বর্তমান সময়ে ফটোগ্রাফী জনপ্রিয়তার অন্যতম শীর্ষে রয়েছে স্মার্টফোন ফটোগ্রাফী। ফেসবুকে স্মার্টফোন ফটোগ্রাফী বিষয়ক বহু গ্রুপ এর দেখা পাওয়া যায়, যেখানে মানুষ তাদের ব্যাক্তিগত স্মার্টফোনে দারুন দারুন সব ছবি ক্যাপচার করে তা এসব গ্রুপে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দেয়। স্মার্টফোন ফটোগ্রাফীর ব্যাপক জনপ্রিয়তার মূল কারন সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। ফটোগ্রাফীর ওপর একটু ঝোক ও ফটোগ্রাফী কি তার সাধারন ধারনা থাকলেই, কেবল স্মার্টফোন দিয়েই দারুন সব ফটোগ্রাফী স্টোরি কাভার করা যায়।
স্মার্টফোন ফটোগ্রাফীর কথা বলতে গেলে, আমাদের ছবির কালার ক্যাপচারিটি, ছবির গভীরত্ব সহ আরো অনেক কিছু হয়ত একটি প্রোফেশনাল ডিএসএলআর ক্যামেরার মত কখনই হয় না। তবে ছবি তোলার ক্ষেত্রে একটু যত্নশীল হলেই স্মার্টফোন দিয়েই অসাধারন সব দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করা সম্ভব।
স্মার্টফোন ক্যামেরা লেন্স
আজ কথা বলব স্মার্টফোন ক্যামেরা লেন্স নিয়ে। বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে, অনেকেরই আকর্ষন থাকে, স্মার্টফোনের জন্য বাজারে পাওয়া বিভিন্ন পোর্টেবল লেন্স নিয়ে। আগেই বলে রাখি, এসব পোর্টেবল স্মার্টফোন ক্যামেরা লেন্স, প্রোফেশনাল ডিএসএলআর ক্যামেরা লেন্স এর মত না হলেও, স্মার্টফোন ফটোগ্রাফীতে এক নতুন মাত্রা নিয়ে আসতে সক্ষম। প্রথমত, বাজারে গখন সচরাচর ছোট ছোট স্মার্টফোনের জন্য ক্লিপ লেন্স পাওয়া যায়। আর এগুলো খুবই হ্যান্ডী, সহজে বহনযোগ্য আর দামও খুব একটা বেশি না।
এসব ছোট ছোট পোর্টেবল লেন্স বা ক্লিপ লেন্স মূলত তিনরকমের হয়ে থাকে। এগুলো হলঃ ম্যাক্রো লেন্স, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স ও ফিশ আই লেন্স।
ম্যাক্রো লেন্সঃ ক্লিপ লেন্স এর ভেতর সবচাইতে জনপ্রিয় যে লেন্সটি তার নাম হল ম্যাক্রো লেন্স। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে আপনি লক্ষ্য করবেন ২-৩ সেন্টিমিটার সামনের কোনো অবজেক্টকে ফোকাস করা একেবারেই অসম্ভব একটি ব্যাপার। ডিএসএলআর দিয়েও অনেক সময় এত ক্ষুদ্র জিনিস ক্যাপচার করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।তবে স্মার্টফোনে ম্যাক্রো লেন্স ব্যবহার করে এই কাজ খুবই সহজে এবং পুরোদমে প্রোফেশনালী করা সম্ভব হয়। এখানে ম্যাক্রো লেন্সের কিছু ফটো স্যাম্পল দেখে হয়ত আপনি এই লেন্স সম্পর্কে আরও ধারনা পাবেন। ম্যাক্রো লেন্সে যা করা যায়, তা সাধারনত খালি ক্যামেরায় তোলা সম্ভব হয়না।
ফিশ আই লেন্সঃ এটি বলতে গেলে আপনার ক্যামেরাকে একটি মাছের চোখ বানিয়ে দেবে। আপনি জানেন হয়ত, মাছের চোখ তার আসে পাশে প্রায় ১৮০ ডিগ্রী সব দেখতে পারে। তাই এই লেন্স স্মার্টফোনে লাগিয়ে ছবি তুললে আপনার সামনের ১৮০ ডিগ্রী হয়ত আপনি ফ্রেমবন্দী করতে পারবেন। ফিশ আই লেন্স যতটা ভালো হবে, ছবির মান ততটা প্রোফেশনাল হবে।
ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সঃ আপনার সামনের কোনো দৃশ্যে আপনি যদি আরও একটু বেশি প্রসস্থ জুড়ে ক্যাপচার করতে চান, তবে আপনার জন্য এইরকম ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স। এসব লেন্স দিয়ে ছবি তুললে ছবি আরো একটু বেশি ওয়াইড সম্পন্ন হয় এবং ছবির মানটা ভালো আসে। মূলত ক্লিপ লেন্স সেটের ভেতর ম্যাক্রো এবং ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্সই সবার পছন্দ।
স্মার্টফোনে ডিএসএলআর এর মত ফটোগ্রাফী
অনেকেরই প্রশ্ন থাকে, স্মার্টফোনে কোন লেন্স ব্যবহার করে ডিএসএলআর এর মত ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লারি ছবি ক্যাপচার করা যায়? এর উত্তর হল টেলিফোটো লেন্স। অনেক নিম্ন মানের ক্লিপ লেন্সের মত ছোট ছোট টেলিফোটো লেন্স পাওয়া যায়, যা থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। এতে করে অনেকের স্মার্টফোন লেন্সের প্রতি একটি ভুল ধারনার সৃষ্টি হয়। তবে আপনি যদি একটি ভালো মানের একটি স্মার্টফোন প্রোফেশনাল টেলিফোটো লেন্স খুঁজে বের করে, তা যথাযথ ভাবে ব্যবহার করতে পারেন, তবে আপনি আশানুরূপ ফলাফল পাবেন। এখানে দেয়া ছবি দেখে আপনি ধারনা পাবেন ; এখানে শাওমি নোট ৪এক্স এর ১৩ মেগাপিক্সেল ক্যামেরার সাথে YOTTA 4x-12x Zoom টেলিফোটো লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। YOTTA 4x-12x Zoom এই প্রোপেশনাল টেলিফোটো স্মার্টফোন লেন্স ব্যবহার করে আমি যে ছবি পেয়েছি ;তা ডিএসএলআর এর সাথে তুলনা করলে পার্থক্য খুজে নাও পেতে পারেন প্রথম-প্রথম।
স্মার্টফোন ক্যামেরার ফোকাস এবং লেন্সের ম্যানুয়াল ফোকাস মিলে, ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার সহ অবজেক্টকে দারুন ভাবে ফোকাস করা গিয়েছে। এসব এর সাথে আসা ইউনিভার্সাল মাউন্ট-ক্লিপ স্মার্টফোনের সাথে একটু ভালোভাবে ফিট করে, লেন্সটিকে ভালোভাবে ক্যামেরার ওপর এটাচ করতে পারলে, প্রোফেশনাল মানের শট নেয়া সম্ভব। তবে এসব ভারী লেন্স প্রথম প্রথম স্মার্টফোনের সাথে এটাচমেন্ট করতে একটু বেগ পেতে হয়।
এসব টেলিফোটো লেন্স দিয়ে, আরও ভালো মানের ছবি তোলার জন্য নানারকম টিপসও ব্যবহার করা যায়। যেমন অবজেক্ট এর ব্যাকগ্রাউন্ড যদি ফাকা থাকে বা পিছে তেমন কিছু না থাকে, তখন একেবারে প্রোফেশনাল ডিএসএলআর এর ছবি তোলা সম্ভব হয়। তবে হ্যা, অবজেক্টকে অবশ্যই ক্যামেরা তথা লেন্স থেকে প্রায় ২০-২৫ ফুট দূরে থাকতে হবে।এই লেন্সের আরেকটি ভালো ফিচার আমার কাছে লাগল,সেটা হল ডিএসএলআর প্রাইম লেন্সের মত, জুম ইন ও জুম আউট ফিচার। আমি কোনো প্রোফেশনাল ফটোগ্রাফার না, তবে আমার মতে স্মার্টফোনে DSLR এর মত ফটোগ্রাফী করার জন্য YOTTA 4x-12x Zoom Telephoto লেন্স ব্যবহার করা যায়।
ফটোগ্রাফী যদি আপনার জীবিকা না হয়, ফটোগ্রাফী যদি আপনার পছন্দের বা সময় কাটানোর একটা বিষয় হয়, তবে আপনি স্মার্টফোন ফটোগ্রাফীতে ঝুঁকতে পারেন। আর এখানে উপরে আলোচিত কিছু লেন্সের ব্যবহার আপনার ফটোগ্রাফীতে এনে দিতে পারে নতুনত্ব। আপনি আপনার প্রয়োজনের ক্ষেত্রে এসব লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্রোফেশনালিটির ক্ষেত্রে, অনেক সময় ডিএসএলআর দিয়েও যা তোলা সম্ভব হয় না, তা তোলা যায় স্মার্টফোনের ম্যাক্রো লেন্স দিয়ে।
আশা করি স্মার্টফোন লেন্সের ওপর এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে, নিচে মতামত জানাতে পারেন। ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ওয়াপদেশ সাথেই থাকুন।
EmoticonEmoticon