ইন্টারনেট খুবই মজার জায়গা। বর্তমানে প্রায় সবারই সবথেকে বড় আনন্দের জায়গা হচ্ছে ইন্টারনেট। এখানে আপনি কি না পাবেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারবেন, বন্ধুবান্ধবের সাথে চ্যাট করতে পারবেন, অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগ পড়তে পারবেন, বিভিন্ন মজার মজার ওয়েবসাইট ভিজিট করে নিজের প্রোডাক্টিভিটিকে বাড়াতে পারবেন, দেশান্তরে থাকা আত্মীয়দের সাথে ভিডিও চ্যাট করতে পারবেন, আপনার ইচ্ছামতো যেকোনো মিউজিক বা ভিডিও বা মুভি বা টিভি সিরিজ ইচ্ছামতো অনলাইনে স্ট্রিম করতে পারবেন, ডাউনলোড, আপলোড সবকিছুই করতে পারবেন। অনলাইন অনেকটাই নিজের আরেকটি দুনিয়ার মতো।
কিন্তু আমরা সবাই প্রায় প্রত্যেকদিনই অনলাইনে অর্থাৎ আমাদের এই ভার্চুয়াল লাইফে অনেক অবৈধ কাজ করে ফেলছি যেগুলো ইন্টারনেটের সব নিয়ম-কানুনকে অমান্য করে এবং যেসব কখনোই আমাদের করা উচিত ছিলোনা। বুঝে হোক বা না বুঝে, এসব কাজ আমরা প্রায় সবাই করে থাকি। আজকে এমন কয়েকটি কাজ নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আমরা সবাই প্রতিনিয়ত অনলাইনে করে থাকি।
টরেন্ট ডাউনলোড
ইন্টারনেটে করা অবৈধ কাজে গুলোর ব্যাপারে বলতে হলে প্রথমেই বলতে হবে টরেন্ট ডাউনলোড এর কথা। টরেন্ট ডাউনলোড আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই করে থাকি। বিশেষ করে যারা গেমার এবং যাদের আনলিমিটেড ইন্টারনেটের সুবিধা রয়েছে, তারা তো বলতে হলে প্রায় সারাক্ষনই টরেন্ট ডাউনলোডের ওপরেই থাকে। টরেন্ট ডাউনলোড অবৈধ নাকি লিগ্যাল, এটা নিয়ে অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীরই কিছু মিস কনসেপশন বা ভুল ধারণা আছে এখনো। অনেকে মনে করেন এটি বৈধ এবং অনেকে মনে করেন এটি অবৈধ। যাইহোক, আজকে টরেন্ট ডাউনলোড নিয়ে এই ভুল ধারণাগুলো ক্লিয়ার করবো আগে। প্রথমত টরেন্ট ডাউনলোড অবৈধ কিনা সেটা নির্ভর করে আপনি টরেন্টের সাহায্যে কি ফাইল বা কি কন্টেন্ট ডাউনলোড করছেন তার ওপরে।
আপনি যদি কপিরাইটেড কন্টেন্ট যেমন কোনো মুভি বা কোনো কপিরাইটেড মিউজিক বা কোনো ক্র্যাক গেম বা এই ধরণের কোনো পেইড জিনিস ফ্রি তে ব্যবহার করার জন্য ডাউনলোড করেন তাহলে সেটি অবৈধ। কিন্তু আপনি যদি টরেন্ট ব্যবহার করে কোনো ফ্রি সফটওয়্যার বা ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার ডাউনলোড করেন বা মোটকথা কোনো ফ্রি কন্টেন্ট ডাউনলোড করেন, সেক্ষেত্রে টরেন্ট ডাউনলোড ১০০% লিগ্যাল। এমনকি অনেক বড় বড় সফটওয়্যার ডেভেলপার তাদের সফটওয়্যারটি ডিস্ট্রিবিউশন করে টরেন্টের সাহায্যে। কারণ টরেন্ট অনেক বেশি রিলায়েবল। যেমন- উবুন্টু। এই ধরণের লিগ্যাল কন্টেন্ট যদি আপনি টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করেন, তাহলে টরেন্ট ১০০% লিগ্যাল। কিন্তু আপনি যদি কোনো কপিরাইটেড কন্টেন্ট ফ্রিতে ব্যবহার করার জন্য ডাউনলোড করেন, তাহলে টরেন্ট অবৈধ। কিন্তু আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন যে কপিরাইটেড কন্টেন্ট ডাউনলোড করলেও কেন কোনো অ্যাকশন নেওয়া হয়না? নেওয়া হয়না কারণ কন্টেন্টটির মালিক খুব বেশি কেয়ার করেনা। অ্যাকশন না নেওয়াটা জাস্ট ডাউনলোডারের সৌভাগ্য বলতে পারেন। কারণ, কন্টেন্টটির মালিক যদি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তাহলে অবশ্যই আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনলাইনে ফেক নেম ব্যবহার করা
হেডিং দেখেই নিশ্চই ধারণা করতে পারছেন যে আমি কি বোঝাতে চেয়েছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই অনলাইনে কোনো সার্ভিসে বা কোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে ইউজার একাউন্ট করার সময় এমন একটি নাম ব্যবহার করে যে নামটি তার আসল নাম না এবং যে নাম ব্যবহার করে কেউ তাকে আইডেন্টিফাই করতে পারবে না কখনোই। নিজের প্রাইভেসি নিশ্চিত করার জন্য এর থেকে ভালো উপায় আর নেই, তাইতো? হ্যা। কিন্তু অনেকেই যেটা জানে না তা হচ্ছে, এই কাজটি করতে একেবারেই অবৈধ এবং অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়াতেই অবৈধ। যেমন, ফেসবুকে আপনি এমন অনেক ইউজার আইডি দেখতে পাবেন যেগুলোর নাম কখনোই ওই ব্যাক্তিটির আসল নাম হতে পারেনা। যেমন- একলা মেয়ে, নীল আকাশের তারা ইত্যাদি ইত্যাদি। আপনি নিশ্চই বুঝেছেন আমি কোন ধরণের ফেক নামের করা বলছি।
এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়াতে আরেক ধরণের ফেক আইডেন্টিটি দেখা যায়, যারা আপনার মতো কোনো মানুষের রিয়্যাল নাম ব্যবহার করে নিজেরা গোপন থেকে আইডি পরিচালনা করে, যেগুলোকে আমরা এক নাম ফেক আইডি বলে চিনি।এই কাজটি হচ্ছে সবথেকে অবৈধ এবং আক্ষরিক অর্থেই আইনত দণ্ডনীয় একটি অপরাধ। আপনি যদি অনলাইনে কখনো কোনো সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার নাম এবং আপনার ছবি ব্যবহার করা এমন কোনো ফেক আইডির সন্ধান পান, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব আইনের সাহায্য নেবেন সেটিকে টেক-ডাউন করার জন্য এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কারণ, এটি অবৈধ এবং সাইবার ক্রাইম বিভাগের মধ্যে পড়ে।
ডার্ক ওয়েব এক্সেস করা
এই বিষয়টি আপনি হয়তো আগে থেকেই জানতেন, এটা বর্তমানে সবাই জানেন যে ডার্ক ওয়েব এক্সেস করা অবৈধ। আপনি যদি ইন্টারনেট সম্পর্কে ভালো খোঁজখবর রাখেন তাহলে খুব সম্ভবত আপনি ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে জানেন এবং হয়তো অনেকবার ঢুকেও দেখেছেন। ডার্ক ওয়েব হচ্ছে আমাদের চোখের সামনে থাকা ভিজিবল ইন্টারনেটের নিচে থাকা ইন্টারনেটের আরেকটি বড় জগৎ যেটি আমাদের দৃশ্যমান ইন্টারনেটের দুনিয়া থেকে আরো অনেকগুন বড়। ইন্টারনেটের অন্ধকার জগৎ বলা হয় একে কারণ, এখানে সেই সব কাজ করা সম্ভব যেগুলো আমাদের দৃশ্যমান ওয়েবে করা সম্ভব না
ডার্ক ওয়েবে আপনি সাধারণ কোনো ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করে ঢুকতেও পারবেন না। ডার্ক ওয়েব এক্সেস করার জন্য আপনার স্পেশাল একটি ব্রাউজার দরকার হবে। এছাড়া ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইটগুলোর ডোমেইনও সাধারণ ওয়েবের থেকে অনেক আলাদা। যেটাই হোক না কেন, ডার্ক ওয়েব এক্সেস করা কখনোই বৈধ না। কারণ, ডার্ক ভেবে আপনি যা যা পাবেন তার ৯৯% জিনিসই ইললিগ্যাল। যেমন- সিরিয়াল কিলার ভাড়া করা, অস্ত্র এবং ড্রাগস কেনাবেচা করা, চাইল্ড পর্ন, হ্যাকিং ইত্যাদি প্রায় সব ধরণের অবৈধ কাজ এখানেই হয়ে থাকে। লিগ্যাল কোনোকিছুর জন্য কেউ ডার্ক ওয়েব এক্সেস করেনা। আপনি যদি শুধুমাত্র এক্সপ্লোর করার জন্য ডার্ক ওয়েব এক্সেস করেন, তাহলে সেটা হয়তো আলোচনাসাপেক্ষে কোনো অপরাধ হিসেবে গণনা নাও করা হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডার্ক ওয়েব এক্সেস করা একটি সাইবার ক্রাইমের মধ্যে পড়ে।
কপিরাইট কন্টেন্ট ব্যবহার করা
ধরুন আপনার কলেজে বা ইউনিভার্সিটিতে একটি মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন জমা দেওয়ার কথা। তো এর জন্য আপনার কিছু পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড দরকার এবং আরো দরকার কিছু টপিক রিলেটেড ইমেজ। আপনি সবকিছুই ঠিকভাবে করলেন এবং ইমেজের জন্য গুগলে গিয়ে আপনার টপিক অনুযায়ী সার্চ করে সার্চ রেজাল্ট থেকে কিছু ইমেজ ডাউনলোড করে স্লাইডে বসিয়ে দিলেন। কিন্তু আপনি হয়তো জানেনও না যে এই যে কাজটি আপনি করলেন সেটি অবৈধ। কারণ ইন্টারনেটে আমরা যত ছবি বা ইমেজ দেখি, তার মধ্যে অধিকাংশ ইমেজ কপিরাইট প্রটেক্টেড। তাই এভাবে আপনি অনলাইনে যেকারো কন্টেন্ট নিয়ে নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতে পারেন না।
আপনি যদি কারো তৈরী কোনো ইমেজ বা যেকোনো ধরণের কন্টেন্ট নিজের কোনো কাজে ব্যবহার করতে চান, তাহলে আপনাকে প্রথমে কন্টেন্টটির মালিকের কাছ থেকে সেটি ব্যবহারের পারমিশন নিতে হবে। যদি পারমিশন পান, তখনই ব্যবহার করতে পারবেন কন্টেন্টটি। এছাড়া আপনি যদি কোনো কপিরাইট কন্টেন্ট ব্যবহার করতে চান, তাহলে আপনাকে একটি ব্যাপার জানতে হবে তা হচ্ছে ” ফেয়ার ইউজ “। যদি আপনার ব্যবহার কন্টেন্টটির ফেয়ার ইউজ পলিসির ভেতরে পড়ে, তাহলেই আপনি কন্টেন্টটি ব্যবহার করার অধিকার পাবেন। এছাড়া আপনি ইন্টারনেটে অনেক কপিরাইটফ্রি বা স্টক ইমেজ এবং ভিডিওও পাবেন যেগুলো আপনি কোনো ধরণের চিন্তা বাদ দিয়েই ব্যবহার করতে পারবেন। আর অনেকসময় কারো কপিরাইট কন্টেন্ট অনালাইনে আপনার কোনো কাজে ব্যবহার করার জন্য আপনাকে মালিকের ক্রেডিট দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তখন অবশ্যই মালিকের ক্রেডিট দেবেন। অন্যথায় এই ধরণের সব নিয়ম-কানুন না মানলে কন্টেন্টটির মালিক যদি আপনার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেয়, তখন আপনার কিছুই করার থাকবেনা।
পাসওয়ার্ড শেয়ারিং
এই কাজটি সম্ভবত অনেকেই করে থাকে প্রতিনিয়ত। আপনার বিভিন্ন অনলাইন একাউন্ট এর লগইন এবং পাসওয়ার্ড ইনফরমেশন হয়তো আপনি আপনার অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ডের সাথে শেয়ার করেছেন এঁবং তাদের ইউজার একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনিও লগইন করেছেন। কারোর কাছেই এটা তেমন বড় কোনো ব্যাপার না, তাইতো? হ্যা। বাংলাদেশের গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড এর মধ্যে ফেসবুক পাসওয়ার্ড শেয়ারিং তো খুবই সাধারণ ব্যাপার এখন। তবে এই কাজটি অবৈধ। আপনার ইউজার একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড, সেটি যে ইউজার একাউন্টই হোক না কেন, সেটি একেবারেই আপনার একান্ত ব্যাক্তিগত ইনফরমেশন। সেটি অন্য কারো সাথে শেয়ার করার অধিকার আপনাকে দেওয়া হয়নি। এবং এই অত্যাধিক পাসওয়ার্ড শেয়ারিং অনলাইন একাউন্ট হ্যাক বা টু বি এক্সাক্ট, চুরি হওয়ার জন্য অন্যতম একটি কারণ। আর এছাড়া যেসব অনলাইন সার্ভিস পেইড সাবস্ক্রিপশন অফার করে, সেসব সার্ভিসের নিজের ইউজার একাউন্ট এর পাসওয়ার্ড অন্য কারো সাথে শেয়ার করলে, ওয়েবসাইট কর্পোরেশন আপনার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও অধিকার রাখে।
তো এই ছিল কয়েকটি অবৈধ কাজ যেগুলো আমরা প্রায় প্রত্যেকদিনই করে থাকি। শুধু এই কয়েকটি নয়, এমন আরো অনেক অবৈধ কাজ আছে যেগুলো আমরা কিছু না ভেবেই করতে থাকি প্রতিনিয়ত। আপনিও করেছেন, আমিও করেছি এবং আমরা সবাই করি। আর এসব অবৈধ কাজ করার জন্য আপনার বা আমার বিরুদ্ধে এখনো কোনো অ্যাকশন নেওয়া হয়নি বলে ভবিষ্যতেও কোনো অ্যাকশন নেওয়া হবেনা এমনটা ভাবারও কোনো কারণ নেই। এবং আমি বলেছি বলে বা আপনি কোনোভাবে জানতে পেরেছেন যে এগুলো অবৈধ কাজ তাই বলে যে আপনি এই সবকিছু করা বন্ধ করে দেবেন এমনটাও না হয়তো। কিন্তু এই কাজগুলো যে অবৈধ, এই ফ্যাক্টটি জেনে রাখা অবশ্যই উচিত। মূলত এই কারণেই আজকের আর্টিকেলটি লেখা।
যাইহোক, আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটিও আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো ধরণের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন। ধন্যবাদ। 🙂
EmoticonEmoticon