চলাফেরা করা আর কথা বলতে থাকা, কাজ করতে করতে কথা বলা, সবসময় একে অপরের সম্পর্কে থাকা, কখনো নাগালের বাইরে না যাওয়া— সেলফোন এভাবেই আমাদের জীবন এবং কাজ করার ধরণকে এক নাটকীয় ভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৭ বিলিয়নেরও বেশি সেলফোন সাবস্ক্রিপশন হয়েছে—যা পৃথিবীর মোট মানুষের জনসংখ্যা থেকেও বেশি। সেলফোনকে আমরা সেল্যুলার ফোন, মোবাইল ফোন বা মোবাইল হিসেবেই বলে থাকি। এটি মূলত একটি রেডিও টেলিফোন যা বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে কাজ করে থাকে। তো বন্ধুরা চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক যে, কীভাবে এটি কাজ করে।
সেলফোন ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে
![সেলফোন ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে](https://bn.techubs.net/wp-content/uploads/2016/08/wifi-1536903_1280.jpg)
সেলফোন আর ল্যান্ড লাইনস যদিও একই কাজে ব্যবহার করা হয় তারপরেও এদের কাজ করার প্রযুক্তি কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। ল্যান্ড লাইনস আপনার কল গুলোকে একটি ইলেকট্রিক ক্যাবলের মাধ্যমে বহন করে আরেক কলারের কাছে পৌছিয়ে দেয়। এতে কোন স্যাটালাইট বা ফাইবার অপটিক ক্যাবলের প্রয়োজন পড়ে না। আচ্ছা ছোট বেলার ম্যাচের বাক্সের তৈরি ফোনের কথা মনে আছে আপনাদের? যেখানে একটি ম্যাচের বাক্সের সাথে আরেকটি ম্যাচের বাক্সের লাইন জুড়ে দিতাম একটি মোটা তার দিয়ে—এবং এক প্রান্তে কিছু বলা হলে তা আরেক প্রান্তে শোনা যেতো। সম্পূর্ণ শব্দ, তরঙ্গের আকারে তারের ভেতর দিয়ে আরেক ম্যাচের বাক্সে পৌঁছাত। সত্যি কথা বলতে ল্যান্ড লাইনস এই খেলনা ফোন ছাড়া আর কিছুই নয়। খেলনা ফোনের মতো এটিও একই সিস্টেম ব্যবহার করে। একটি ফোন থেকে কল দিলে সেই কল সরাসরি তারের সাথে সংযুক্ত থাকা আরেকটি ফোনে গিয়ে পৌঁছায়।
কিন্তু সেলফোনের কাজ করার ধরণ সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে কল করার জন্য কোন তারের প্রয়োজন পড়ে না। তাহলে কীভাবে এটি কাজ করে? এটি কাজ করে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে—সকল কলকে এই তরঙ্গের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে এই কাজ করতে ল্যান্ড লাইনস তারের সাহায্য নিয়ে থাকে।
আপনি এখন কি করছেন? চলাফেরা করছেন, ঘরে বসে আসেন, ট্রেনে বা বাসে ভ্রমন করছেন? আপনি যাই কিছু করুন না কেন আপনি কিন্তু সর্বদায় ডুবে রয়েছেন ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক রেডিও তরঙ্গের মধ্যে। আপনার ঘরের টিভি, তার ছাড়া টেলিফোন, রেডিও প্রোগ্রাম অথবা আপনার ঘরের ওয়্যারলেস দরজার বেল ইত্যাদি সব কিছুই কিন্তু ব্যবহার করছে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক এনার্জি। এখানে ইলেক্ট্রিসিটি এবং ম্যাগনেটিজম একত্রিত হয়ে অদৃশ্য ভাবে স্পেসে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় আলোর সমান গতি নিয়ে (প্রতি সেকেন্ডে ৩০০,০০০ কিলোমিটার বা ১৮৬,০০০ মাইলস)। সেলফোন আজকের দিনে সবচাইতে বেশি ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক এনার্জি ব্যবহার করছে—যা সর্বদায় আমাদের চারপাশে বিরাজমান।
কীভাবে সেলফোনের কল সম্পূর্ণ হয়ে থাকে?
![কীভাবে সেলফোনের কল সম্পূর্ণ হয়ে থাকে?](https://bn.techubs.net/wp-content/uploads/2016/08/call-15828_1280.jpg)
যখন আপনি সেলফনে কথা বলেন তখন এর ভেতরে থাকা একটি ছোট মাইক্রোফোন শব্দ গুলোকে ক্রমাগত আপ-ডাউন করিয়ে একটি ইলেকট্রিকাল সিগন্যালের প্যাটার্ন তৈরি করে। এবং এই ইলেকট্রিকাল সিগন্যালটি মূলত অ্যানালগ পদ্ধতিতে প্রসেসিং হয়। কিন্তু আপনার ফোনের ভেতর আরেকটি মাইক্রো চিপ থাকে যাকে মূলত এডিসি (অ্যানালগ টু ডিজিটাল কনভার্টার) বলা হয়ে থাকে—এটি ইলেকট্রিকাল সিগন্যালকে ডিজিটে (সংখ্যায়) রূপান্তরিত করে। এখন এই ডিজিট গুলোকে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে ফোনের ছোট্ট অ্যান্টেনা (কিছু দেশে অ্যান্টেনাকে এইরিয়াল-Aerial বলা হয়ে থাকে) ব্যবহার করে ছুড়ে মারা হয়। এখন এই রেডিও তরঙ্গ আলোর গতিতে বাতাসে ভাসতে থাকে ততোক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন নিকটস্থ সেলফোন মাস্তুলের (টাওয়ার) কাছে পৌঁছাতে পারে।
এবার টাওয়ার সেই সিগন্যালটি গ্রহন করে এবং সেটি এর প্রধান স্টেশনের কাছে পাঠিয়ে দেয়—যেখানে কার্যকর ভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে যে, প্রত্যেকটি লোকাল সেলফোন নেটওয়ার্কে ঠিক কি ঘটবে। আর একেই বলা হয়ে থাকে সেল (Cell)। প্রধান স্টেশন থেকে কল গুলোকে তার গন্তব্যের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। একই নেটওয়ার্কে অবস্থিত দুইটি ফোনের মধ্যে কল সম্পূর্ণ হতে প্রথমে কলটি গন্তব্যের ফোনের কাছের প্রধান স্টেশনে গিয়ে পৌঁছায় এবং সর্বশেষে গন্তব্য ফোনে পৌঁছায়। কিন্তু এক নেটওয়ার্কের ফোন থেকে আরেক নেটওয়ার্কের ফোনে বা ল্যান্ড লাইনে কল পৌঁছাতে সেই কলটিকে আরো বেশি দূরত্ব অতিক্রান্ত করতে হয়। প্রথমে দুই নেটওয়ার্কের মধ্যের একটি সংযোগ থাকতে হয় তারপর কলটি বিভিন্ন স্টেশন থেকে গন্তব্য ফোনে গিয়ে পৌঁছায়।
কীভাবে সেলফোন টাওয়ার সাহায্য করে থাকে?
![সেলফোন টাওয়ার](https://bn.techubs.net/wp-content/uploads/2016/08/telecommunications-mast-571354_1280.jpg)
প্রথম নজরে দেখতে গেলে, সেলফোন ঠিক দুটি ওয়্যাকি ট্যোকির মতো কাজ করে—যেখানে দুইটি ব্যাক্তির কাছে থাকে দুটি রেডিও (প্রত্যেকটি রেডিও রিসিভার এবং সেন্ডার হিসেবে কাজ করে থাকে) যার মাধ্যমে সরাসরি বার্তা পাঠানো হয়ে থাকে (যেমন টেবিল টেনিস খেলার সময় এক প্লেয়ার অন্য প্লেয়ারকে লাগাতার বল পাস করতে থাকে)। কিন্তু এভাবে যোগাযোগ করার সবচাইতে বড় সমস্যা হলো এই রেডিও সিগন্যাল শুধু মাত্র একটি নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। এবং অন্যকেউ যদি যোগাযোগ করতে আরম্ভ করে তবে একটি সিগন্যালের সাথে আরেকটি সিগন্যাল পেঁচিয়ে যেতে পারে। এতে হয়তো ঠিক মতো বোঝায় যাবে না যে, আপনি ঠিক কার সাথে কথা বলছেন। আর এই সমস্যা সমাধান করার জন্যই সেলফোন গুলো কাজ করে সম্পূর্ণ এক আলাদা পদ্ধতিতে।
একটি সেলফোনে একটি রেডিও ট্রান্সমিটার থাকে, যা রেডিও সিগন্যালকে প্রেরন করতে সাহায্য করে। আবার একটি রেডিও রিসিভারও লাগানো থাকে, যা অন্য ফোন থেকে আসা সিগন্যালকে গ্রহন করে। কিন্তু সেলফোনে থাকা এই রেডিও ট্রান্সমিটারটি এবং রেডিও রিসিভারটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ হয়ে থাকে না—যার মানে সেলফোন খুব বেশি দূরে সিগন্যাল পাঠাতে পারে না। এটা কিন্তু কোন খুঁত নয়—বরং এভাবেই এদের ইচ্ছা করে ডিজাইন করা হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি সেলফোনকে তার নিকটস্থ টাওয়ার এবং প্রধান স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন পড়ে। এই প্রধান স্টেশন কি করে? এটি নিকটস্থ সকল সেলফোন থেকে অনেক সিগন্যাল গ্রহন করে এবং এই সিগন্যাল গুলোকে এদের গন্তব্যে পাঠিয়ে দেয়। আর এই কারনেই মোবাইল টাওয়ার গুলো এতো বিশাল আকৃতির হয়ে থাকে। এগুলো অনেক শক্তিশালী অ্যান্টেনা হয়ে থাকে যা সচরাচর কোন পাহাড়ের উপরে কিংবা কোন লম্বা বিল্ডিং এর ছাঁদে দেখতে পাওয়া যায়।
বন্ধুরা যদি এই মোবাইল টাওয়ার গুলো না থাকতো তবে আপনার মোবাইলের আকৃতি এতো সুন্দর আর চিকন করা কখনোয় সম্ভব হতো না। কেনোনা তখন আপনার ফোনের সাথে লাগানো থাকতো বড় বড় উচ্চ পাওয়ারের অ্যান্টেনা এবং এই অ্যান্টেনা গুলোকে পাওয়ার দেওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়তো অনেক বিশাল পাওয়ার সোর্স। আর এগুলো থাকার ফলে যা তৈরি হতো তা আর কিছু হোক, কিন্তু মোবাইল ফোন কখনোই বলা যেতো না। একটি মোবাইল ফোন স্বয়ংক্রিয় ভাবে এর নিকটস্থ সেলটির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং কল করার জন্য—মানে সিগন্যাল পাঠানোর জন্য সামান্য কিছু ব্যাটারি পাওয়ার ব্যবহার করে (যার ফলে ফোনের ব্যাটারি অপচয় অনেক কমে যায় এবং কোন কলের সাথে কোন কল জড়িয়ে যায় না)।
সেলস (Cells) আসলে কি করে?
![সেলস (Cells)](https://bn.techubs.net/wp-content/uploads/2016/08/talk-845619_1280.jpg)
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেলস নিয়ে এতো ঝামেলা কিসের? কেন একটি মোবাইল ফোন আরেকটি মোবাইল ফোনের সাথে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করে না? এখন মনে করুন আপনার এলাকাতে একই সময়ে কিছু সেলফোন তাদের একে অপরের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছে এবং তাও আবার একই প্রকারের রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে। তাহলে এই অবস্থায় সিগন্যাল গুলো অবশ্যয় বাঁধা পাবে এবং একে অপরের সাথে গুলিয়ে একাকার হয়ে যাবে। তবে এই সমস্যা থেকেও উদ্ধার হওয়ার আরেকটি উপায় রয়েছে—যেমন প্রত্যেকটি কলের জন্য আলাদা আলাদা রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা। যদি প্রত্যেকটি সেলফোন সম্পূর্ণ আলাদা রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে তবে সহজেই প্রত্যেকটি কলকে আলাদা রাখা সম্ভব হবে।
আর এই পদ্ধতি সত্যিই ভালো কাজ করবে যদি কোন এলাকাতে মাত্র কয়েকটা ব্যাক্তি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। কিন্তু মনে করুন আপনি একটি অনেক বড় শহরের মাঝামাঝি রয়েছেন এবং একই সময়ে লাখো লোক কল করছে বিভিন্ন জায়গায়। তবে এখানে লাখো আলাদা ব্যান্ডের রেডিও তরঙ্গের প্রয়োজন পড়বে—যতো গুলো রেডিও তরঙ্গ ব্যান্ড মজুদই নেই। এখন এই সমস্যা সমাধান করার জন্য প্রয়োজন হবে এই বিশাল শহরটিকে ছোট ছোট এলাকাতে ভাগ করার। যেখানে প্রত্যেকটি এলাকার জন্য থাকবে তার নিজস্ব একটি মোবাইল টাওয়ার এবং প্রধান স্টেশন। আর এই এলাকা গুলোকেই সেলস বুঝানো হয়।
প্রত্যেকটি সেলের একটি নিজস্ব মোবাইল টাওয়ার এবং প্রধান স্টেশন রয়েছে—যেখানে সকল তৈরি হওয়া কল গুলো এবং রিসিভ হওয়া কল গুলো একত্রিত হয়ে থাকে এবং সেখান থেকে তাদের গন্তব্যের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। সেলস একই সময়ে অনেক কল নিয়ন্ত্রন করার সিস্টেমে কাজে লেগে থাকে। কোন এলাকায় যতো বেশি সেলস থাকবে এর মানে সেখানে ততোবেশি কল একসাথে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে। সহজে বিশেষ করে অনেক সেলস থাকে তাই কেনোনা সেখানে একসাথে অনেক কল আদান প্রদান হয়ে থাকে। গ্রামে কম সেলস থাকার জন্য প্রায়ই নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যা ঘটে থাকে।
কীভাবে সেলফোন সেলস কল নিয়ন্ত্রন করে?
![woman-1447085_1280](https://bn.techubs.net/wp-content/uploads/2016/08/woman-1447085_1280.jpg)
মনে করুন আপনি A এলাকা থেকে B এলাকার একটি মোবাইল ফোনে কল করছেন। তবে আপনার কলটি প্রথমে আপনার ফোন থেকে A সেলে যাবে অর্থাৎ A সেলের টাওয়ারের নিকট পৌঁছাবে এবং সেটি প্রধান ষ্টেশনে পৌঁছানোর পরে B সেলের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এবার কলটি B সেল থেকে প্রসেস হয়ে সর্বশেষে তার গন্তব্যের ফোনে গিয়ে পৌঁছাবে।
তো এতো হলো সাধারন কলের ক্ষেত্রে। কিন্তু যদি কোন ব্যাক্তি কোন বাসে ভ্রমন করতে করতে কল করে তাহলে কি ঘটে? চলুন আরেকটি উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক। মনে করুন একটি ব্যাক্তি A সেল থেকে আরেকটি ব্যাক্তিকে B সেলে কল করলো। এবং কল করে কথা বলতে বলতে ব্যাক্তিটি যথাক্রমে C, D, এবং E সেল অতিক্রান্ত করছে। তবে এই ক্ষেত্রে কলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে A সেল থেকে B সেলে তারপরে C, D এবং E সেল থেকে এভাবে একটি থেকে আরেকটি সেলে কল পার হয়ে এসে সেখান থেকে প্রসেসিং হবে। এবং পরিশেষে তা B সেলে থাকা গন্তব্যের ফোনে গিয়ে পৌঁছাবে। আপনার মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক খুব ভালো করে জানে যে আপনার ফোন থেকে কোনটি আপনার নিকটস্থ সেল এবং কোন থেকে কোন সেলের দূরত্ব কতটুকু। আর এসকল হিসেব করে কল একটি সেল থেকে আরেকটি সেলে সম্পূর্ণ পার হয়ে যেতে পারে এবং এতে কলের কোন বাঁধা পেতে হয় না।
সেলফোনের প্রকার
![সেলফোনের প্রকার](https://bn.techubs.net/wp-content/uploads/2016/08/pokemon-1548194_1280.jpg)
একদম প্রথমের মোবাইল ফোন গুলো অ্যানালগ প্রযুক্তির উপর কাজ করতো। আর এই প্রযুক্তির উপরে এখনো টেলিফোন গুলো কাজ করে থাকে। আপনার ভয়েস সরাসরি একটি কম্পমান তরঙ্গের মাধ্যমে আপ-ডাউন করতে করতে আরেক ফোনের নিকটে গিয়ে পৌঁছাত। এই তরঙ্গকে বলতে পারেন আপনার ভয়েসের একটি অ্যানালোজি। (ডিজিটাল এবং অ্যানালগ প্রযুক্তি নিয়ে লেখা বিস্তারিত পোস্টটি পড়লে এই ব্যাপারটি আরো বুঝতে সুবিধা হবে)
কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ মোবাইল কাজ করে থাকে ডিজিটাল প্রযুক্তির উপরে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে আপনার কণ্ঠের শব্দকে পরিবর্তন করে নাম্বারে সাজানো হয়ে থাকে এবং এই নাম্বার গুলো বাতাসে প্রেরন করা হয়ে থাকে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করার রয়েছে অনেক সুবিধা। এরমানে সেলফোন থেকে প্রেরন এবং গ্রহন করার সম্ভব কম্পিউটারাইজ ডাটা। আর এই জন্যই আজকের মোবাইল ফোন গুলো প্রেরন ও গ্রহন করতে পারে টেক্সট ম্যাসেজ (SMS), ওয়েব পেজ, ডিজিটাল ফটো, এম্পিথ্রী মিউজিক ইত্যাদি। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করার আরেকটি সুবিধা হলো কোন কল ট্র্যান্সমিট করার আগে তা ইনক্রিপ্ট (ইনক্রিপশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন) করা সম্ভব। যাতে কেউ আপনার ফোন কল আড়ি পেতে শুনতে না পায়। অ্যানালগ প্রযুক্তির মোবাইল ফোনের সাথে এটি একটি সবচাইতে বড় সমস্যা ছিল যে, কেউ রেডিও স্ক্যানার ব্যবহার করে যেকোনো কল আড়ি পেতে শুনতে পারতো। কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তি এখনকার ফোন গুলোকে বানিয়েছে আরো বেশি নিরাপদ।
আজকের সম্পূর্ণ দুনিয়া মোবাইল ফোনের হাতে
মোবাইল ফোন আমাদের যোগাযোগ করার পদ্ধতিকেই সম্পূর্ণভাবে পালটিয়ে দিয়েছে। ১৯৯০ এর দিকে পৃথিবীর মাত্র ১ শতাংশ জনগণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো। কিন্তু আজ আমরা প্রায় প্রত্যেকে আমাদের বেশিরভাগ সময়ই মোবাইল ফোনের সাথে কাটিয়ে থাকি। ২০০১ সালের একটি পরিসংখ্যান অনুসারে পৃথিবীর মাত্র ৫৮ শতাংশ জনগন ২জি মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতো। কিন্তু ২০১৫ সালের মধ্যে এই ব্যবহার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ শতাংশে। এবং ২০১৫ এর শেষের দিকে ও বর্তমান ২০১৬ তে প্রায় ৭ বিলিয়ন সেলফোন সাবস্ক্রিপশন রয়েছে—গোটা পৃথিবীতে এখনো এতো মানুষই নেই।
মোবাইল ফোন বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করে থাকেন। ২০০০ সালের দিকে ফিরে গেলে, তখন মানুষ শুধু সরাসরি কথা বলা এবং সর্ট ম্যাসেজ (SMS) সেন্ড করার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো। তাছাড়া তখন বহুত মানুষেরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো শুধু ইমারজেন্সি কাজের জন্য। এফসিসি এর তথ্য অনুসারে, অ্যামেরিকাতে প্রায় ৭০ শতাংশ ইমারজেন্সি কল আসতো সেলফোন থেকে।
কিন্তু বর্তমানে মোবাইল ফোন রয়েছে সর্বত্র। মানুষ এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে ইমেইল আদান প্রদান করে, ওয়েব ব্রাউজিং করে, মিউজিক ডাউনলোড করে, সোশ্যাল মিডিয়াতে যুক্ত থাকে এবং অনেক প্রকারের অ্যাপস রান করায়। আর এই বহুমুখী ক্ষমতার মোবাইল ফোনকে বলা হয়ে থাকে স্মার্টফোন। যেখানে পুরাতন ফোন গুলো শুধু মোবাইল নেটওয়ার্কের উপর নির্ভরশীল ছিল সেখানে বর্তমানে স্মার্টফোন গুলো ডাটা অ্যাক্সেস করতে এবং বিভিন্ন প্রকারের কমুনিকেসন সম্পূর্ণ করতে ব্যবহার করে থাকে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক (ওয়াইফাই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অবশ্যয় আমার লেখা পোস্টটি পড়ুন) ।
সেলফোন এবং মোবাইল ব্রডব্যান্ড
![telecommunications-818114_1280](https://bn.techubs.net/wp-content/uploads/2016/08/telecommunications-818114_1280.jpg)
বন্ধুরা এই প্যারাগ্রাফে এখন এই সম্পর্কে কি লিখছিনা কিন্তু খুব শীঘ্রই FDMA, TDMA, CDMA, WCDMA, এবং HSDPA/HSPA নিয়ে একটি লম্বা চৌরা পোস্ট করে ফেলবো। যেখানে মোবাইল ব্রডব্যান্ড সম্পর্কিত সকল কনফিউশন দূর করে দেবো। তাই আপনাকে একটু ধৈর্য ধরে টেকহাবস এর সাথে থাকতে হবে।
সেলফোন কি আপনার স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি করে?
এই প্রশ্নটি প্রায় সকলের মনেই ছিল, এটা এখন থেকে নয়—বরং সেলফোন আবিষ্কার হওয়ার পর থেকেই মানুষ চিন্তিত ছিল যে, মোবাইল ফোন যেহেতু রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে কাজ করে তাই এ থেকে আমাদের শরীরের কি কোন ক্ষতি হতে পারে কিনা? দেখুন কোন বিজ্ঞানী এখনো পর্যন্ত তার গবেষণায় এটি প্রমানিত করতে পারেন নি যে, সেলফোন রেডিয়েশন থেকে কোন ক্ষতি হতে পারে। এ নিয়ে আমার লেখা আরেকটি বিস্তারিত পোস্ট রয়েছে। তাই এখানে আর বিশেষ কিছু আলোচনা করলাম না। ধন্যবাদ সবাইকে সব সময় নতুন কিছু পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
tag: সেল ফোন, মোবাইল, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ফোন কিভাবে কাজ করে।
tag: সেল ফোন, মোবাইল, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ফোন কিভাবে কাজ করে।
EmoticonEmoticon