যদিও এই শব্দটি নতুন নয়, কিন্তু কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে স্মার্টফোনের আনাগোনা শুরু হওয়ার সময় থেকে অ্যাপ (Apps) — শব্দটি শোনেন নি বা এটি বোঝেন না, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। আজকের এই মডার্ন টেকের যুগে, প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য রয়েছে অ্যাপ, কিন্তু সমস্যা সেখানে নয়, সমস্যা হচ্ছে যখন কথা বলা হয় অ্যাপ Vs. সফটওয়্যার নিয়ে, তখন অনেকেই বিভ্রান্তির মধ্যে পরে যায়। অনেকে মনে করে এই দুইটি একই জিনিষ, আবার অনেকে মনে করে এই দুইটি আলাদা জিনিষ। বেশিরভাগ ধারণা কারীগন মনে করেন, অ্যাপ হচ্ছে মোবাইলের জন্য আর সফটওয়্যার হলো কম্পিউটারের জন্য। তো এরকম অগুনতি বিষয় রয়েছে, হয়তো আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ার আগে যেগুলো জানতেন না। আমি এই আর্টিকেলে অ্যাপ কি, এর প্রকারভেদ, সফটওয়্যার আর এটি আলাদা জিনিষ কিনা — ইত্যাদি নানান বিষয়ে আলোচনা করবো।
অ্যাপ কি?
চলুন এই টপিকের সবচাইতে বড় প্রশ্ন এখানেই শেষ করে দেই, অ্যাপ শব্দটি আসলে “অ্যাপ্লিকেশন” শব্দটির সংক্ষিপ্ত রুপ এবং অবশ্যই এটি এক ধরণের সফটওয়্যার যেটা আলাদা আলাদা প্ল্যাটফর্মে রান করতে পারে। তো বুঝলেন, অ্যাপ আর সফটওয়্যার একই জিনিষ, তবে আজকের মডার্ন টাইপের সফটওয়্যার বা কম্পিউটার প্রোগ্রাম গুলোকে অ্যাপ বলা হয়। এটি অনেক টাইপের হতে পারে, হতে পারে মোবাইলে রান করছে, কম্পিউটারে রান করছে, আবার যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইজেও রান করতে পারে। কিছু অ্যাপ্লিকেশন ওয়েব ব্রাউজারেও রান করতে পারে, কিছু অ্যাপ্লিকেশন অফলাইন চলে পারে আবার কিছু অ্যাপ্লিকেশন অনলাইন চলতে পারে। তবে অ্যাপকে সাধারণত এক টাইপের লাইটওয়েট সফটওয়্যার বলে ধরা হয়, মানে এটিকে ফুল শক্তিশালী সফটওয়্যার বলে বিবেচনা করা হয় না। আর এই জন্যই অ্যাপ টার্মটি বিশেষ করে স্মার্টফোনের সাথে বা ওয়েবের সাথে শুনতে পাওয়া যায়, এবং কম্পিউটার টার্মের ক্ষেত্রে মানুষ সফটওয়্যার টার্মটি ব্যবহৃত করে।
অ্যাপ্লিকেশন যেকোনো প্ল্যাটফর্ম বা যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমের জন্য তৈরি করা এবং ব্যবহার করা যেতে পারে। নিচের প্যারাগ্রাফে অ্যাপের বিভিন্ন প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করলাম।
অ্যাপের প্রকারভেদ
অ্যাপস মূলত তিন প্রকারের হয়ে থাকে—ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, এবং ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন। যদি কথা বলি ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে, তো বুঝতেই পাড়ছেন এই টাইপের অ্যাপ্লিকেশন ফুল ফর্ম সফটওয়্যার হয়ে থাকে, মানে এই প্রোগ্রাম গুলো অনেক শক্তিশালী হয়, অনেক রিসোর্স ডিম্যান্ড করে সিস্টেম থেকে এবং কাজ করার জন্য সরাসরি হার্ডওয়্যার অ্যাক্সেস ডিম্যান্ড করে। ডেক্সটপ প্রোগ্রাম গুলো বিশেষ করে বড় স্ক্রীনের জন্য ডিজাইন করা হয়ে থাকে এবং প্রোগ্রাম গুলো মাউস এবং কী-বোর্ড ব্যবহার করে অ্যাক্সেস করার উপযোগী হয়।
অপরদিকে যদি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কথা বলি, সাধারণত এগুলো লাইটওয়েট হয়ে থাকে এবং ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ হয়, একেবারেই কোন কমপ্লেক্স বিষয় থাকে না। আর এজন্য মোবাইল অ্যাপ গুলো ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশনের মতো পাওয়ারফুল হয় না। মোবাইল অ্যাপের আইকোন গুলোকে সাধারণত বড় বড় করে ডিজাইন করা হয়, কেনোনা বিশেষ করে যাতে এগুলো টাচ স্ক্রীনের উপর কাজ করতে পারে।
পরিশেষে যদি কথা বলি, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে তো সেগুলো অনেক সময় ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশনের মতো পাওয়ারফুল হয় কিন্তু এর একটি ডাউন সাইড হচ্ছে ইন্টারনেট কানেকশন ছারা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করা যায় না, কেনোনা সেগুলো কোন কম্পিউটার বা মোবাইল ইন্সটল না থাকে ক্লাউড কম্পিউটারে বা ওয়েব সার্ভারে ইন্সটল থাকে, তাই অ্যাক্সেস করার জন্য ইন্টারনেট অবশ্যই প্রয়োজনীয় হয়। যদি কোন অ্যাপ্লিকেশন ওয়েব এবং ডেক্সটপ উভয়ের সাথে মিক্স অবস্থায় থাকে, তাহলে সেটাকে হাইব্রিড অ্যাপ্লিকেশন বলা হবে। হাইব্রিড অ্যাপ গুলোকে অফলাইনে কম্পিউটারে ব্যবহার করা যায় এবং অফলাইনে এটি আপনার মেশিন থেকে রিসোর্স নিয়ে কাজ করে, কিন্তু যখনই আপনি অনলাইন আসবেন, এই অ্যাপ গুলো ক্লাউড থেকে কাজ করতে আরম্ভ করে দেয়।
একই অ্যাপ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের জন্য প্রাপ্য হতে পারে, আবার অনেক তৃতীয় পক্ষ ডেভেলপার রয়েছে যারা অন্যের অ্যাপ গুলো ডেভেলপ করে পাবলিশ করে। এ ব্যাপারে আরো পরিষ্কার বুঝতে ন্যাটিভ অ্যাপ ও থার্ড পার্টি অ্যাপের পার্থক্য — এই আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেন।
ক্রস প্ল্যাটফর্ম
যেকোনো অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপার সর্বদায় চায় তাদের প্রোগ্রামকে যেন যেকোনো প্ল্যাটফর্মে চালানো যায়। এজন্য একই প্রোগ্রাম ডেক্সটপ, মোবাইল এবং ওয়েব ভার্সনের থাকতে পারে। যদি কথা বলি অ্যাডোবি ফটোশপের কথা, সেটা ডেক্সটপের জন্য পাওয়ারফুল ফটো এডিটর সফটওয়্যার আর এটি রান করতে কম্পিউটার থেকে অনেকখানি রিসোর্স প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে। মোবাইলের জন্য এই একই কোম্পানির অ্যাপ রয়েছে, যেমন ফটোশপ স্কেচ, এটি লাইটওয়েট মোবাইল প্রোগ্রাম। আবার অ্যাডোবি ফটোশপ এক্সপ্রেস এডিটর হচ্ছে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, অর্থাৎ একে কম্পিউটার বা মোবাইলে কোথাও ইন্সটল করার দরকার নেই, এ সরাসরি ইন্টারনেটের সাহায্যে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকেই রান করানো যাবে।
অপরদিকে যদি কথা বলি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড প্রোগ্রামটি নিয়ে, তো কম্পিউটারের জন্য ফুল ওয়ার্ড সফটওয়্যার রয়েছে যেখানে সম্পূর্ণ ফিচার পেয়ে যাবেন। ঠিক ডেক্সটপের মতোই কিন্তু লিমিটেড ফিচার এবং লাইটওয়েট প্রোগ্রাম মোবাইলের জন্য রয়েছে অ্যাপ রুপে, কিন্তু মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ওয়েব ভার্সন কিন্তু ডেক্সটপ ভার্সনের মতোই পাওয়ারফুল, যেটা ব্রাউজার দিয়ে অ্যাক্সেস করা সম্ভব। তবে কিছু অ্যাপ্লিকেশন আবার মোবাইলে আছে, ওয়েব ফর্মে আছে কিন্তু ডেক্সটপে নেই। যেমন জিমেইল কিন্তু মূলত একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, এর মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও রয়েছে, কিন্তু ডেক্সটপ সফটওয়্যার নেই। ক্রোম ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যতিত ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন গুলোকে ফিজিক্যাল ইন্সটল করার কোনই দরকার থাকে না।
অ্যাপস ডাউনলোড
যেকোনো অ্যাপস ডাউনলোড করার জন্য আপনার অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অফিয়াল জায়গা রয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্য গুগল প্লে বা অ্যামাজন স্টোর রয়েছে, সাথে আরো অনেক তৃতীয়পক্ষ ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখান থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করতে পাড়বেন। অ্যাপেল ডিভাইজ গুলোর জন্য রয়েছে অ্যাপ স্টোর। তবে কম্পিউটারের জন্য বিষয়টি একটু আলাদা। এক্ষেত্রে আন-অফিশিয়াল সোর্সই বেশি। যদিও উইন্ডোজ নতুন করে স্টোর তৈরি করেছে ডেক্সটপের জন্য, কিন্তু বেশিরভাগ সফটওয়্যার গুলো আপনি আন-অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকেই খুঁজে পেতে পাড়বেন।
সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময় বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজনীয়, কেনোনা সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময়ই মানুষ বেশিরভাগ টাইম কম্পিউটারকে ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করিয়ে ফেলে। আপনি উইন্ডোজ কম্পিউটার নিরাপদে সফটওয়্যার ডাউনলোড করার জন্য এই পাঁচটি ফ্রী সফটওয়্যার ডাউনলোডিং সাইট ব্যবহার করতে পারেন।
আশা করছি, এই সম্পূর্ণ টার্মটি সম্পর্কে আপনার মনে আর কোন প্রকারের দ্বিধাদন্দ জমা হয়ে নেই। আর্টিকেলটি আপনার জন্য কতোটা সাহায্য পূর্ণ ছিল, আমাকে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আর যেকোনো প্রশ্ন বা মতামতে তো অবশ্যই নিচে কমেন্ট করুণ।
EmoticonEmoticon