ইন্টারনেট বা যেকোনো সাধারন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম সম্পূর্ণ করতে বা সঠিকভাবে কাজ করার উপযোগী করে উঠাতে ভূমিকা রয়েছে অনেক হার্ডওয়্যারের। রাউটার, হাব, এবং সুইচ হলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং ডিভাইজ। এরা প্রত্যেকেই প্রায় একই কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে—কিন্তু এদের প্রত্যেকেরই আলাদা এবং বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, এদের একে অপরের মধ্যে পার্থক্য গুলো কি? এদের বিশেষ গুরুত্ব গুলো কি? এবং ঠিক কি কারণে এরা প্রত্যেকেই নিজের অবস্থানে টিকে রয়েছে? যে ডিভাইজ গুলো ছাড়া নেটওয়ার্কিং কল্পনা করা মুশকিল, সে ডিভাইজ গুলো সম্পর্কে আমাদের অবশ্যই বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। তো চলুন বন্ধুরা, সবকিছু ভাঙ্গিয়ে দেখে নেওয়া যাক।
১. হাব
অনেক গুলো কম্পিউটারকে একসাথে সংযুক্ত করার জন্য (লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক) হাব ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হাবের যেকোনো পোর্টে যদি কোন তথ্য প্রেরন করা হয় তবে সেই তথ্যকে হাব তার সকল পোর্টে অর্থাৎ সেখানে কানেক্ট থাকা প্রত্যেকটি কম্পিউটারে পাঠিয়ে দেয়। হাবে কানেক্ট থাকা একটি নির্দিষ্ট কম্পিউটার থেকে কোন নির্দিষ্ট কম্পিউটারে তথ্য পাঠানো সম্ভব হয় না, কেনোনা হাব তার সাথে সংযুক্ত থাকা কম্পিউটার গুলো সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না। কোন পোর্ট থেকে তথ্য পেলে তা অনেকটা কানার মতো এর বাকি সকল পোর্ট গুলোর কাছে পৌছিয়ে দেয়।
হাব একদম সাধারন ইলেকট্রিক মাল্টিপ্লাগের মতো কাজ করে—যেখানে মাল্টিপ্লাগে এক প্রান্ত থেকে বিদ্যুৎ প্লাগে প্রেরন করা হয় এবং সকল পোর্ট গুলো এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কোন প্লাগের সাথে কোন যন্ত্রপাতি লাগানো আছে তা মাল্টিপ্লাগটি কখনোই বুঝতে পারে না। মনে করুন, একটি হাবের সাথে পাঁচটি কম্পিউটার সংযুক্ত করা আছে, এখন যদি একটি কম্পিউটার থেকে ডাটা পাঠানো হয় তবে তা নির্দিষ্ট কোন কম্পিউটারে না গিয়ে একসাথে বাকি চারটি কম্পিউটার গ্রহন করবে।
হাবের প্রয়োজনীয়তা
বাড়িতে ব্যাবহারের জন্য হাবের সত্যিই তেমন কোন প্রয়োজনীয়তা নেই—কেনোনা আপনার পাঠানো যেকোনো তথ্য সকল ডিভাইজে কপি হয়ে যাবে। তাছাড়া হাব ব্যবহার করা মানে নিরাপত্তাকে সমুদ্রের ঐপাড়ে রেখে আসা, এতে সংযুক্ত থাকা যেকোনো ডিভাইজ থেকে সকল ট্র্যাফিকের উপর অনেক সহজেই নজরদারি রাখা সম্ভব। তাছাড়া হাব ব্যান্ডউইথ শেষ করার জম।
তবে এর যে কোন প্রয়োজনীয়তাই নেই, এমনটি কিন্তু নয়। মনেকরুন, আপনার অফিসের বসের জন্য কোন ডকুমেন্টের প্রিন্ট কপি প্রয়োজন, কিন্তু শুধু আপনার কপি হলেই হবে না, আপনার অফিসের প্রত্যেকজন কর্মচারীর করা প্রিন্ট কপি প্রয়োজন এবং সকল কপি প্রিন্ট করার জন্য একটিই প্রিন্টার রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি হাব ব্যবহার করে ব্যাপারটিকে সহজে নিয়ন্ত্রন করে নিতে পারবেন।
হাবের নিরাপত্তা নেই বল্লেই চলে, কিন্তু এটিকে আপনি ফিচার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। আপনি আপনার অফিসের সকল কর্মচারীর উপর এবং সেই নেটওয়ার্কের সকল ট্র্যাফিকের উপর নজর রাখতে পারবেন। আপনার কোন কর্মচারী যদি কাজের চেয়ে বেশি ফেসবুক বা ইউটিউবে সময় ব্যয় করে তবে তাকে ধরার জন্য হাব আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
২. সুইচ
সুইচও অনেক গুলো কম্পিউটারকে একত্রে সংযুক্ত করতে বা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সর্বপ্রথম ডাটা ট্র্যান্সফার করার পরে এটি একটি “সুইচ টেবিল” তৈরি করে—যা এর সাথে সংযুক্ত থাকা প্রত্যেকটি ডিভাইজের ম্যাক অ্যাড্রেস মনে রাখে এবং মনে রাখে ঠিক কোন ডিভাইজ কোন পোর্টের সাথে সংযুক্ত রয়েছে।
হাবের অসদৃশ সুইচ প্রত্যেকটি কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, প্রথম ডাটা আদান প্রদান করার পরে এটি প্রত্যেকটি পোর্টের ম্যাক অ্যাড্রেস মনে রাখে, ফলে কোন কম্পিউটার থেকে কোন নির্দিষ্ট কম্পিউটারে বা নির্দিষ্ট পোর্টে ডাটা পাঠানো সম্ভব।
সুইচের প্রয়োজনীয়তা
কোন সাধারন এবং ব্যক্তিগত লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য হাব ব্যবহার করলেই চলে—কেনোনা এটি সুইচের চেয়ে অনেক বেশি সস্তা। কিন্তু সুইচ ব্যবহার করা অনেক বেশি নিরাপদ এবং দক্ষ, তাছাড়া এটি অনেক কম ব্যান্ডউইথ ক্ষয় করে। তাছাড়াও আপনি একটি কম্পিউটার থেকে কোন নির্দিষ্ট কম্পিউটারে ডাটা প্রেরন করতে পারবেন।
মনেকরুন আপনি “ক” কম্পিউটার থেকে “খ” কম্পিউটারে কোন ডাটা প্রেরন করতে চাইছেন। এবার সুইচ পর্যবেক্ষণ করে দেখল যে, “ক” কম্পিউটারটি ১ নং পোর্টে এবং “খ” কম্পিউটারটি ৪ নং পোর্টে সংযুক্ত রয়েছে। এই অবস্থায় সুইচ ১ নং পোর্ট থেকে সরাসরি ৪ নং পোর্টে ডাটা সেন্ড করে দেবে, বাকি পোর্ট গুলো সেই ডাটা প্রাপ্তি থেকে বিরত থাকবে, ফলে হাবের চেয়ে অনেক বেশি ব্যান্ডউইথ বাচান সম্ভব হবে।
আপনি যখন সুইচ কেনার জন্য বাজারে যাবেন তখন সাধারনত দুই প্রকারের সুইচ দেখতে পাবেন। একটি হলো ম্যানেজড সুইচ এবং আরেকটি আনম্যানেজড সুইচ। আনম্যানেজড সুইচে জাস্ট কম্পিউটার গুলোকে প্লাগ করুন এবং সরসরি কাজ শুরু করে দিন। কিন্তু ম্যানেজড সুইচে নির্দিষ্ট পোর্টের জন্য ব্যান্ডউইথ অগ্রাধিকার রাখার সুবিধা দিয়ে থাকবে। যেমন স্কাইপ কল করার জন্য বেশি ব্যান্ডউইথ পোর্ট ব্যবহার করতে পারেন।
৩. রাউটার
একটি নেটওয়ার্ক থেকে আরেকটি নেটওয়ার্কে ডাটা গুলোকে প্যাকেট আকারে সেন্ড করায় হলো রাউটারের আসল কাজ। প্রত্যেকটি ডাটা প্যাকেটে সেই ডাটাটির পৌঁছানোর গন্তব্য ঠিকানা জুড়ে দেওয়া থাকে। প্রেরনকৃত ডাটা গন্তব্যে না পৌঁছানো অব্দি এক রাউটার থেকে আরেক রাউটারে ভ্রমন করে। আর এভাবেই ইন্টারনেট থেকে ডাটা আপনার লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে চলে আসে। অর্থাৎ আপনি যখন গুগলে কিছু সার্চ করেন, তখন আপনার রাউটার সেই সার্চ অনুরোধটি সরাসরি গুগল সার্ভারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। তারপরে সার্ভার থেকে প্রাপ্ত ডাটা গুলো আপনার লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে থাকা নির্দিষ্ট কম্পিউটারে সরবরাহ করে দেয়।
রাউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু লোকাল
আইপি অ্যাড্রেস তৈরি করে এর সাথে সংযুক্ত থাকা প্রত্যেকটি ডিভাইজকে একটি করে প্রদান করে। যে ডিভাইজ থেকেই ওয়েব রিকুয়েস্ট পাঠানো হোক না কেন, আপনার রাউটার সকল প্রসেস গুলোকে অনেক দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রন করে এবং প্রত্যেকটি ডাটা প্যাকেট আসল গন্তব্য ঠিকানায় পৌছিয়ে দেয়।
রাউটারের প্রয়োজনীয়তা
দুটি আলাদা নেটওয়ার্কের মধ্যে প্যাকেট আদান প্রদান করায় রাউটারের আসল কাজ হলেও আজকের মডার্ন রাউটার গুলো এর চেয়ে আরো বেশি কিছু করে থাকে।
- এতে ৪-৮ টি সুইচ পোর্ট থাকে, যা লোকাল শেয়ারিং যেমন প্রিন্টার ব্যবহার করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
- আপনার লোকাল এরিয়াতে নেটওয়ার্ক অ্যাড্রেস ট্র্যান্সলেসন (NAT) পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রত্যেকটি ডিভাইজকে একটি ইউনিক আইপি প্রদান করে। এই আইপি গুলো ইন্টারনেট বা আপনার আইএসপি এর বাহিরে।
- ডাইনামিক হোস্ট কনফিগারেশন প্রোটোকল (DHCP) ব্যবহার করে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে থাকা প্রত্যেকটি ডিভাইজকে একটি করে আইপিতে সংযুক্ত করে।
- রাউটারে আপনার লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কটিকে রক্ষা করার জন্য ডেডিকেটেড ফায়ারওয়াল থাকে।
- এতে ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (WAN) পোর্ট থাকে যাতে আপনার আইএসপির সাথে সংযুক্ত হয়ে আপনার লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কটিকে (LAN) ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করে।
- তাছাড়া ওয়্যারলেস রাউটার আপনার ডিভাইজ গুলোকে তার ছাড়ায় ওয়াইফাই এর মাধ্যমে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে।
শেষ কথা
আপনি কি এর আগে এই তিনটি নেটওয়ার্কিং ডিভাইজ গুলোর মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন? এই ডিভাইজ গুলো নিয়ে আরো পার্থক্য আপনার জানা থাকলে নিচে কমেন্ট করে আমাদের সকলের সাথে শেয়ার করুন। পোস্টটি ভালো লাগলে ফেসবুকে, টুইটারে, গুগল প্লাসে শেয়ার করুন। আপনার যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।
EmoticonEmoticon