”
মুসলিম
ঙ. ন্যায় বিচার করা এবং অত্যাচার না করা।
চ.অশ্লীল কর্ম হতে পবিত্রকরণ
এবং উপভোগের অধিকার দেয়া।
ছ. তার গোপনীয় কথা প্রকাশ করা হারাম।
জ. তার পদস্খলন ও দোষ ত্র“টি খুুঁজে বের
করা হারাম।
ঝ. তাকে শিক্ষা দেয়া এবং সৎকাজের আদেশ করা ও
অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।
ঞ. তার সাথে খেলা করা এবং তাকে ভালবাসা।
যেমনিভাবে আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে কোন এক
ভ্রমনে বের হলাম। তখন আমি ছোট বয়সী ছিলাম,
মেদবহুল ছিলাম না, ভারী বা মোটা ছিলাম না। অতঃপর
তিনি লোকজনকে বললেন, “তোমরা
অগ্রসর হও।” অত:পর তারা অগ্রসর হলো। অত:পর
আমাকে বললেন: “এদিকে আস। আমি তোমার
সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করব তারপর আমি তার
সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করলাম।
এ্বং আমি বিজয়ী হলাম। তখন তিনি চুপ
হয়ে গেলেন। অত:পর যখন আমার মেদ
বেড়ে গেল, আমি মোটা হয়ে গেলাম
এবং পূর্বের ঘটনা ভুলে গিয়েছিলাম তখন আমি তাঁর
সাথে কোন এক ভ্রমণে বের হলাম।
তিনি মানুষকে বললেন, “তোমরা অগ্রসর হও।”
তারা অগ্রসর হয়ে গেল। পরে আমাকে বললেন,
আয়েশা তুমি এসো আমি তোমার সাথে দৌড়
প্রতিযোগিতা করবো। দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ
করে তিনি বিজয়ী হলেন। তারপর
তিনি হাসতে লাগলেন এবং বললেন, “এটি প্রথমবার
তোমার বিজয়ের প্রতিশোধ।” -আহমাদ,আবু দাউদ
ইনিই হচ্ছেন ইসলাম ধর্মের নবী এবং এটাই তার
স্ত্রীর সাথে আচরণ।
৪. মুসলিম ব্যক্তি তার নিকট আত্মীয় ও রক্ত
সম্পর্কীয় লোকদের সাথে ভদ্র সুলভ আচরণ
করবে। তারা আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করলেও
সে আত্মীয়তা বজায় রাখবে। তারা তাকে বিরক্ত
করলেও সে তাদের সাথে সদাচরণ করবে।
তারা তার সাথে দুর্ব্যবহার করলে সে তাদের
সাথে সৎ ব্যবহার করবে।
সে তাদের বড়দের সম্মান
করবে এবং ছোটদের øেহ করবে। তাদের
রোগীদের সেবা করবে এবং তাদের বিপদগ্রস্থ
লোকদেরকে সমবেদনা জানাবে। এবং তাদের
বিপদ আপদে এগিয়ে আসবে। কেননা আল্লাহর
বাণী:
ﻭَﺁَﺕِ ﺫَﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺑَﻰ ﺣَﻘَّﻪُ ﻭَﺍﻟْﻤِﺴْﻜِﻴﻦَ ﻭَﺍﺑْﻦَ ﺍﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ
“আত্মীয়কে তার অধিকার দিয়ে দাও এবং মিসকীন
ও পথিককে…. ।” সূরা আল ইসরা : ২৬
৫. ইসলাম প্রতিবেশীদের হক নির্ধারণ
করে দিয়েছে যেমনিভাবে নিকটাত্মীয়দের
অধিকার আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে।
এগুলো হচ্ছে, তাদের সাথে কথায় কাজে সদাচরণ
করা এবং তাদেরকে কষ্ট না দেয়া এবং তাদের
ক্ষতি হবে এমন কোন বিষয়ে জড়িত না হওয়া।
তাদের সম্মান করা, সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা,
তাদের খোজ খবর নেয়া, তাদেরকে উপহার
দেয়া এবং তাদের মূল্যায়ন করা। ঠাট্টা-বিদ্রুপ
না করা যেমন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জিবরীল সর্বদাই
আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসিয়ত করতেন
এমনকি আমি ধারণা করলাম যে, তিনি অচিরেই
তাকে [প্রতিবেশীকে]
উত্তরসূরী করে দিবেন।” বুখারী ও মুসলিম
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও
বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস
করে সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান
করে।” বুখারী ও মুসলিম
৭. একজন মুসলমানের অপর মুসলমানের উপর হক
বা অধিকার
এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের
প্রতি অনেক অধিকার রয়েছে, যেমন
১. যখন তার সাথে দেখা করবে তখন তাকে সালাম
দিবে এবং সে সালাম দিলে তার সালামের উত্তর
দিবে, আর ইসলামের অভিবাদনের নিয়ম হচ্ছে:
“আস্সালামু আলাইকুম”
২. যখন সে হাঁচি দিবে তখন তার হাঁচির জবাব দিবে,
যখন হাঁচি দাতা হাঁচির
পরে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (প্রশং
ইসলাম এমন কিছু উন্নত শিষ্টাচার, সুন্দর স্বভাব ও
বৈশিষ্ট্যের উপর মুসলিম সন্তানদের গড়ে তোলার
উপর গুরুত্বারোপ করেছে, যেটা মুসলিম
প্রজন্মের শিক্ষা প্রশিক্ষণ, লালন-পালন ও তাদের
চরিত্র বিনির্মাণে ভূমিকা পালন করে থাকে।
কথা কাজের ক্ষেত্রে উন্নত পন্থা অবলম্বন, সৎ
স্বভাব গ্রহণ ও ঘৃণিত তথা মন্দ স্বভাব
পরিত্যাগে নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের
জন্য আদব তথা শিষ্টাচারের সকল দিকগুলোই
বর্ণনা দিয়েছেন। এমনকি যুদ্ধের ময়দানের শিষ্টাচার
কি হবে, তাও বলে দিয়েছেন।
তিনি তাদেরকে যুদ্ধের সময় নারী-শিশু
এবং যে সকল বৃদ্ধ যুদ্ধ
করে না তাদেরকে হত্যা করতে নিষেধ
করেছেন। বারণ করেছেন গির্জা ও
আশ্রমে আশ্রয় গ্রহণকারী পাদ্রী, ধর্মযাজক ও
সন্নাসী এবং শষ্যক্ষেত্রে চাষাবাদরত
চাষীকে হত্যা করতে। এবং মৃতের দেহ বিকৃত
করতে ও নিষেধ করেছেন।
এমনিভাবে আরো অনেক আদব রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
বলে দেয়া শিষ্টাচার তথা আদবের
মধ্যে রয়েছে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ, পোষাক-
পরিচ্ছদ, নিদ্রা, স্ত্রী মিলন ও দাম্পত্য জীবনের
আদব ছাড়াও অনেক বিষয়। এমনকি তিনি পায়খানায়
প্রবেশের আদব ও বলে দিয়েছেন, যেমন:
সালমান ফারেসী (রাঃ) থেকে বর্ণনা এসেছে,
তিনি বলেন, ‘মুশরিকরা আমাদেরকে বলে, এ
কেমন কথা তোমাদের
নবী তোমাদেরকে সকল কিছুই শিক্ষা দেন,
এমনকি পায়খানা করার নিয়মও ?! তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ!
তিনি আমাদেরকে পায়খানা -পেশাবের সময়
কেবলা মূখী অথবা কেবলাকে পিছনে দিয়ে
বসতে বারণ করেছেন। ডান হাতে ঢিলা- কুলুখ
ব্যবহার, তিনটির কম পাথর ঢিলা হিসাবে ব্যবহার অথবা হাড়
কিংবা গোবর দিয়ে ঢিলা ব্যবহার থেকে বিরত থাকার
নির্দেশ দিয়েছেন।’ মুসলিম
ইসলামই হচ্ছে একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যা সমগ্র
মানব জীবনের জন্য একটি নির্ভুল
পদ্ধতি এঁকে দিয়েছে। যার
মাঝে রয়েছে জীবনের প্রতিটি স্তর ও
বিভাগের সুষ্ঠু সমাধান। এটা মানব রচিত কোন জীবন
বিধান নয় যে, তার মাঝে সত্য মিথ্যার সম্ভাবনা থাকবে,
বরং এটা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান, যা তার
অনুসারীদের জন্য দুনিয়ার
জীবনে বয়ে নিয়ে আসে কল্যাণ, শান্তি— ও
মানুষিক স্বস্তি, আর কিয়ামতের কঠিন দিনে পুরস্কৃত
করে তার চিরস্থায়ী সুখের জান্নাত। আল্লাহ
বলেন- “আমরা কিতাবে (কুরআনে) কোন কিছুই
বাদ দেইনি।”[ সূরা আনআম ৩৮ আয়াত ]
আত্মার সুষ্ঠু গঠন ও পরিশুদ্ধি এবং সুন্দর চরিত্র
বিনির্মাণে নবুওয়তী আদবের একটি সুন্দর প্রভাব ও
সুদূর প্রসারী ফলাফল রয়েছে। নবুওয়তী আদব
তথা ইসলামী শিষ্টাচার জাতির জন্য এমন কিছু ধারাবাহিক
প্রজন্ম উপহার দিয়েছে, সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা,
চারিত্রিক নিষ্কুলুষতা, পবিত্রতা, আদল ইনসাফ, ব্যক্তিত্ব,
লজ্জাশীলতা, দয়া দাক্ষিণ্য এবং শক্তি-সামর্থ ও
বীরত্বে যাদের তুলনা ইতিহাসে বিরল। হতাশাগ্রস্থ
মজলুমের সহযোগিতায় ও তাদের জুড়ি নেই।
ইসলামী শিষ্টাচার ও নবুয়তী চরিত্র
থেকে দূরে সরে যাওয়াই হচ্ছে বর্তমান মুসলিম
উম্মার দুর্বলতার কারণ। মুসলিম উম্মাহ যদি অপর জাতির
দাস সূলভ অনুসরণ
থেকে বেরিয়ে আসতে পারে,
যদি ফিরে আসে তাদের সক্বীয়তা এবং সত্যিকার
ইসলামী শিষ্টাচারের দিকে, তাহলে অবশ্যই তাদের
হারানো গৌরব, সম্মান ও মর্যাদা ফিরে আসবে। মুসলিম
জাতি কি এ ব্যাপারটি অনুধাবন করবে ?
আমরা সামনের পৃষ্ঠাগুলোতে আল্লাহ, তাঁর রাসূল
এবং দ্বীনের সাথে মুসলিমের আদব
সম্পর্কে জানতে পারবো, জানতে পারবো তার
নিজের সাথে এবং প্রতিবেশীদের সাথে তার
আচরণবিধি এমনকি অমুসলিম ও অন্যান্য জীব-জন্তুর
সাথে ও তাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ,
সে সম্পর্কে জানতে পারবো।
১. নিয়তের আদব
প্রতিটি মুসলিমই অবগত যে, নিয়তের একটি অসাধারণ
গুরুত্ব রয়েছে। নিয়তের বিশুদ্ধতার উপর নির্ভর
করে কাজের গ্রহণযোগ্যতা। নিয়ত শুদ্ধ
না হলে আমল তথা কাজও বাতিল হয়ে যায়। নিয়ত
হচ্ছে কোন কাজের জন্য প্রগাঢ় ইচ্ছা পোষণ।
যখন এই ইচ্ছাটা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর আদেশ
পালনার্থে হয়, তখনই তা হয় বিশুদ্ধ এবং এর
থেকে বেরিয়ে আসে উত্তম ও গ্রহণযোগ্য
আমল। যখন এই নিয়ত হবে দুনিয়ার জন্য,
অথবা মানুষের প্রশংসা ও বাহবা অর্জনের জন্য,
অথবা খ্যাতির জন্য অথবা আলোকিত
বিশ্বে নিজেকে প্রকাশ করার জন্য অথবা অপর
কোন অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য, তখন নিয়তও বাতিল
হয়ে যাবে এবং তার ফলে অগ্রহণযোগ্য ও বাতিল
যোগ্য কাজই বের হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,“নিশ্চয়্ই সকল আমলই
নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তির
জন্য সেটাই রয়েছে যার জন্য সে নিয়ত
করেছে।” বুখারী ও মুসলিম
২. আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে শিষ্টাচার
১. একজন মুসলিম এটা ভালভাবে অবগত যে আল্লাহ
রাব্বুল আলামীনই তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই
তাকে রিযিক দিয়েছেন, তিনিই তাকে সকল নিআমাত
দিয়েছেন এবং তার উপর থেকে সকল প্রকার কষ্ট
বিদূরিত করেছেন। সুতরাং তাকে অবশ্যই তার রবের
সাথে সর্বোচ্চ শিষ্টাচার প্রদর্শন করতে হবে।
২. আল্লাহর সাথে শিষ্টাচারের অন্যতম একটি দিক
হলোÑ তাঁর শরীয়তের পরিপূর্ণ অনুসরণ, আর
তা হবে আদিষ্ট বিষয়াবলী পালন এবং নিষেধকৃত
বিষয়াবলী বর্জনের মাধ্যমে।
৩. আল্লাহর সাথে আদবের মধ্যে শরীয়ত বিধৃত
কোন কাজের বিপক্ষে যুক্তি পেশ
করা থেকে বিরত থাকা। আল্লাহ বলেন,
ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﻤُﺆْﻣِﻦٍ ﻭَﻟَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻨَﺔٍ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻀَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﻣْﺮًﺍ
ﺃَﻥْ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟْﺨِﻴَﺮَﺓُ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻫِﻢْ
৪. “কোন মুমিন পুরুষ কিংবা নারীর উচিৎ নয় আল্লাহ
এবং তাঁর রাসূলের দেয়া ফায়সালার উপর নিজস্ব সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করা।” সূরা আল-আহযাব : ৩৬
৫. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন:
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﺩُﻋُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ
ﻟِﻴَﺤْﻜُﻢَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﻭَﺃَﻃَﻌْﻨَﺎ
৬. “মুমিনদের কথাতো এমনই হবে যে, যখনই
তাদের মধ্যকার কোন ফায়সালার জন্য
তাদেরকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দিকে আহ্বান
করা হবে, তখন তারা বলবে: শুনলাম এবং মানলাম।” সূরা-
নূর-৫১
আল্লাহর সাথে আদব রক্ষার অপর একটি দিক হলো-
তার নেআ’মাতের শুকরিয়া আদায় করা এবং তার
স্তুতি করা, তাঁকে বেশী বেশী স্মরণ
করা এবং অধিক পরিমাণে দো‘আ করা এবং তাঁর সকল
কাজেই তাঁর কাছে আশ্রয় গ্রহণ করা, তাঁকে ভালবাসা,
তাঁর সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করা, তাঁর শাস্তিকে ভয়
করা, তাঁর কাছে সওয়াব তথা পূণ্যের আশা করা, তাঁর
মহান কিতাব পবিত্র কোরআন অধিক তেলাওয়াত করা,
সকল প্রকার কবিরা ও সগীরা গুনাহ
থেকে বেঁচে থাকা।
৩. কোরআনের সাথে আদব বা শিষ্টাচার
একজন মুসলিম আল্লাহ তাআ’লার কিতাব
কোরআনে কারীমের সাথে ও আদব
রক্ষা করে চলবে, উহাকে সম্মান করবে, সকল
কথার উপর এ কালামকে প্রাধান্য দিবে।
এমনিভাবে সে কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন আহকাম,
আদব ও আখলাক অনুসরণ করে চলবে। কোরআন
তেলাওয়াতের সময় নিুোক্ত বিষয়গুলো লক্ষ্য
রাখবে।
১. পরিপূর্ণ পবিত্রতার সাথে, কিবলার
দিকে বসে অত্যন্ত সম্মানের সাথে তেলাওয়াত
করা।
২. কোরআনের আয়াত এবং তার অর্থ নিয়ে চিন্তা ও
গবেষণা করা।
৩. শুধু জানা বা আমলের জন্য নয় বরং ইবাদতের
নিয়তে তেলাওয়াত করা।
৪. অত্যন্ত ধীরে তারতীল সহকারে তেলাওয়াত
করা, তাড়াহুড়া না করা।
৫. স্বতন্ত্র আহকাম হিসেবে কোরআন
তেলাওয়াতের ও অধ্যয়নের নিয়ম শিক্ষা করা।
৬. সুন্দর স্বরে তেলাওয়াত করা এবং কিতাবের
মর্যাদা বিবেচনায় বিনম্র ও ভদ্রভাব তথা খুশু ও খুজু
বজায় রাখা।
৪. রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর
সাথে শিষ্টাচার
একজন মুসলিম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এর সাথেও যথোচিৎ আদব রক্ষা করবে।
কেননা তিনিই হলেন সর্বশেষ নবী, যাকে আল্লাহ
তা‘আলা মানব জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর
দিকে নিয়ে আসার জন্য প্রেরণ করেছেন।
রাসুূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
সাথে আদব রক্ষা করার দিকগুলো হলোঃ
১. তার আদেশের অনুগত হওয়া, এবং তিনি যে সকল
কাজ থেকে নিষধ করেছেন এবং ধমকি দিয়েছেন,
সেগুলো থেকে বিরত থাকা ।
২. অপরিহার্যভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা।
৩. তাঁর সুন্নাতের অনুগত হওয়া এবং আদব আখলাক
তথা শিষ্টাচারে তাঁরই মত হওয়া।
৪. তাঁর আনিত বিধান জীবনের
সর্বক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা করা, বিশেষ
করে যে কোন বিবাদের ক্ষেত্রে। আল্লাহ
বলেন:
ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ
ﻟَﺎ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺣَﺮَﺟًﺎ ﻣِﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ
৫. “কক্ষণও নয়, আপনার রবের কসম, তারা ততক্ষণ
পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তাদের
বিবাদমান বিষয়ে আপনাকে বিচারক মানবে, এবং আপনার
দেয়া ফয়সালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোন
খুঁত পাবে না,
এবং সে ফায়সালা সন্তুষ্টচিওে মেনে নেবে।”
সূরা আন -নিসা: ৬৪
৬. তাঁর অনুগামী, সাহাবী ও
বন্ধুদেরকে ভালবাসা এবং তাদের
শত্র“দেরকে ঘৃণা করা।
৫. স্বীয় আত্মার সাথে শিষ্টাচার
১. একজন মুসলিম সর্বদা মনে মনে হিতোপদেশ
এবং শিষ্টাচারের দিকগুলো স্মরণ করবে,
যাতে করে পবিত্র ও উন্নত রাখতে পারে তার
নফসকে।ইনজ আতœাকে প্রবৃত্তির ও লালসার
পেছনে ছেড়ে দিবে না, যাতে সে স্খলিত
হয়ে যায় এবং অন্যায় করে। যারা নিজেদের
নফসের হিসাব নিজেরা রাখে এবং নফসের
তদারকি করে, তাদের প্রশংসায় আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন বলেন,
ﻗَﺪْ ﺃَﻓْﻠَﺢَ ﻣَﻦْ ﺯَﻛَّﺎﻫَﺎ ﴿ ৯ ﴾ ﻭَﻗَﺪْ ﺧَﺎﺏَ ﻣَﻦْ ﺩَﺳَّﺎﻫَﺎ ﴿ ১০﴾
২. “সেই সফলকাম যে নফসকে পরিশুদ্ধ
করেছে,আর সেই ক্ষতিগ্রস্ত
যে আত্মাকে কলুষিত করেছে।” সূরা- আশ-শামস্ :
৯,১০
৩. মুসলিম মা’সুম তথা বেগুনাহ নয়,
বরং সে কখনো কখনো ভ্রান্তি ও গুনাহে লিপ্ত
হয়ে যায় কিন্তু মুসলিম হিসেবে তাকে নফসের
সাথে জিহাদ করতে হবে, যাতে সে অবাধ্য গুনাহগার
হয়ে না যায়। যদি ও কখনো তার আত্মা তার ইচ্ছার
বিরুদ্ধে কোন গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়,
তাহলে সে মুষড়ে পড়বে না। সে হতাশ হবে না।
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবেনা।
বরং সে আল্লাহর দরবারে ফিরে আসবে এবং দ্রুত
তওবা করবে এবং গুনাহের জন্য তাঁর
নফসকে ভর্ৎসনা করবে। সম্ভব
হলে নফসকে অনুমোদিত খাহেশ থেকেও বিরত
রাখতে হবে, যাতে করে সে পরবর্তিতে কোন
গুনাহের নির্দ্দেশনা দিতে না পারে
মনে রাখা দরকার , তওবা তিনটি জিনিসকে শামিল করে।
ক্স গুনাহ থেকে ফিরে আসা।
ক্স গুনার কাজের জন্য অনুশোচনা।
ক্স কৃতগুনাহের দিকে ভবিষ্যতে ফিরে না যাওয়ার দৃঢ়
সিদ্ধান্ত।
যখন মুসলিম সত্যিকারার্থে তওবা করে, আল্লাহ তার
তওবা কবুল করেন, তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন, তার
মন্দ কাজগুলো মিটিয়ে দেন তিনি বলেন ঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﺗُﻮﺑُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻮْﺑَﺔً ﻧَﺼُﻮﺣًﺎ ﻋَﺴَﻰ
ﺭَﺑُّﻜُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳُﻜَﻔِّﺮَ ﻋَﻨْﻜُﻢْ ﺳَﻴِّﺌَﺎﺗِﻜُﻢْ ﻭَﻳُﺪْﺧِﻠَﻜُﻢْ ﺟَﻨَّﺎﺕٍ ﺗَﺠْﺮِﻱ ﻣِﻦْ
ﺗَﺤْﺘِﻬَﺎ ﺍﻟْﺄَﻧْﻬَﺎﺭُ
“হে মুমিনগণ! তোমরা খালেসভাবে আল্লাহর
কাছে তওবা কর সম্ভবত তোমাদের রব
তোমাদের পাপসমূহ মোচন করে দিবেন
এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে যার
তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।” সূরা আত তাহরীম: ৮
৬. মানুষের সাথে শিষ্টাচার
একজন মুসলিম তার কথা-বার্তা, চাল-চলন, আচার
আচরণে মানুষের সাথে শিষ্টাচার প্রদর্শন করবে।
কেননা স্তর বা মর্যাদার বিবেচনায় প্রতি শ্রেণীর
মানুষেরই পৃথক আদব তথা শিষ্টাচার রয়েছে।
মানুষের সাথে আচার-আচরণে শিষ্টাচার প্রদর্শনের
প্রকৃতি ও নমুনা নিুরূপ হওয়া উচিৎ ঃ
১) মুসলিম তার পিতা-মাতার
সাথে সর্বক্ষেত্রে আনুগত্য প্রদর্শন করবে,
তবে আল্লাহর অবাধ্যতায় নয়।
সে তাদেরকে সমীহ করবে, মর্যাদা দেবে,
এবং তাদের অনুগত থাকবে। কথা-
কাজে তাদেরকে সম্মান দেখাবে। তাদের
সাথে কর্কশ আওয়াজে কথা বলবেনা। তাদের
উপরে নিজের আওয়াজকে উচুঁ করবে না।
তাদেরকে নাম ধরে ডাকবে না,
বরং তাদেরকে সম্বোধন করবে সম্মানজনক
শব্দে। তাদের প্রতি যথোচিৎ ইহসান-সুন্দর আচরণ
করবে, এবং তাদের প্রয়োজনে তাদের জন্য
অর্থ ব্যয় করবে।
২) মুসলিম মাত্রই একথা জানে যে তার সন্তানদের
উপর তার কিছু কর্তব্য রয়েছে যেমন: তাদের
জন্য স্ত্রী নির্বাচন করা, যারা তাদের সন্তানদের
মা হবে, আর সন্তানদের প্রতি পিতার কর্তব্য
হচ্ছে তাদেরকে উওম লালন-পালন, শিক্ষা প্রশিক্ষণ,
এবং তাদের ব্যয়ভার গ্রহণ করা এবং তাদের
প্রতি কোমল আচরণ করা, এটা তারা উপযুক্ত
হয়ে কর্মক্ষম হওয়া পর্যন্ত।
৩) আর মুসলমান স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার পারস্পরিক
শিষ্টাচার এর স্বীকৃতি দিবে।
আর এটা এমন কয়েকটি দায়িত্ব যা প্রত্যেকের
সাথে সংশ্লিষ্ট। যেমন, আল-কুরআনের বাণীঃ
ﻭَﻟَﻬُﻦَّ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﻟِﻠﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﺩَﺭَﺟَﺔٌ
“নারীদের উপর যেমন পুরুষদের ন্যায় সংগত
অধিকার রয়েছে তেমনি অধিকার
রয়েছে নারীদের স্বামীদের উপরও।
তবে পুরুষদের অধিকার স্ত্রীদের উপর
বেশী।” সূরা আল- বাকারাহ ২২৮ আয়াত
আর ইসলাম ধর্ম স্বামীকে তার স্ত্রীর
সাথে নিুলিখিত শিষ্টাচার বজায় রাখতে নির্দেশ
দিয়েছে
ক. ধৈর্যশীলতা: এবং কোমল আচরণ। যেমন:
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন: “তোমরা মহিলাদের কল্যাণ
কামনা করবে। কেননা তাদেরকে পাজর
থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি পাজরের কোন
একটি বেকে যায়
তাহলে এটা আরো চওড়া হয়ে যাবে।
তুমি এটাকে সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে যাবে।
আর তুমি এটাকে ছেড়ে দিলে সর্বদাই
বাকা থাকবে। সুতরাং মহিলাদের ক্ষেত্রে কল্যাণ
কামনা কর।” বুখারী ও মুসলিম
খ. ন্যায় সংগতভাবে তার ভরণ পোষণের
ব্যবস্থা করা। এটা ইসলাম ধর্ম স্বামীর উপর ওয়াজিব
করে দিয়েছে।
গ. তার সাথে সদাচরণ করা: যেহেতু নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর
কাছে উত্তম।” আহমাদ এবং তিরমিযী
ঘ. তাকে ভালবাসা এবং ঘৃণা না করা। যেহেতু রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: “কোন মুমিন
স্বামী যেন কোন মুমিন স্ত্রীকে পৃথক
না করে। যদি সে তার কোন একটি আচরণ অপছন্দ
করে তাহলে অপর একটি আচরণ তার পছন্দ হবে।”
মুসলিম
ঙ. ন্যায় বিচার করা এবং অত্যাচার না করা।
চ.অশ্লীল কর্ম হতে পবিত্রকরণ
এবং উপভোগের অধিকার দেয়া।
ছ. তার গোপনীয় কথা প্রকাশ করা হারাম।
জ. তার পদস্খলন ও দোষ ত্র“টি খুুঁজে বের
করা হারাম।
ঝ. তাকে শিক্ষা দেয়া এবং সৎকাজের আদেশ করা ও
অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।
ঞ. তার সাথে খেলা করা এবং তাকে ভালবাসা।
যেমনিভাবে আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে কোন এক
ভ্রমনে বের হলাম। তখন আমি ছোট বয়সী ছিলাম,
মেদবহুল ছিলাম না, ভারী বা মোটা ছিলাম না। অতঃপর
তিনি লোকজনকে বললেন, “তোমরা
অগ্রসর হও।” অত:পর তারা অগ্রসর হলো। অত:পর
আমাকে বললেন: “এদিকে আস। আমি তোমার
সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করব তারপর আমি তার
সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করলাম।
এ্বং আমি বিজয়ী হলাম। তখন তিনি চুপ
হয়ে গেলেন। অত:পর যখন আমার মেদ
বেড়ে গেল, আমি মোটা হয়ে গেলাম
এবং পূর্বের ঘটনা ভুলে গিয়েছিলাম তখন আমি তাঁর
সাথে কোন এক ভ্রমণে বের হলাম।
তিনি মানুষকে বললেন, “তোমরা অগ্রসর হও।”
তারা অগ্রসর হয়ে গেল। পরে আমাকে বললেন,
আয়েশা তুমি এসো আমি তোমার সাথে দৌড়
প্রতিযোগিতা করবো। দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ
করে তিনি বিজয়ী হলেন। তারপর
তিনি হাসতে লাগলেন এবং বললেন, “এটি প্রথমবার
তোমার বিজয়ের প্রতিশোধ।” -আহমাদ,আবু দাউদ
ইনিই হচ্ছেন ইসলাম ধর্মের নবী এবং এটাই তার
স্ত্রীর সাথে আচরণ।
৪. মুসলিম ব্যক্তি তার নিকট আত্মীয় ও রক্ত
সম্পর্কীয় লোকদের সাথে ভদ্র সুলভ আচরণ
করবে। তারা আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করলেও
সে আত্মীয়তা বজায় রাখবে। তারা তাকে বিরক্ত
করলেও সে তাদের সাথে সদাচরণ করবে।
তারা তার সাথে দুর্ব্যবহার করলে সে তাদের
সাথে সৎ ব্যবহার করবে।
সে তাদের বড়দের সম্মান
করবে এবং ছোটদের øেহ করবে। তাদের
রোগীদের সেবা করবে এবং তাদের বিপদগ্রস্থ
লোকদেরকে সমবেদনা জানাবে। এবং তাদের
বিপদ আপদে এগিয়ে আসবে। কেননা আল্লাহর
বাণী:
ﻭَﺁَﺕِ ﺫَﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺑَﻰ ﺣَﻘَّﻪُ ﻭَﺍﻟْﻤِﺴْﻜِﻴﻦَ ﻭَﺍﺑْﻦَ ﺍﻟﺴَّﺒِﻴﻞِ
“আত্মীয়কে তার অধিকার দিয়ে দাও এবং মিসকীন
ও পথিককে…. ।” সূরা আল ইসরা : ২৬
৫. ইসলাম প্রতিবেশীদের হক নির্ধারণ
করে দিয়েছে যেমনিভাবে নিকটাত্মীয়দের
অধিকার আদায়ের নির্দেশ দিয়েছে।
এগুলো হচ্ছে, তাদের সাথে কথায় কাজে সদাচরণ
করা এবং তাদেরকে কষ্ট না দেয়া এবং তাদের
ক্ষতি হবে এমন কোন বিষয়ে জড়িত না হওয়া।
তাদের সম্মান করা, সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা,
তাদের খোজ খবর নেয়া, তাদেরকে উপহার
দেয়া এবং তাদের মূল্যায়ন করা। ঠাট্টা-বিদ্রুপ
না করা যেমন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জিবরীল সর্বদাই
আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসিয়ত করতেন
এমনকি আমি ধারণা করলাম যে, তিনি অচিরেই
তাকে [প্রতিবেশীকে]
উত্তরসূরী করে দিবেন।” বুখারী ও মুসলিম
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও
বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস
করে সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান
করে।” বুখারী ও মুসলিম
৭. একজন মুসলমানের অপর মুসলমানের উপর হক
বা অধিকার
এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের
প্রতি অনেক অধিকার রয়েছে, যেমন
১. যখন তার সাথে দেখা করবে তখন তাকে সালাম
দিবে এবং সে সালাম দিলে তার সালামের উত্তর
দিবে, আর ইসলামের অভিবাদনের নিয়ম হচ্ছে:
“আস্সালামু আলাইকুম”
২. যখন সে হাঁচি দিবে তখন তার হাঁচির জবাব দিবে,
যখন হাঁচি দাতা হাঁচির
পরে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (প্রশং
EmoticonEmoticon