শুরু’র দিকে সেলফোন নিয়ে আমাদের চাহিদা আলাদা ছিল কিন্তু বর্তমানের চাহিদা শুরুর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথমে তো শুধু কল করেই সেলফোন থেকে আমরা সাটিস্ফাইড ছিলাম, কিন্তু তারপরে আসলো ম্যাসেজিং সুবিধা এবং পরে আমাদের দরকার পড়লো ইন্টারনেট। শুধু ইন্টারনেট নয়, কিছু সময় পরে সেলফোনে আমরা ডিম্যান্ড করলাম ব্রডব্যান্ড লেভেল ইন্টারনেট। তাই ৩.৫জি টেকনোলজি প্রথম আমাদের মোবাইল ব্রডব্যান্ড টেকনোলজি’র সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। যদিও গোটা পৃথিবী এখন ৪জি’র সুবিধা গুলো ভোগ করছে, আর ৫জি টেকনোলজি তো খুব দ্রুতই আসতে চলেছে। ৪জি; যেটাকে হাই স্পীড মোবাইল ব্রডব্যান্ড বলা হয়, আর আমাদের দেশেও সেটা বর্তমানে চালু হয়ে গিয়েছে! তাই ভাবলাম, আজকের আর্টিকেলে ৪জি’র সুবিধা অসুবিধা গুলো এবং আরো নানান কম প্রশ্ন গুলোর উত্তর নিয়ে আলোচনা করা যাক…
৪জি
দেখুন ৪জি নাম দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার মতো কিছু নেই, ৩জি নামের সিরিয়ালের পরে এটি চতুর্থ জেনারেশনের সেলফোন নেটওয়ার্ক টেকনোলজি। যেখানে ৩জি কেবল ২মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্তই ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারে,সেখানে ৪জি ৫০-১০০ মেগাবিট/সেকেন্ডে ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারে। তবে বর্তমানে কি ৪জি ব্রডব্যান্ড প্রভাইডার তাদের স্পীড’কে বুস্ট করে ১গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছে—যেটা আপনার বাড়ির ব্রডব্যান্ড কানেক্টেড ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক থেকেও বেশি ফাস্ট তাই না?
তো ৪জি কেন এতো ফাস্ট? —৪জি এতো ফাস্ট হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে এর কানেক্টিভিটি সিস্টেম এবং উন্নত অ্যালগরিদম। এটি নেটওয়ার্ক রেডিও ওয়েভের মধ্যে আলাদা আলাদা ফ্রিকুয়েন্সি চ্যানেল তৈরি করে আলাদা আলাদা চ্যানেলে আলাদা আলাদা টাইপের ডাটা সেন্ড করে। ধরুন এক চ্যানেল শুধু কল নিয়ে যায়, আরেক চ্যানেল ইন্টারনেট নিয়ে যায়। তাছাড়া ৪জি নেটওয়ার্কে ডাটা প্যাকেট গুলোকে আরো উন্নত অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এনকোড করা হয়, ফলে প্যাকেট গুলো একে অপরের থেকে মুক্ত হয়ে নেটওয়ার্কে প্রবাহিত হতে পারে, ফলে স্পীড অনেক বেশি পাওয়া যায়, কেনোনা এতে প্যাকেট গুলো কোথাও বাঁধা প্রাপ্ত না।
৪জি কিন্তু আলাদা আলাদা টেক ব্যবহার করে প্রভাইড করা হয়। কোন কোন অপারেটর ওয়াইম্যাক্স টেক ব্যবহার করে আবার অনেক অপারেটর এলটিই টেক ব্যবহার করে ৪জি নেটওয়ার্ক প্রভাইড করে। এই জন্যই দেখবেন, আমাদের দেশে বাংলা-লায়ন ওয়াইমাক্স অনেক দিন আগে থেকেই নিজেকে ৪জি বলে বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে। হ্যাঁ, সত্যিই তাদের টেকনোলজি ৪জি লেভেলের। ওয়াইমাক্স টেকনোলজি অনেকটা ওয়াইফাই টেকের মতো কাজ করে। এটি 802.16m প্রোটোকলের উপর কাজ করে। অনুমান করুণ ওয়াইফাই হটস্পটের কথা যেটা আপনার রাউটারের মাধ্যমে তৈরি করে আপনি হোম নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। ওয়াইমাক্স অনেকটা একই স্টাইলের নেটওয়ার্ক প্রদান করে, কিন্তু এক্ষেত্রে ওয়াইমাক্সের রেঞ্জ ওয়াইফাই থেকে বেশি হয় এবং ওয়াইমাক্স ওয়েভ কম গণ্ডগোল পাকায়। আপনি ওয়াইমাক্স ষ্টেশন থেকে যতো কম দূরত্বে থাকবেন, আপনি ততোই ভালো স্পীড পেতে পারবেন।
এলটিই টেকনোলজি ওয়াইমাক্স থেকেও বিস্তর ব্যবহৃত হয়। ওয়াইফাই আর ওয়াইমাক্স যেখানে মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক প্রদান করে সেখানে এলটিই রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে কাজ করে। মাইক্রোওয়েভ থেকে রেডিও ওয়েভ অনেক দূর পর্যন্ত ভ্রমন করতে পারে, তাই এলটিই টেক ৪জি অনেকবেশি রেঞ্জ প্রদান করতে পারে, আর এর স্পীড ১গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব—যেখানে ওয়াইমাক্স ৩মেগাবিট/সেকেন্ড – ৬মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড দিতে পারে। সাথে আগেই বলেছি এলটিই টেক একসাথে অনেক গুলো রেডিও ব্যান্ড ব্যবহার করে কাজ করে। ডাউনলোডের জন্য আলাদা সিগন্যাল আর আপলোডের জন্য আলাদা সিগন্যাল এবং কলিং এর জন্য আলাদা সিগন্যালের উপর কাজ করে। এলটিই টেক ৫জি থেকে সামান্য একটু পিছিয়ে!
৪জি নেটওয়ার্কের সুবিধা
অবশ্যই ৪জি নেটওয়ার্কের সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে এর স্পীড। মোবাইল ডিভাইজে আপনি ব্রডব্যান্ড লেভেলের স্পীড পেতে পারবেন এবং স্পীড বললে ভুল হবে, আলট্রা-হাই-স্পীড বলতে পারেন। মোবাইল ডিভাইজের জন্য ১গিগাবিট/সেকেন্ড যথেষ্ট স্পীড। হাই ব্যান্ডউইথ স্পীড ইন্টারনেট ব্যবহার করার অনেক সুবিধা রয়েছে, বিশেষ করে একসাথে অনেক টাস্ক কমপ্লিট করতে পারবেন। কারো সাথে ভিডিও চ্যাট করতে পারবেন সাথে সেই সময়েই ফাইল ডাউনলোড চলবে আর ফেসবুকে ফটো আপলোডিং তো চলবেই, আর এসব কিছু করার সময় আপনি সাধারণ ৪জি কলও নিতে পারবেন, এতে ইন্টারনেট কানেকশনের কোনই সমস্যা হবে না। কেনোনা ৪জি সকল কাজ গুলোকে ভাগ করে আলাদা আলাদা ব্যান্ডে ট্র্যান্সফার করে।
তাছাড়া ৪জি নেটওয়ার্ক বা এলটিই টেকনোলজি সাধারণ ওয়াইফাই/ওয়াইমাক্স থেকে অনেকবেশি রেঞ্জ প্রদান করতে পারে। ৪জি যেহেতু রেডিও ওয়েভের উপর কাজ করে, তাই এর রেডিও রিকুয়েন্সি লেন্থ অনেক লম্বা হয়। স্টেশন থেকে ৩০ মাইল দূর পর্যন্ত ৪জি সিগন্যাল পাঠানো সম্ভব। আর আপনি যদি একটু ভালো ৪জি সিগন্যাল পেয়ে যান সেক্ষেত্রে ৪জি’র সকল কাজ গুলোকে আরামে করতে পারবেন।
ওয়াইফাই/ওয়াইমাক্স টেকের সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে সিকিউরিটি। যদিও ওয়াইফাই বর্তমানে অনেক স্ট্রং স্ট্যান্ডার্ড সিকিউরিটি প্রোটোকল ব্যবহার করে, কিন্তু তারপরেও ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ক্র্যাক করা পসিবল (নিজের ওয়াইফাই নিজেই হ্যাক করুণ!)। ৪জি নেটওয়ার্কে এন্টারপ্রাইজ লেভেলের সিকিউরিটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং আলাদা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ডাটা প্যাকেট গুলোকে এনকোড করা হয়, ফলে এর সিকিউরিটি ব্যবস্থা অনেক টাইট!
৪জি নেটওয়ার্কের অসুবিধা
রেডিও ওয়েভের মধ্যদিয়ে যখন হাই ব্যান্ডউইথ স্পীডে ডাটা আদান প্রদান করার চিন্তা করা হবে তখন অবশ্যই রেডিও ওয়েভের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ছোট করতে হবে। ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ব্যবহার করে স্পীড বৃদ্ধি করা যাবে, কিন্তু রেঞ্জ কমে যাবে। যদিও এলটিই টেক অনেক ভালো রেঞ্জ প্রদান করে, তারপরেও এটি বর্তমান ৩জি বা আগের ২জি থেকে কম রেঞ্জ প্রদান করতে সক্ষম। রেঞ্জ বাড়ানোর জন্য অবশ্যই আরোবেশি টাওয়ার ইন্সটল করা প্রয়োজনীয় হবে। গ্রাম অঞ্চলে ৪জি নেটওয়ার্ক সিগন্যালের সমস্যা হতে পারে।
যেহেতু ৪জি টেকনোলজি এখনো সম্পূর্ণ নতুন এবং গোটা পৃথিবী’তে লেটেস্ট টেক, তাই এতে কিছু সিস্টেম বাগ (BUG) থাকতে পারে। মোবাইল ইউজার অঝথা প্রবলেমের শিকার হয়ে যেতে পারে, আর অপারেটর তাদের এই নেটওয়ার্ক বাগ ফিক্স না করা পর্যন্ত সমস্যা থেকেই যেতে পারে। সাথে ৪জি টেকে একসাথে অনেক গুলো এন্টেনা এবং ট্র্যান্সমিটারের ব্যবহার করা হয়, এতে মোবাইলের ব্যাটারি লাইফ আগের চেয়ে অনেকবেশি ড্রেইন হবে। আপনাকে অনলাইনে থাকার জন্য অনেকবার আরো বেশি বেশি ব্যাটারি রিচার্জ করার প্রয়োজন পড়বে।
বর্তমানে আমাদের দেশে ডাটা’র যে পরিমানে দাম! ৪জি আসার পরে যদি ডাটা প্যাকের দাম কমানো না হয় তো ৪জি আমাদের জন্য তেমন একটা লাভবান বলে প্রমানিত হবে না। ৪জি’তে ডাটা আরো দ্রুত ফুরিয়ে যাবে, কেনোনা অনেক হাই স্পীড ইন্টারনেট রয়েছে এই টেকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতি গিগাবাইটে ডাটার দাম কমাতে হবে।
৪জি ব্যবহার করতে স্পেশাল ৪জি সিমের প্রয়োজন রয়েছে কি?
এটি বর্তমানে একটি অত্যন্ত কমন প্রশ্ন, ইতি মধ্যেই বাংলাদেশে ৪জি সেবা চালু হয়ে গিয়েছে, আর মোবাইল অপারেটর’রা বারবার টিভিতে অ্যাড দিয়ে ৪জি সিমে আপগ্রেড করার জন্য বলছে, অবশ্যই আপগ্রেড প্রসেস ফ্রী নয়, তাই সত্যই কি আপনার ডেডিকেটেড ৪জি সিম আপগ্রেড করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? দেখুন, প্রশ্নটির সহজ উত্তর হচ্ছে, “না”, আপনার আপগ্রেড করার প্রয়োজনীয়তা নেই! অবশ্যই আপনার বর্তমান সিমে আপনি ৩জি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার সিমটি একটি ইউসিম, এর মানে আপনার সিমটি অলরেডি ৪জি রেডি। তাই আপনাকে নতুন করে ৪জি সিম কেনার কোনই দরকার নেই।
তবে হ্যাঁ, যদি আপনি ২জির আমল থেকে একই সিম ব্যবহার করে আসেন, আর ৩জিও হয়তো ব্যবহার করেন নি, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সিমটি পরিবর্তন করতে হবে। তবে আগেই বলেছি, সকল ৩জি সিম গুলো আগে থেকেই ইউসিম, আর এর মানে আপনার সিম অলরেডি ৪জি রেডি। তবে হ্যাঁ, সিমের গায়ে যদি ৪জি লগো পেতে চান, সেক্ষেত্রে তো আপগ্রেড করতেই হবে! তো, কি বুঝলেন? সিমের চিন্তা বাদ দিন, ৪জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ৪জি এরিয়াতে থাকতে হবে এবং অবশ্যই আপনার ফোনটিতে ৪জি সমর্থন করতে হবে।
সম্পূর্ণ পৃথিবী জুড়ে ৪জি বর্তমানে সবচাইতে লেটেস্ট এবং জনপ্রিয় মোবাইল ব্রডব্যান্ড সলিউশন। এটি অনেক হাই স্পীড ব্যান্ডউইথ রেট প্রদান করে, আর হাই স্পীড ইন্টারনেট কেই বা অপছন্দ করে বলুন? খুব দ্রুত হয়তো আমরাও এই সুবিধা উপভোগ করতে আরম্ভ করবো, আর তখন এই টেকনোলজির সাথে রিয়াল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স করা যাবে।
৪জি
দেখুন ৪জি নাম দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার মতো কিছু নেই, ৩জি নামের সিরিয়ালের পরে এটি চতুর্থ জেনারেশনের সেলফোন নেটওয়ার্ক টেকনোলজি। যেখানে ৩জি কেবল ২মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্তই ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারে,সেখানে ৪জি ৫০-১০০ মেগাবিট/সেকেন্ডে ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারে। তবে বর্তমানে কি ৪জি ব্রডব্যান্ড প্রভাইডার তাদের স্পীড’কে বুস্ট করে ১গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছে—যেটা আপনার বাড়ির ব্রডব্যান্ড কানেক্টেড ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক থেকেও বেশি ফাস্ট তাই না?
তো ৪জি কেন এতো ফাস্ট? —৪জি এতো ফাস্ট হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে এর কানেক্টিভিটি সিস্টেম এবং উন্নত অ্যালগরিদম। এটি নেটওয়ার্ক রেডিও ওয়েভের মধ্যে আলাদা আলাদা ফ্রিকুয়েন্সি চ্যানেল তৈরি করে আলাদা আলাদা চ্যানেলে আলাদা আলাদা টাইপের ডাটা সেন্ড করে। ধরুন এক চ্যানেল শুধু কল নিয়ে যায়, আরেক চ্যানেল ইন্টারনেট নিয়ে যায়। তাছাড়া ৪জি নেটওয়ার্কে ডাটা প্যাকেট গুলোকে আরো উন্নত অ্যালগরিদম ব্যবহার করে এনকোড করা হয়, ফলে প্যাকেট গুলো একে অপরের থেকে মুক্ত হয়ে নেটওয়ার্কে প্রবাহিত হতে পারে, ফলে স্পীড অনেক বেশি পাওয়া যায়, কেনোনা এতে প্যাকেট গুলো কোথাও বাঁধা প্রাপ্ত না।
৪জি কিন্তু আলাদা আলাদা টেক ব্যবহার করে প্রভাইড করা হয়। কোন কোন অপারেটর ওয়াইম্যাক্স টেক ব্যবহার করে আবার অনেক অপারেটর এলটিই টেক ব্যবহার করে ৪জি নেটওয়ার্ক প্রভাইড করে। এই জন্যই দেখবেন, আমাদের দেশে বাংলা-লায়ন ওয়াইমাক্স অনেক দিন আগে থেকেই নিজেকে ৪জি বলে বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছে। হ্যাঁ, সত্যিই তাদের টেকনোলজি ৪জি লেভেলের। ওয়াইমাক্স টেকনোলজি অনেকটা ওয়াইফাই টেকের মতো কাজ করে। এটি 802.16m প্রোটোকলের উপর কাজ করে। অনুমান করুণ ওয়াইফাই হটস্পটের কথা যেটা আপনার রাউটারের মাধ্যমে তৈরি করে আপনি হোম নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। ওয়াইমাক্স অনেকটা একই স্টাইলের নেটওয়ার্ক প্রদান করে, কিন্তু এক্ষেত্রে ওয়াইমাক্সের রেঞ্জ ওয়াইফাই থেকে বেশি হয় এবং ওয়াইমাক্স ওয়েভ কম গণ্ডগোল পাকায়। আপনি ওয়াইমাক্স ষ্টেশন থেকে যতো কম দূরত্বে থাকবেন, আপনি ততোই ভালো স্পীড পেতে পারবেন।
এলটিই টেকনোলজি ওয়াইমাক্স থেকেও বিস্তর ব্যবহৃত হয়। ওয়াইফাই আর ওয়াইমাক্স যেখানে মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক প্রদান করে সেখানে এলটিই রেডিও ওয়েভ ব্যবহার করে কাজ করে। মাইক্রোওয়েভ থেকে রেডিও ওয়েভ অনেক দূর পর্যন্ত ভ্রমন করতে পারে, তাই এলটিই টেক ৪জি অনেকবেশি রেঞ্জ প্রদান করতে পারে, আর এর স্পীড ১গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব—যেখানে ওয়াইমাক্স ৩মেগাবিট/সেকেন্ড – ৬মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড দিতে পারে। সাথে আগেই বলেছি এলটিই টেক একসাথে অনেক গুলো রেডিও ব্যান্ড ব্যবহার করে কাজ করে। ডাউনলোডের জন্য আলাদা সিগন্যাল আর আপলোডের জন্য আলাদা সিগন্যাল এবং কলিং এর জন্য আলাদা সিগন্যালের উপর কাজ করে। এলটিই টেক ৫জি থেকে সামান্য একটু পিছিয়ে!
৪জি নেটওয়ার্কের সুবিধা
অবশ্যই ৪জি নেটওয়ার্কের সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে এর স্পীড। মোবাইল ডিভাইজে আপনি ব্রডব্যান্ড লেভেলের স্পীড পেতে পারবেন এবং স্পীড বললে ভুল হবে, আলট্রা-হাই-স্পীড বলতে পারেন। মোবাইল ডিভাইজের জন্য ১গিগাবিট/সেকেন্ড যথেষ্ট স্পীড। হাই ব্যান্ডউইথ স্পীড ইন্টারনেট ব্যবহার করার অনেক সুবিধা রয়েছে, বিশেষ করে একসাথে অনেক টাস্ক কমপ্লিট করতে পারবেন। কারো সাথে ভিডিও চ্যাট করতে পারবেন সাথে সেই সময়েই ফাইল ডাউনলোড চলবে আর ফেসবুকে ফটো আপলোডিং তো চলবেই, আর এসব কিছু করার সময় আপনি সাধারণ ৪জি কলও নিতে পারবেন, এতে ইন্টারনেট কানেকশনের কোনই সমস্যা হবে না। কেনোনা ৪জি সকল কাজ গুলোকে ভাগ করে আলাদা আলাদা ব্যান্ডে ট্র্যান্সফার করে।
তাছাড়া ৪জি নেটওয়ার্ক বা এলটিই টেকনোলজি সাধারণ ওয়াইফাই/ওয়াইমাক্স থেকে অনেকবেশি রেঞ্জ প্রদান করতে পারে। ৪জি যেহেতু রেডিও ওয়েভের উপর কাজ করে, তাই এর রেডিও রিকুয়েন্সি লেন্থ অনেক লম্বা হয়। স্টেশন থেকে ৩০ মাইল দূর পর্যন্ত ৪জি সিগন্যাল পাঠানো সম্ভব। আর আপনি যদি একটু ভালো ৪জি সিগন্যাল পেয়ে যান সেক্ষেত্রে ৪জি’র সকল কাজ গুলোকে আরামে করতে পারবেন।
ওয়াইফাই/ওয়াইমাক্স টেকের সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে সিকিউরিটি। যদিও ওয়াইফাই বর্তমানে অনেক স্ট্রং স্ট্যান্ডার্ড সিকিউরিটি প্রোটোকল ব্যবহার করে, কিন্তু তারপরেও ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ক্র্যাক করা পসিবল (নিজের ওয়াইফাই নিজেই হ্যাক করুণ!)। ৪জি নেটওয়ার্কে এন্টারপ্রাইজ লেভেলের সিকিউরিটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং আলাদা অ্যালগরিদম ব্যবহার করে ডাটা প্যাকেট গুলোকে এনকোড করা হয়, ফলে এর সিকিউরিটি ব্যবস্থা অনেক টাইট!
৪জি নেটওয়ার্কের অসুবিধা
রেডিও ওয়েভের মধ্যদিয়ে যখন হাই ব্যান্ডউইথ স্পীডে ডাটা আদান প্রদান করার চিন্তা করা হবে তখন অবশ্যই রেডিও ওয়েভের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ছোট করতে হবে। ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ব্যবহার করে স্পীড বৃদ্ধি করা যাবে, কিন্তু রেঞ্জ কমে যাবে। যদিও এলটিই টেক অনেক ভালো রেঞ্জ প্রদান করে, তারপরেও এটি বর্তমান ৩জি বা আগের ২জি থেকে কম রেঞ্জ প্রদান করতে সক্ষম। রেঞ্জ বাড়ানোর জন্য অবশ্যই আরোবেশি টাওয়ার ইন্সটল করা প্রয়োজনীয় হবে। গ্রাম অঞ্চলে ৪জি নেটওয়ার্ক সিগন্যালের সমস্যা হতে পারে।
যেহেতু ৪জি টেকনোলজি এখনো সম্পূর্ণ নতুন এবং গোটা পৃথিবী’তে লেটেস্ট টেক, তাই এতে কিছু সিস্টেম বাগ (BUG) থাকতে পারে। মোবাইল ইউজার অঝথা প্রবলেমের শিকার হয়ে যেতে পারে, আর অপারেটর তাদের এই নেটওয়ার্ক বাগ ফিক্স না করা পর্যন্ত সমস্যা থেকেই যেতে পারে। সাথে ৪জি টেকে একসাথে অনেক গুলো এন্টেনা এবং ট্র্যান্সমিটারের ব্যবহার করা হয়, এতে মোবাইলের ব্যাটারি লাইফ আগের চেয়ে অনেকবেশি ড্রেইন হবে। আপনাকে অনলাইনে থাকার জন্য অনেকবার আরো বেশি বেশি ব্যাটারি রিচার্জ করার প্রয়োজন পড়বে।
বর্তমানে আমাদের দেশে ডাটা’র যে পরিমানে দাম! ৪জি আসার পরে যদি ডাটা প্যাকের দাম কমানো না হয় তো ৪জি আমাদের জন্য তেমন একটা লাভবান বলে প্রমানিত হবে না। ৪জি’তে ডাটা আরো দ্রুত ফুরিয়ে যাবে, কেনোনা অনেক হাই স্পীড ইন্টারনেট রয়েছে এই টেকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতি গিগাবাইটে ডাটার দাম কমাতে হবে।
৪জি ব্যবহার করতে স্পেশাল ৪জি সিমের প্রয়োজন রয়েছে কি?
এটি বর্তমানে একটি অত্যন্ত কমন প্রশ্ন, ইতি মধ্যেই বাংলাদেশে ৪জি সেবা চালু হয়ে গিয়েছে, আর মোবাইল অপারেটর’রা বারবার টিভিতে অ্যাড দিয়ে ৪জি সিমে আপগ্রেড করার জন্য বলছে, অবশ্যই আপগ্রেড প্রসেস ফ্রী নয়, তাই সত্যই কি আপনার ডেডিকেটেড ৪জি সিম আপগ্রেড করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে? দেখুন, প্রশ্নটির সহজ উত্তর হচ্ছে, “না”, আপনার আপগ্রেড করার প্রয়োজনীয়তা নেই! অবশ্যই আপনার বর্তমান সিমে আপনি ৩জি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার সিমটি একটি ইউসিম, এর মানে আপনার সিমটি অলরেডি ৪জি রেডি। তাই আপনাকে নতুন করে ৪জি সিম কেনার কোনই দরকার নেই।
তবে হ্যাঁ, যদি আপনি ২জির আমল থেকে একই সিম ব্যবহার করে আসেন, আর ৩জিও হয়তো ব্যবহার করেন নি, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সিমটি পরিবর্তন করতে হবে। তবে আগেই বলেছি, সকল ৩জি সিম গুলো আগে থেকেই ইউসিম, আর এর মানে আপনার সিম অলরেডি ৪জি রেডি। তবে হ্যাঁ, সিমের গায়ে যদি ৪জি লগো পেতে চান, সেক্ষেত্রে তো আপগ্রেড করতেই হবে! তো, কি বুঝলেন? সিমের চিন্তা বাদ দিন, ৪জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ৪জি এরিয়াতে থাকতে হবে এবং অবশ্যই আপনার ফোনটিতে ৪জি সমর্থন করতে হবে।
সম্পূর্ণ পৃথিবী জুড়ে ৪জি বর্তমানে সবচাইতে লেটেস্ট এবং জনপ্রিয় মোবাইল ব্রডব্যান্ড সলিউশন। এটি অনেক হাই স্পীড ব্যান্ডউইথ রেট প্রদান করে, আর হাই স্পীড ইন্টারনেট কেই বা অপছন্দ করে বলুন? খুব দ্রুত হয়তো আমরাও এই সুবিধা উপভোগ করতে আরম্ভ করবো, আর তখন এই টেকনোলজির সাথে রিয়াল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স করা যাবে।
EmoticonEmoticon