উইন্ডোজ ১০ তো আমরা সবাই উইন্ডোজ পিসি বা ল্যাপটপে ব্যবহার করি। বর্তমানে ২০১৭-১৮ এর সময়ে খুব কম উইন্ডোজ ১০ পিসিই দেখা যায় যেগুলোতে উইন্ডোজ ১০ এর নিচের কোনো ভার্সন ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোসফট সবসময়েই দাবী করেছে যে উইন্ডোজ ১০ হচ্ছে তাদের তৈরী এখনো পর্যন্ত বেস্ট উইন্ডোজ ভার্সন। তাদের দাবিমতে উইন্ডোজ ১০ এ আগের সব উইন্ডোজ ভার্সনগুলোর থেকে অনেক বেশি ফিচারস আছে এবং এটি আগের থেকে অনেক বেশি ফাস্ট এবং রিলায়েবল।
যাইহোক, আজকে আলোচনা করবো উইন্ডোজ ১০ এর এমন ৫ টি ট্রিকস নিয়ে যেগুলো আপনার জানা উচিত যদি আপনি উইন্ডোজ ১০ ইউজার হয়ে থাকেন। হতে পারে এগুলোর মধ্যে অনেক ট্রিকস আপনি আগে থেকেই জানেন এবং অনেকদিন ধরে ব্যবহারও করে আসছেন। আবার হতে পারে এগুলো অনেকদিন ধরে উইন্ডোজ ১০ এ থাকার পরেও আপনি খেয়াল করেননি এবং ব্যবহার করেননি। যাইহোক, আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
নাইট লাইট
স্মার্টফোন ইউজারদের কাছে এই ফিচারটি বেশ পরিচিত। নাইট লাইট মূলত এমন একটি ফিচার বা এমন একটি সেটিংস যেটি রাতে আপনার ডিভাইস ইউজ করার সময় আপনার চোখকে প্রটেকশন দেবে বা আপনার চোখের ওপর কম প্রেসার ফেলতে সাহায্য করবে। আপনি উইন্ডোজ ১০ পিসির সেটিংস মেনু থেকে ডিসপ্লে সেকশনে গেলেই নাইট লাইট অপশনটি পেয়ে যাবেন। সেখান থেকে নাইট লাইট একটিভ করে দিলেই আপনি দেখতে পাবেন আপনার ডিসপ্লে তে এক ধরণের অরেঞ্জ কালারের শেড দেওয়া হয়েছে যেটি রাতের বেলা ডিভাইজ ইউজ করার সময় আপনার চোখকে কমফোর্ট দেবে। আপনি চাইলে এই শেডটি কতটুকু ডিপ হবে বা লাইট হবে সেটাও নিজের ইচ্ছামতো সেট করতে পারবেন।
আপনার যদি আমার মতো রাত জেগে পিসি বা ল্যাপটপ ব্যবহার করার হ্যাবিট থাকে তাহলে আমি বলবো আপনার অবশ্যই লাইট লাইট ব্যবহার করা উচিত। এর ফলে অনেক্ষন স্ক্রিনের দিকে তাকানোর পরে আপনার চোখে ব্যাথা করবেন বা করলেও আগের তুলনায় অনেক কম করবে। আপনি চাইলে নিজের ইচ্ছামতো রুটিনও সেট করে দিতে পারবেন যাতে নাইট লাইট আপনার সুবিধামতো সময়ে নিজে নিজেই একটিভ হবে এবং ডিএক্টিভেট হবে। তবে এই ফিচারটি শুধুমাত্র উইন্ডোজ ১০ এর লেটেস্ট ক্রিয়েটরস আপডেটেই বিল্ট ইন পাবেন। তবে যদি আপনি ক্রিয়েটরস আপডেট দিতে না চান অথবা আপনার উইন্ডোজ ১০ ভার্সন কিছুটা পুরোনো হয় এবং আপগ্রেড করতে না চান, তাহলে আপনি F.lux সফটওয়্যারটি ব্যবহার করেও নাইট লাইট একটিভ করতে পারবেন।
স্মার্টফোন নোটিফিকেশন সিঙ্ক
আপনি হয়তো অনেক থার্ড পার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনার স্মার্টফোনের নোটিফিকেশন পিসিতে বা ল্যাপটপে মিরর করতে বা সিঙ্ক করতে পারবেন, যেমন- এয়ারড্রয়েড, পুশবুলেট ইত্যাদি ব্যবহার করে। তবে আপনি হয়তো অনেক উইন্ডোজ ডিভাইজ ইউজারের মতো এখনো জানেন না যে স্মার্টফোন থেকে নোটিফিকেশন সিঙ্ক করার জন্য উইন্ডোজ ১০ এর একটি ডিফল্ট অপশনই আছে। এবং এটি অবশ্যই জানেন যে যেকোনো কাজের জন্য থার্ড পার্টি সফটওয়্যার এর থেকে বিল্ট ইন সলুশন থাকলে সেটি আরো ভালো কাজ করে এবং আরো বেশি রিলায়েবল হয়।
আপনার স্মার্টফোন থেকে সব নোটিফিকেশন লাইভ আপনার পিসিতে সিঙ্ক করতে আপনাকে শুধুমাত্র আপনার স্মার্টফোনে মাইক্রোসফট কর্টানা এর এন্ড্রোয়েড ভার্সনটি ইনস্টল করতে হবে এবং আপনার পিসিতে যে মাইক্রোসফট একাউন্টটি লগইন করা আছে, ওই সেম মাইক্রোসফট একাউন্ট আপনার ফোনে কর্টানাতে লগইন করতে হবে। এরপর আপনাকে পিসিতে উইন্ডোজ ১০ এর সেটিংস মেনুতে গিয়ে কর্টানা সেটিংসে যেতে হবে। কর্টানা সেটিংসে একটি অপশন পাবেন যার নাম নোটিফিকেশন সেটিংস। এবার নোটিফিকেশন সেটিংস থেকে আপনাকে জাস্ট Send Notification Between Devices অপশনটি এনাবল করে দিতে হবে।
তাহলেই আপনার ফোনে আসা সকল নোটিফিকেশন আপনি পিসিতে একইসাথে পাবেন। এছাড়া আপনি চাইলে পিসি থেকে আপনার স্মার্টফোনের কোনো নোটিফিকেশনের মেসেজের রিপ্লাইও দিতে পারবেন। এই ফিচারটি অনেক বেশি দরকারি হয় যখন আপনি পিসিতে কোনো কাজ করবেন এবং আপনার ফোন হাতের কাছে থাকবে না। আর হ্যা, এই ফিচারটি কাজ করতে হলে আপনার পিসি এবং স্মার্টফোন দুটিতেই ইন্টারনেট কানেকশন অন থাকতে হবে। এই ফিচারটির জন্যেও আপনাকে উইন্ডোজ ১০ এর লেটেস্ট ভার্সন অর্থাৎ ক্রিয়েটরস আপডেটের দরকার হবে।
আর হ্যা, কর্টানা এপ্লিকেশনটি আপনি প্লে স্টোরে পাবেন না। কারণ, এটি বাংলাদেশে অফিসিয়ালি এভেইলেবল নয়। আপনি চাইলে কর্টানা এপ্লিকেশনটি এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
বিল্ট ইন ডিস্ক ক্লিনার
আমরা অনেকেই পিসিতে অপ্রয়োজনীয় ফাইলস স্ক্যান করে ডিলিট করার জন্য অনেক ধরণের থার্ড পার্টি প্রোগ্রাম ব্যবহার করে থাকি। যেমন সিক্লিনার, পিসি ক্লিনার ইত্যাদি এই ধরণের আরো অনেক জাঙ্ক ক্লিনার এপ্লিকেশন। কিন্তু এই ধরণের প্রোগ্রামগুলো সবসময় ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেকক্ষেত্রে এসব দরকারি হলেও থার্ড পার্টি প্রোগ্রাম হওয়ায় ফাইল ক্লিন করার জন্য এগুলো কখনোই উপযুক্ত সল্যুশন নয়। কারণ, অনেকেই জানেন না যে উইন্ডোজ ১০ এ বিল্ট ইন ডিস্ক ক্লিনার আগে থেকেই আছে। আপনাকে শুধুমাত্র উইন্ডোজ ১০ এর সেটিংস মেনুতে গিয়ে সিস্টেম সেটিংস থেকে স্টোরেজ অপশনে যেতে হবে। এখানে আপনি একটি অপশন পাবেন যার নাম Storage Sense।
এই অপশনটি এনাবল করে দিলেই আপনাকে আর ডিস্ক ক্লিন করা নিয়ে ভাবতে হবেনা কখনো। যখনই আপনার পিসিতে অপ্রয়োজনীয় ফাইলের সংখ্যা বেড়ে যাবে, উইন্ডোজ নিজেই ডিস্ক ক্লিন করবে এবং সকল অপ্রয়োজনীয় ক্যাশ ফাইল এবং টেম্পোরারি ফাইলস ক্লিন করবে। এবং আপনি ম্যানুয়ালি ডিস্ক ক্লিন করতে চাইলে তার জন্যেও উইন্ডোজে ডিফল্ট টুল আছে। আপনাকে শুধুমাত্র স্টার্ট বাটনে ক্লিক করে Disk Cleanup লিখে সার্চ করতে হবে। এরপর আপনার সামনে ডিস্ক ক্লিনআপ টুল ওপেন হবে এবং আপনি সেখান থেকে যেকোনো ড্রাইভ সিলেক্ট করে ফাইল ক্লিন করতে পারবেন।
ডেক্সটপ স্ক্রিনশট
স্ক্রিনশট কি এবং এটি কেন দরকার হয় এ বিষয়ে আমার মনে হয়না কিছু বলার প্রয়োজন আছে। আমরা সবাই জানি যে স্ক্রিনশট কি এবং আর প্রয়োজনীয়তা কি। যদিও স্মার্টফোনে স্ক্রিনশট নেওয়া অনেক সহজ, কিন্তু ডেক্সটপ/পিসির ক্ষেত্রে ততোটা সহজ নয়। হ্যাঁ, ডেস্কটপে স্ক্রিনশট নেওয়ার কাজটিকে চাইলেই অনেক সহজ করে তোলা যায় বিভিন্ন থার্ড পার্টিস্ক্রিনশট নেওয়ার প্রোগ্রাম ইন্সটল করে (যেমন : Greenshot)। কিন্তু স্ক্রিনশট নেওয়ার জন্য উইন্ডোজ এর ডিফল্ট ফার্স্ট পার্টি প্রোগ্রামও রয়েছে যদিও এই প্রোগ্রামটি সম্পর্কে অনেক পিসি ইউজারই জানেন না।
হ্যাঁ,আপনি হয়ত এটা জানেন যে পিসিতে যেকোনো সময় স্ক্রিনশট নেওয়া যায় কি-বোর্ডের Insert PrintScreen বাটনটি প্রেস করে। কিন্তু, সেক্ষেত্রে আপনি স্ক্রিনশটটি রিসাইজ করতে পারেন না বা একটি ছোট এরিয়া সিলেক্ট করে স্ক্রিনশট নিতে পারেন না। আপনার স্ক্রিনশটটি ক্লিপবোর্ডে কপি হয়ে থাকে এবং আপনাকে সেই স্ক্রিনশটটি আবার কোন ইমেজ এডিটর প্রোগ্রামে পেস্ট করে নিয়ে তারপরে আবার এডিট করতে হয় অথবা সেভ করতে হয়। এই সম্পূর্ণ কাজ করে শেষ করতে দেখা যায় যে একটি স্ক্রিনশট নেওয়া এবং ক্রপ করার মত ছোট কাজ করতেই ৫ মিনিটের বেশি সময় লেগে যায়।
কিন্তু স্ক্রিনশট নেওয়া এবং একই সাথে ক্রপ করে স্ক্রিনশট নেওয়া বা নির্দিষ্ট এরিয়া সিলেক্ট করে স্ক্রিনশট নেওয়ার জন্য উইন্ডোজের ডিফল্ট আরেকটি প্রোগ্রাম রয়েছে, যার নাম Snipping Tool। এই প্রোগ্রামটি আপনি চোখের সামনেই সবসময় পাবেন না। তাই স্ক্রিনশট নেওয়ার আগে আপনাকে উইন্ডোজ স্টার্ট মেনু থেকে সার্চ করে প্রোগ্রামটি ওপেন করতে হবে। স্টার্ট মেনুর সার্চ বারে Snipping ওয়ার্ডটি লেখার পরেই ওপরে সার্চ রেজাল্টের মধ্যে আপনি প্রোগ্রামটি পেয়ে যাবেন। এরপর প্রোগ্রামটি একটি ছোট ওয়াইড উইন্ডোতে ওপেন হবে
সেখানে থাকা New অপশনটিতে ক্লিক করলেই আপনাকে মাউস কার্সরের সাহায্যে এরিয়া সিলেক্ট করতে বলা হবে যেটুকুর স্ক্রিনশট নিতে চান আপনি। এরপরে এরিয়া সিলেক্ট করার সাথে সাথেই স্ক্রিনশটটি সেভ করার জন্য ডায়লগ বক্স দেওয়া হবে এবং আপনি স্ক্রিনশটটি যেখানে ইচ্ছা সেভ করে ফেলতে পারবেন। এই প্রোগ্রামটিতে থার্ড পার্টি স্ক্রিনশট প্রোগ্রামগুলোর মত অনেক বেশি ফিচারস নেই, তবে হটাত করে কুইকলি স্ক্রিনশট নেওয়ার দরকার হলে এই ডিফল্ট প্রোগ্রামটি বেস্ট।
বিল্ট ইন ইমোজি ইনপুট
উইন্ডোজ পিসি বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন অথচ কোনো টেক্সট ফিল্ডে ইমোজি ইন্টার করা নিয়ে কখনো সমস্যায় পড়েননি এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কারণ, উইন্ডোজ ডিভাইসে আমরা যে ট্রেডিশনাল হার্ডওয়্যার কীবোর্ড ব্যবহার করে টাইপ করি সেখানে ইমোজি ইন্টার করার কোনো অপশন নেই। তাই উইন্ডোজে কোনো টেক্সট ফিল্ডে ইমোজি ইনপুট করতে হলে কোথাও থেকে ইমোজি নিয়ে কপি পেস্ট করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলোনা। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে উইন্ডোজ ১০ এর লেটেস্ট ভার্সন অর্থাৎ ক্রিয়েটরস আপডেট বিল্ট ইন ইমোজি ইনপুট করার অপশন দেওয়া হয়েছে এবং সেটি ফেসবুক, টুইটার এবং যত ওয়েবসাইট আছে বা প্রোগ্রাম আছে সবজায়গাতেই কাজ করে।
সহজ কথায়, উইন্ডোজে যেখানেই কোনোকিছু টাইপ করার জায়গা পাবেন সেখানেই কাজ করবে এটি। এর জন্য আপনাকে শুধুমাত্র টাইপ করার সময় উইন্ডোজ কি এবং ফুল স্টপ কি চাপতে হবে। মানে লেখার সময় কিবোর্ডে উইন্ডোজ লোগো বাটনটি চেপে ধরে রেখে ফুল স্টপ বাটনটি চাপতে হবে। তাহলেই আপনার সামনে ছোট একটি পপআপ উইন্ডো ওপেন হবে যেখানে সব ধরণের ইমোজি থাকবে এবং আপনি সেখান থেকে যেকোনো ইমোজি সিলেক্ট করে টেক্সট ফিল্ডে ইন্টার করতে পারবেন। আপনি চাইলে যে ইমোজি খুঁজছেন সেই ইমোজির নাম লিখে সার্চ করেও ইন্টার কইরতে পারবেন এই পপআপ উইন্ডো থেকে।
তো এই ছিল ৫ টি উইন্ডোজ ১০ ট্রিকস যেগুলো আপনার জানা উচিৎ যদি আপনি উইন্ডোজ ১০ ইউজার হয়ে থাকেন। এমন আরো অনেক ট্রিকস আছে যেগুলো অন্য কোনোদিন আলোচনা করা যাবে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো ধরণের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।
EmoticonEmoticon