ওয়ালটন (Walton) প্রিমো ই৮আই (Primo E8i) হ্যান্ডস অন রিভিউ | মেড ইন বাংলাদেশ!

আজ আমরা নিজের দেশের স্মার্টফোন তথা প্রথম মেড ইন বাংলাদেশ স্মার্টফোন সম্পর্কে জানব। বিটিআরসি এর পক্ষ থেকে দেশে স্মার্টফোন তৈরির অনুমোদন পাওয়ার পরপরই, ওয়ালটন ৫ অক্টোবর থেকে দেশে সর্বপ্রথম স্মার্টফোন তথা মোবাইল ফোন তৈরির কার্যক্রম শুরু করে। গাজীপুরে চন্দ্রায় ওয়ালটন তাদের মোবাইল ফোন অ্যাসেম্বেলিং কারখানায় এই যাত্রা শুরু করে।
মেড ইন বাংলাদেশ
এখানে স্মার্টফোনটি দেশে উৎপাদন হচ্ছে ঠিকই তবে মূল কাচামাল আসছে চীন থেকে। স্মার্টফোনের যতরকম মেমোরী, প্রোসেসর সহ অন্যান্য চিপ তাছাড়াও ক্যামেরা, স্পীকার, ডিসপ্লে, টাচ মডিউল এসবই আসছে চীনের নানা উৎপাদক থেকে। বাংলাদেশে সংযুক্তিকরন কারখানা বা অ্যাসেম্বেলিং কারখানায় সেই কম্পোনেন্ট গুলোকে একটি স্মার্টফোনের পিসিবি বোর্ডের সাথে যুক্ত করে একটি পূর্নাঙ্গ মোবাইল মাদারবোর্ড ও মোবাইল মডিউল তৈরি করা হচ্ছে। যদিও এসব কাচামাল বাংলাদেশ এখন তৈরির সক্ষমতা রাখেনা, তবুও বাংলাদেশ এখন স্মার্টফোন অ্যাসেম্বেল করতে পারে, অচিরেই এসব কম্পোনেন্ট তৈরির সক্ষমতাও অর্জন করে নেবে।
এই মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগযুক্ত ফোনটি দেশে তৈরি প্রথম স্মার্টফোন হিসেবে বাজারে এনেছে ওয়ালটন। এর নাম ওয়ালটন প্রিমো ই৮আই (Primo E8i)। আজ আমরা মেড ইন বাংলাদেশ স্মার্টফোন প্রিমো ই৮আই সম্পর্কে জানব, জানাব এর বিস্তারিত রিভিউ।
প্রথমেই বলে রাখি এটা কোনো আহামরি স্মার্টফোন না, এটা খুবই সাধারন সুপার চিপ বাংলায় বলতে গেলে সেইরকম সস্তা, এন্ট্রি লেভেলের অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন। স্মার্টফোনটি তরুনদের জন্য একদমই মানানসই না, বাসার বাচ্চা বা বয়স্ক দাদা-দাদী, নানা-নানী অথবা আপনার বাবা-মা দের ব্যবহারের জন্য আপনি এই স্মার্টফোনটি কিনতে পারেন। আপনি কাউকে এই স্মার্টফোনটি কিনে গিফট হিসেবেও দিতে পারেন – সেকেন্ডারি মোবাইল হিসেবে ব্যবহার করল, সমস্যা কি? এমনকি আপনার কাজের ক্ষেত্রে দুইটি ফোন দরকার হতেই পারে ; সেক্ষেত্রে সেলেন্ডারি ফোন হিসেবে আপনি এই প্রিমো ই৮আই স্মার্টফোনটি কিনতে পারেন। তবে আমি কাউকে এই ফোনটি প্রাইমারি স্মার্টফোন হিসেবে কেনার জন্য কখনই সাজেস্ট করব না।স্মার্টফোনটির দাম ৩৫০০ টাকা ।

ওয়ালটন প্রিমো ই৮আই আনবক্সিং!
ওয়ালটন প্রিমো ই৮আই এর বক্সটি খুললে যা যা পাওয়া যাবেঃ
  • স্বয়ং প্রিমো ই৮আই ডিভাইস
  • একটি চার্জার এডাপ্টার
  • একটি ইউএসবি কেবল
  • একটি সাধারন হেডফোন
  • একটি ওয়ারেন্টি কার্ড
বডি ও ডিসপ্লে
মোবাইল ফোনটি পাওয়া যাবে তিনটি কালারে, এগুলো হলঃ কালো,গ্লসি গোল্ডেন বা চকচকে সোনালী এবং কফি এই তিনটি কালারে। মোবাইল ফোনটির ব্যাটারি সহ ওজন মাত্র ১৩২ গ্রাম, সুতরাং খুবই হালকা পাতলা একটি স্মার্টফোন। পুরোপুরি প্লাস্টিক বিল্ড এই স্মার্টফোনটি প্রায় ১০.৪ মিলিমিটার পুরু। উচ্চতায় ১৩৩ মিলিমিটার এবং প্রস্হে ৬৮ মিলিমিটার।
ডিভাইসটির ব্যাক প্যানেলে রয়েছে ক্যামেরা, ফ্লাস ও স্পিকার মডিউল; আর এগুলো পাশাপাশি অবস্হান করছে। এতে করে নিচের ওয়ালটন লোগোটি ঢেকে রাখলে স্যামসাং জে২ এর মত মনে হয়। তবে পিছন থেকে স্যামসাং জে২ এর মত মনে হলেও সামনে থেকে পুরোই ওয়ালটনের ট্রিপিক্যাল লুক।
এখানে ডিসপ্লে হিসেবে রয়েছে ৪.৫ ইঞ্চি FWVGA ডিসপ্লে। এখানে FWVGA ডিসপ্লে মানে হচ্ছে Full Wide Graphics Array এসব ডিসপ্লে তেমন ভালো কোয়ালিটির নয় এবং রেজুলেশন কম হয়। FWVGA ডিসপ্লের রেজুলেশন হয়ে থাকে ৮৫৪*৪৮০ ; একইভাবে এই স্মার্টফোনের রেজুলেশনও একই। আর এই ডিসপ্লেতে ভিউইং অ্যাঙ্গেল ভালো আশা করাই ভালো। ডিসপ্লেতে কোনোরকম প্রোটেকশন দেয়া নেই। আর এসব ডিসপ্লের ক্ষেত্রে একটু ওপর থেকে পরে গেলে ক্যাপাসিটিভ টাচ নস্ট হয়ে যাওয়ার নজির খুবই বেশি, তাই এক্সট্রা গ্লাস প্রোটেকশন ব্যবহার করার পরামর্শ থাকল।
ডিসপ্লের নিচে থাকবে তিনটি ক্যাপাসিটিভ টাচ বাটন, অন্যসব ফোনের মত এতেও কোনো ব্যাকলাইট থাকছে না। যাই হোক,এইসব নিয়ে বিল্ট কোয়ালিটির দিক দিয়ে এটি একটি গুল্টু-গাল্টু স্মার্টফোন, স্পেশাল কিছু নয়।
হার্ডওয়্যার ও ক্যামেরা
একটি এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনে যেসব স্পেসিফিকেশন না দিলেই না তা দেয়া হয়েছে। চিপসেট বা প্রোসেসর হিসেবে থাকছে ARM এর ১.২ গিগাহার্জ ৩২বিট কোয়াডকোর প্রোসেসর। যার সাথে জিপিইউ হিসেবে থাকছে Mali 400MP জিপিইউ। আর রাম থাকছে একদমই কম, তা হল মাত্র ৫১২ এমবি। ডিভাইসটিতে মেমোরী কার্ড ব্যবহার করা যাবে পাশাপাশহ এতে ৪ জিবি সিস্টেম স্টোরেজ দেয়া রয়েছে, যার ভেতর প্রায় ৩.৯১ জিবি ব্যবহারকারীর জন্য ফাকা থাকে। ডিভাইসটিকে ব্যাকআপ দেয়ার জন্য থাকছে একটি সাধারন ১৭০০ এমএএইচ লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। আপনার জন্য এই ব্যাটরি দিয়ে চলা অসম্ভব হলেও, আপনার বাবা-মা বা দাদা-দাদীর জন্য এটি পুরোদিন ব্যাকআপ দিতেও পারে।
ক্যামেরা কথা বলতে গেলে আবারও বলতে হবে নাথিং স্পেশাল। রিয়ারে থাকছে বিএসআই সেন্সর যুক্ত ৫ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। যার সাথে থাকছে একটি এলইডি ফ্লাস। ক্যামেরা দিয়ে দিনের আলোও মোটামোটি মানের ছবি তোলা সম্ভব হবে। আর ফ্রন্টে রয়েছে ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। আসলে বর্তমান সময়ে সেলফির জন্য ২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে সার্ভাইভ করা বলতে গেলে অসম্ভব। তবে কোনো রকমে আসেপাশে পর্যাপ্ত আলো থাকলে ভিডিও চ্যাটিং করা যাবে। যাই হোক, যে দাম এত কিছু আশা না করাই ভালো।
ক্যামেরা স্যাম্পল 
অন্যান্য
মোবাইল ফোনটি সম্পর্কে বেশি আর কিছু বলার নেই। অপারেটিং সিস্টেম হিসেবল এতে থাকছে অ্যান্ড্রয়েড ৬ মার্সম্যালো। আর ইউজার ইন্টারফেস পুরোপুরি স্টক তবে আইকনগুলো কাস্টমাইজড। ডিভাইসটি ৪জি সাপোর্টেড নয়।
পরিশেষে
মোবাইলটি সবার জন্য নয়। খুবই সাধারন বলতে যা বোঝায় এমন ইউজের জন্য এই মোবাইলটি। বাসায় রাখার জন্য অনেকসময় একটি মোবাইল বা টেলিফোনের দরকার পরে, আর সে জন্য যেন-তেন কোনো কিছু না কিনে প্রিমো ই৮আই কিনতে পারেন। আর আশা করি ওয়ালটন এর মত আরো কোম্পানি দেশে অচিরেই হাই-এন্ড স্মার্টফোনসহ অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত প্রযুক্তি পন্য তৈরী করে। দেশে ভালো মানের পন্য তৈরি করলে যেমন আমরা লাভবান হব, তেমনই তা রপ্তানি করে দেশেরও লাভ হবে। রিভিউ সম্পর্কে আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। আপনার মতামত পরবর্তীতে আরও ভালো কিছু নিয়ে লেখার অনুপ্রেরনা দেয়। ধন্যবাদ, ওয়াপদেশ এর সাথেই থাকুন।


EmoticonEmoticon