যদি আপনার কম্পিউটার কেস খুলে দেখেন, অবশ্যই একটি বোর্ড দেখতে পাবেন, যেটা কম্পিউটারের সকল আলাদা পার্টস গুলোকে একত্র করে রেখেছে। সিপিইউ, মেমোরি, হার্ড ড্রাইভ, এসএসডি, জিপিইউ — এগুলো সরাসরি অথবা ক্যাবল দ্বারা মাদারবোর্ডের সাথে কানেক্টেড থাকে। মাদারবোর্ড’কে কম্পিউটারের মেরুদণ্ড বলতে পারেন, যেটা সকল যন্ত্রাংশ গুলোকে একত্র করে রাখে, অথবা কম্পিউটারের মাদারও বলতে পারেন। শুধু কম্পিউটার নয় — স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, আরো ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইজ গুলোতেও মাদারবোর্ড থাকে, কিন্তু সেগুলোকে লজিক বোর্ড বলা হয়। আলাদা ডিভাইজ গুলোতে বোর্ডের সাথে যন্ত্রাংশ গুলো সোল্ডারিং করে লাগানো থাকে, তাই কম্পিউটার বোর্ডের মতো সেগুলতে যন্ত্রাংশ আপগ্রেড করা যায় না, কেনোনা সেখানে এক্সপ্যানশন স্লোট থাকে না। আরো অনেক নামে কম্পিউটার মাদারবোর্ডকে চেনা হয়, যেমন- মেইনবোর্ড, মবো (সংক্ষেপে), সিস্টেম বোর্ড, এমবি (সংক্ষেপে), বেসবোর্ড, এমনকি একে লজিক বোর্ডও বলতে পারেন।
এই আর্টিকেলে কম্পিউটার মাদারবোর্ড এবং এর সাথে লেগে থাকা যন্ত্রাংশ গুলোর সম্বন্ধে ক্লোজ ধারণা দেওয়া চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করছি, আপনি আর্টিকেলটি অনেক উপভোগ করবেন!
মাদারবোর্ড এবং যন্ত্রাংশ
কম্পিউটার কেসের ভেতরে যতোকিছু রয়েছে, যতো যন্ত্রাংশ রয়েছে, সবগুলো কোন না কোন ভাবে মাদারবোর্ডের সাথে কানেক্টেড থাকে, যাতে প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ প্রত্যেকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। কম্পিউটারের ভিডিও কার্ড, হার্ড ড্রাইভ, এসএসডি, র্যাম, অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ, সিপিইউ, পাওয়ার সাপ্লাই, ইউএসবি পোর্ট — সবকিছু মাদারবোর্ডের সাথে সম্পর্ক যুক্ত হয়ে থাকে। কম্পিউটার মাদারবোর্ড এর আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে, এখানে এক্সপ্যান্সন স্লট থাকে, অর্থাৎ আপনি প্রয়োজনে আরো হার্ডওয়্যার যুক্ত বা আপগ্রেড করে নিতে পারবেন। তাছাড়া মাদারবোর্ডে জাম্পার, ক্যাপাসিটর, ডিভাইজ পাওয়ার এবং ডাটা কানেকশন, ফ্যান, হিট সিঙ্ক, এবং স্ক্র্যু হোল থাকে।
ডেক্সটপ মাদারবোর্ড, পিসি কেস, পাওয়ার সাপ্লাই — ইত্যাদি মডেল এবং দাম অনুসারে আলাদা আলাদা আকারের হতে পারে। কিন্তু সকল মাদারবোর্ডের কিছু কমন ব্যাপার রয়েছে, যেমন প্রত্যেকেই সিঙ্গেল সিপিইউ, কিন্তু টাইপের মেমোরি, কিছু গ্রাফিক্স কার্ড মডেল সমর্থন করে থাকে। আপনি কোন কোম্পানির মাদারবোর্ড কিনছেন, সে কোম্পানি থেকে অবশ্যই পরিষ্কার গাইড লাইন দেখে নিতে হবে, আপনার বোর্ড কোন কোন টাইপের আলাদা যন্ত্রাংশ গুলোকে সমর্থন করতে পারবে। ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এর মাদারবোর্ডে সাধারণত জিপিইউ, সাউন্ড কার্ড এগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া থাকে, যাতে ডিভাইজ ফিজিক্যাল সাইজ কমানো সম্ভব হয়।
মাদারবোর্ডের সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কুলিং সিস্টেম। যেখানে হাই পারফর্মেন্স সিপিইউ এবং জিপিইউ প্রচণ্ড তাপমাত্রার সৃষ্টি করতে পারে, তাই যদি কোন গরীব টাইপের কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করলে বোর্ড এবং বাকী কম্পিউটিং সিস্টেমের মারাত্মক ক্ষতিসাধন ঘটতে পারে। আজকের দিনে হাই পারফর্মেন্স কম্পিউটার গুলোকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য ওয়াটার কুলিং সিস্টেম ব্যবহৃত করা হয়। মাদারবোর্ডে ইনবিল্ড সেন্সর থাকে, যেটা সিস্টেম ট্যাম্প্রেচার ডিটেক্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যখন আপনি কোন নতুন ডিভাইজকে মাদারবোর্ডের সাথে কানেক্টেড করবেন, অবশ্যই সেটার ডিভাইজ ড্রাইভার সিস্টেমে ইন্সটল থাকতে হবে, যাতে ডিভাইজটিকে সিস্টেম বুঝতে পারে এবং সাথে কাজ করতে পারে।
মাদারবোর্ডের ফিজিক্যাল বর্ণনা
মাদারবোর্ড শুধু নিজে থাকে একেবারেই বেকার, কখনোই শুধু মাদারবোর্ড একা কম্পিউটার পরিচালনা করতে পারে না। অবশ্যই আলাদা আলাদা যন্ত্রাংশ গুলো এখানে প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে। পূর্বের আলোচনা থেকে অবশ্যই জেনে গেছেন, মাদারবোর্ডের কাজ হচ্ছে সকল আলাদা যন্ত্রাংশ গুলোকে একত্রে একসাথে ধরে রাখা। প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ হয় স্লট অথবা পোর্টের সাথে মাদারবোর্ডে কানেক্টেড থাকে। মাদারবোর্ডের গঠন এবং শেপকে ফর্ম ফ্যাক্টর বলা হয়। ফর্ম ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে এটা নিশ্চিত করা হয়, কোন যন্ত্রাংশ কোথায় কিভাবে লাগানো হবে এবং শেপের উপর নির্ভর করে কম্পিউটার কেস কিনতে হয়।
প্রত্যেকটি বোর্ডে একটি সিপিইউ সকেট থাকে, যেখানে মাইক্রো প্রসেসর ইন্সটল করতে হয়, যেটাকে কম্পিউটারের ব্রেইন বলতে পারেন। মাদারবোর্ডে একটি ইনপুট/আউটপুট চিপ থাকে, যেটাকে বাওস বলা হয়—এতে সিস্টেমের কিছু বেসিক ফাংশন থাকে এবং কম্পিউটার প্রত্যেকবার অন হওয়ার সময় বাওস পারফর্ম করে। আরেকটি রিয়াল টাইম ক্লক চিপ থাকে, যেখানে একটি ব্যাটারি লাগানো থাকে, আর এটি কিছু বেসিক সেটিং নিয়ন্ত্রন করে সাথে সিস্টেম টাইম ঠিক রাখে।
সাথে মাদারবোর্ডে বিভিন্ন টাইপের স্লট থাকে, এদের মধ্যে অন্যতম পিসিআই (Peripheral Component Interconnect) স্লট—যেটাতেই ভিডিও, সাউন্ড কার্ড, এবং নেটওয়ার্ক কার্ড লাগানো থাকে। এজিপি (Accelerated Graphics Port) পোর্ট থাকে, যেটা ভিডিও কার্ড বা ডেডিকেটেড জিপিইউ ব্যবহার করার জন্য একটি ডেডিকেটেড পোর্ট। আইডিই (Integrated Drive Electronics) ইন্তারফেসে হার্ড ড্রাইভ কানেক্টেড থাকে। অনেক ইউএসবি পোর্ট থাকে, যার মাধ্যমে আপনি কম্পিউটারে অনেক এক্সটারন্যাল ডিভাইজ অ্যাটাচ করতে পারেন। এবং মেমোরি স্লট থাকে, যেখানে র্যাম স্টিক লাগানো থাকে।
আজকের কিছু মডার্ন কম্পিউটিং মাদারবোর্ড গুলোতে নতুন এবং উন্নত টেকনোলজির স্লট/পোস্ট রয়েছে। যেমন রেইড (Redundant Array of Independent Discs) কন্ট্রোলার, আজকের অনেক মাদারবোর্ডে বিল্ডইন থাকে। এর মাধ্যমে কম্পিউটার একসাথে অনেক গুলো ড্রাইভকে একটি ড্রাইভ হিসেবে চিনতে পারে এবং কাজ করে। পিসিআই এক্সপ্রেস— এটি সম্পূর্ণ নতুন টেকনোলজির প্রোটোকল যেটা অনেক আলাদা পোর্টের প্রয়োজনীয়তা শেষ করে দিয়েছে, যেমন এজিপি পোর্টের আর দরকারই নেই। আজকের বেশিরভাগ মাদারবোর্ডে আলাদা সাউন্ড কার্ড লাগাতে হয় না, সাথে নেটওয়ার্ক কার্ড বোর্ডের সাথে বিল্ডইন ভাবেই থাকে।
সিপিইউ সকেট
যখন কোন কম্পিউটারের স্পীড বা পারফর্মেন্স নিয়ে আলোচনা করা হয়, অবশ্যই কম্পিউটার প্রসেসর বা সিপিইউ এর কথা সবার আগে সামনে আসে। যতো ফাস্ট প্রসেসর, আপনার কম্পিউটার ততোই দ্রুত অপারেশন পারফর্ম করতে পারবে। যাই হোক, কম্পিউটার প্রসেসর নিয়ে টেকহাবসে অনেক কুল আর্টিকেল রয়েছে সেগুলোকে চেক করতে পারেন। সিপিইউকে কাজ করার জন্য অবশ্যই সেটাকে কম্পিউটার মাদারবোর্ডের সাথে ফিজিক্যালি কানেক্টেড থাকতে হবে। আগের দিনের মাদারবোর্ড এবং সিপিইউ গুলোতে একই সেটের পিন দেখতে পাওয়া যেতো যেগুলো ব্যবহার করে সিপিইউ মাদারবোর্ডে কানেক্ট হতে পারবে। একে পিজিএ (Pin Grid Array) বলা হয়। এই পিন গুলো সকেট ৭ নামক লেআউটে ফিট হতো। এর মানে আগের প্রসেসর গুলো যেকোনো মডেলের মাদারবোর্ডের সাথে ফিট হয়ে যেতো।
কিন্তু বর্তমানে সিপিইউ নির্মাতা কোম্পানি’রা (ইনটেল, এএমডি) আলাদা এবং হরেক রকমের পিজিএ ব্যবহার করে, যেটার কোনটা সকেট ৭ সমর্থন করে আবার কোনটা করে না। যতো উন্নত সিপিইউ চিপ তৈরি হচ্ছে সেখানে আরো আরো পিন যুক্ত করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে, এতে নতুন ফিচার এবং আরো পারফর্মেন্স পাওয়া সম্ভব হচ্ছে, সাথে চিপকেও আরোবেশি পাওয়ার সরবরাহ করা দরকারি হয়ে উঠছে।
বর্তমানে নতুন ইনটেল সিপিইউ গুলোতে আর পিজিএ ব্যবহৃত হয় না, এতে এলজিএ (Land Grid Array) থাকে আর এটাকে সকেট টি ও বলা হয়। এলজিএ আসলে পিজিএ থেকে আলাদা হয়ে থাকে, এখানে সকেটে পিন থাকে, সিপিইউ’তে কোন পিন থাকে না। তাই অবশ্যই সিপিইউ কেনার সময় সেটা মাদারবোর্ড সকেটের সাথে মিল রয়েছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে, কেনোনা যেকোনো সিপিইউ আপনি যেকোনো বোর্ডে লাগাতে পারবেন না।
তো মোটামুটি মাদারবোর্ড সম্পর্কে সকল বেসিক টপিক গুলো এই আর্টিকেলে শেয়ার করলাম। অবশ্যই নেক্সট মাদারবোর্ড নিয়ে প্রকাশিত আর্টিকেলটিতে এক্সপ্যান্সন স্লট, এম২ ইন্টারফেস, পিসিআই এক্সপ্রেস, পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট, চিপসেট এবং বাস স্পীড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। হতে পারে উল্লেখিত টার্ম গুলো একটি সিঙ্গেল আর্টিকেলে লিপিবদ্ধ করবো, অথবা আলাদা আলাদা আর্টিকেলও তৈরি করতে পারি। সাথে মাদারবোর্ড বাইং গাইড তো থাকছেই!! আর এই আর্টিকেল সম্পর্কে যেকোনো প্রশ্ন বা মতামত জানাতে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করুণ!
EmoticonEmoticon