আপনি যদি আমার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজ রুট করার সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়ে থাকেন—তাহলে নিশ্চয় জানেন যে, রুট করার মাধ্যমে আপনার ফোনের সব অসাধারণ ফিচার আনলক করা সম্ভব। ফোনের স্পীড বাড়ানো সম্ভব, অ্যাপ্লিকেশন গুলো দ্বারা যেকোনো কাজ করানো সম্ভব, সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম পরিবর্তন করা সম্ভব। যদি রুটিং করার এতো সুবিধা হয়, তাহলে ফোন ফ্যাক্টরি থেকেই রুটেড অবস্থায় কেন থাকে না? গুগল নিজে রুট করাকে কখনোই সমর্থন করে না, গুগলের মতে ডিভাইজ রুট করা মানে ফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া—তাই অ্যান্ড্রয়েডের নতুন ভার্সনে গুগল সর্বদা নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করে দেয় (যেগুলো শুধু পূর্বে রুট করার মাধ্যমেই করা যেতো) যাতে রুটিং এর প্রয়োজনীয়তা কমানো যায়। কিন্তু কেন রুটিং এর বিপক্ষে এতোটা যুদ্ধ, এই আর্টিকেলের মাধ্যমে সমস্ত বিষয়টি পরিষ্কার করার চেষ্টা করবো।
নিরাপত্তা
প্রথমত কারণ, রুটিং আপনার ফোনের নিরাপত্তার স্তরকে ধ্বংস করে দেয়। প্রত্যেক অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে এবং এরা স্যান্ডবক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করে, অর্থাৎ প্রত্যেকটি অ্যাপ্লিকেশন নিজস্ব এক পরিবেশের মধ্যে বন্ধী থাকে, এবং প্রত্যেকটি অ্যাপস এর নিজস্ব নিজস্ব অ্যাপ ডাটা থাকে। স্যান্ডবক্স প্রযুক্তিতে কাজ করার জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন কখনোই আরেকটি অ্যাপ্লিকেশনের অ্যাপ ডাটা অ্যাক্সেস করতে সক্ষম নয়। কোন অ্যাপ্লিকেশন যতোই পারমিশন নিয়ে রাখুক না কেন, অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম কখনোই একে আরেকটি অ্যাপের উপর কাজ করার ক্ষমতা প্রদান করে না। ধরুন আপনার ফোনে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার অ্যাপ রয়েছে, যেখানে আপনার সমস্ত অ্যাকাউন্ট পাসওয়ার্ড গুলো ঐ অ্যাপটি তার অ্যাপ ডাটাতে সেভ করে রেখেছে। এখন আপনার ফোনে কোন ম্যালিসিয়াস অ্যাপ ইন্সটল করানো হলো যেটি ঐ পাসওয়ার্ড ম্যানেজার থেকে পাসওয়ার্ড গুলো চুরি করতে চায়, এখানে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজ সিকিউরিটি সিস্টেম কখনোই ঐ ম্যালিসিয়াস অ্যাপকে তার কার্জসিদ্ধি করতে দেবে না।
কিন্তু ফোন রুট করার মাধ্যমে এই সিকিউরিটি ফিচারটি আর কাজ করতে পারে না। যেকোনো অ্যাপ চাইলে ফোনের যেকোনো হার্ডওয়্যার, যেকোনো সফটওয়্যার অ্যাক্সেস করতে পারে এবং যা ইচ্ছা তা কান্ড চালাতে পারে। কোন অ্যাপ চাইলে সম্পূর্ণ সিস্টেমের উপর কব্জা করে নিতে পারে, তাদের বাঁধা দেওয়ার মতো আর কিছু থাকে না। আর এর ফলে ম্যালিসিয়াস অ্যাপ্লিকেশন গুলো আপনার ডিভাইজের ক্ষতি সাধিত করতে পারে, যেটা মোটেও ভালো কথা নয়।
তাছাড়া রুট পারমিশন আনলক করার মাধ্যমে সিস্টেমের যেকোনো ক্রিটিক্যাল ফাইল গুলো পর্যন্ত ডিলিট করা সম্ভব, এতে আপনার অপারেটিং সিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং ফ্যাক্টরি রিসেট করার মাধ্যমেও ডিলিট করা ফাইলকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। আপনি যদি না জানেন, আপনি কি করছেন, তবে রুটিং আপনার ফোনের জন্য ধংসের মূল কারণ হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। কিন্তু সাধারনভাবে ফোনের সিস্টেম ফাইলের সাথে নড়াচড়া করার আদেশ দেওয়া থাকে না। শুধু অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে নয়, উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমেও আপনি একজন অ্যাডমিন হওয়ার পরেও সি ড্রাইভ থেকে সিস্টেম ফাইল গুলো ডিলিট বা মডিফাই করতে পারবেন না। কেনোনা অপারেটিং সিস্টেম নির্মাতারা কখনোই চান না, আপনি ভুল করে বা জেনে অপারেটিং সিস্টেমের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলেন।
রুটিং ম্যালওয়্যারকে স্বাগতম জানায়
সিস্টেমের সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস, মানে কোন ম্যালওয়্যার সিস্টেমের সাথে যা ইচ্ছা তা করতে পারে এবং সাধারনের তুলনায় আরো বেশি এবং মারাত্মক ক্ষতি সাধিত করতে পারে। একবার যদি কোন ম্যালিসিয়াস অ্যাপ্লিকেশন রুট অ্যাক্সেস পেয়ে যায়, তবে সে বহু ম্যালিসিয়াস লুকায়িত ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস চালাতে পারে সেটা আপনার চোখেই পড়বে না। তাছাড়া আপনার সিস্টেমে কী-লগার ইন্সটল করতে পারে, যে কোন অ্যাপ থেকে তার ডাটা গুলোকে চুরি করতে পারে, হতে পারে ব্যাংকিং অ্যাপ থেকে আপনার ব্যাংক তথ্য চুরি করতে পারে, আবার ক্রিটিক্যাল সিস্টেম ফাইল গুলোও ডিলিট করে দিতে পারে।
তাছাড়া রুট পারমিশন পাওয়ার পরে কোন অ্যাপ আপনার কলিংও রিপ্লেস করে ফেলতে পারে, সাথে ম্যাসেজ, ইমেইল তো চুরি করবেই আবার আপনার লোকেশন লাগাতার ট্র্যাক করে হ্যাকারকে দিয়ে দিতে পারে। ক্রিটিক্যাল সিস্টেম ফাইল ডিলিট করার মাধ্যমে আপনার ফোনকে ব্রিক করে ফেলতে পারে, উইন্ডোজের সিস্টেম ফাইল ডিলিট হলে আবার সহজেই উইন্ডোজ রি-ইন্সটল করা সম্ভব। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন, আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজ টি ব্রিক হয়ে গেলো এবং অনেক ইউটিউব ভিডিও দেখেও ঠিক করতে পারছেন না, তখন সাধের ফোনটিকে ফেলিয়ে দিয়ে নতুন ফোন কিনতে হবে।
ব্র্যান্ডিং এবং ব্যবসা
বেশিরভাগ স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিই রুটিংকে সমর্থন করে না, তাই তাদের অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজ রুট করা মাত্র ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যায়। আপনি ফোন রুট করবেন, তারপরে না জেনে কোন সিস্টেম অ্যাপ ডিলিট করে ফেলবেন অথবা ফোনে ম্যালিসিয়াস অ্যাপ ঢুকিয়ে ফোনের বারোটা বাজাবেন, এতে তো স্মার্টফোন কোম্পানি দায়ী থাকবে না, তাই না।
আবার অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোন কোন ক্যারিয়ারের অফার থেকে কেনা হয়, আমাদের দেশে এই বিষয়টির জনপ্রিয়তা না থাকলেও ইউএস বা আলাদা দেশ গুলোতে ক্যারিয়ার থেকে ফোন কিনলে সেটা কমদামে পাওয়া যায়, কিন্তু অসুবিধা থাকে, ফোনটি কেবল ঐ ক্যারিয়ারের সিমেই চলতে পারবে। তাছাড়া তারা নিজের ব্র্যান্ডিং করার জন্য কিছু অ্যাপস ইন্সটল করে রাখে, যেগুলোকে আন-ইন্সটল করা যায় না। কিন্তু রুট করার মাধ্যমে তাদের দেওয়া অঝথা অ্যাপস গুলোকে সহজেই আন-ইন্সটল করা সম্ভব এবং বেশিরভাগ সময় ফোনটিও অন্য ক্যারিয়ারের সিম ব্যবহার করার জন্য আনলক করা সম্ভব। আর কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ডিং বাঁচাতে কখনোই এই ফিচার গুলোকে সমর্থন করবে না, তাই তারা রুটিংকে কখনোই সমর্থন করে না।
অপরদিকে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ফ্রী’তে হলেও গুগল তার ফোন গুলোকে থেকে টাকা ইনকাম করার চেষ্টা করে। অ্যাপ ডেভেলপার’রা তাদের অ্যাডে অ্যাডেসেন্স অ্যাড ব্যবহার করে, এতে ডেভেলপার এবং গুগল উভয়ই মুনাফা ইনকাম করে। কিন্তু একজন ইউজার হিসেবে আপনি হয়তো অ্যাডকে পছন্দ করে না, কেনোনা অ্যাপ্লিকেশনে অ্যাড অনেক বিরক্তিকর ব্যাপার, একে তো অঝথা ব্যান্ডউইথ নষ্ট করে এবং দ্বিতীয়ত ইউজিং এক্সপেরিয়েন্স নষ্ট করে। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজ রুট করলে সেখানে অ্যাড ব্লকার অ্যাপ ঠিকঠাক মতো কাজ করে, এবং সকল অ্যাড ব্লক করে দেয়। এতে গুগলের মুনাফা ইনকামে লস হয়ে যায় আর এই কারনেই গুগল ব্যবসার দিকে লক্ষ্য রেখে রুটিংকে নাকজ করে।
আপনার ডিভাইজটি সম্পর্কে আপনার যদি ভালো ধারণা থাকে, এবং কোনটি অ্যাপটি কোন কাজের বা সেটা বিশ্বস্ত কিনা, চেনার ক্ষমতা থাকে, তবে আপনি রুটিং করতে পারেন। কেনোনা রুট করার মাধ্যমে আপনি সেই ফিচার গুলোকে আনলক করতে পারবেন, যেগুলো সাধারনভাবে অ্যান্ড্রয়েড আপনাকে করার পারমিশন প্রদান করবে না। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজ সিস্টেম এবং সিকিউরিটি সম্পর্কে যদি আপনার স্পষ্ট ধারণা না থাকে, তো রুট কখনোই আপনার জন্য নয়। আর এই আর্টিকেল থেকে এতক্ষণে নিশ্চয় জেনে গেছেন, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইজ গুলো ফ্যাক্টরি থেকেই রুট হয়ে কেন আসে না!
তো আপনি কি আপনার ফোন রুট করতে চান? বা করেছেন? নাকি আপনিও আমার মতো রুট করা পছন্দ করে না? নিচে কমেন্ট করে আমাদের সব কথা শেয়ার করুণ। আশা করছি সেখানে অনেক ভালো আড্ডা জমবে।
EmoticonEmoticon