বর্তমানে আমাদের দেশের যে অবস্থা অনলাইনে নিরাপদ থাকাটা এখন দিনের পর দিন বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ, কেনাকাটা ও টাকা
পয়সার লেনদেন এর মতো দৈনন্দিন কাজ গুলো যখন অনলাইনের হাতে চলে গেছে তখন নিরাপত্তা তো নিশ্চিত করতেই হবে। আপনাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে যেখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের প্রশ্ন। আজকের এই পোস্টটি পড়ুন এবং জানুন যে কীভাবে অনলাইন এ নিরাপদ থাকবেন, এবং আপনার নিরাপত্তার সঠিক যত্ন নেবেন। আপনি যদি আলসে ধরনের হয়ে থাকেন বা আপনার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবেন না তবে আমি বলবো এটাই সর্বউত্তম হবে আপনি সতর্ক হয়ে যান। তো চলুন এবার দেখা যাক, যে কীভাবে অনলাইনে নিরাপদ থাকা যায়।
আপনার ভালো লাগতে পাড়া কিছু পোস্টঃ
- পুরাতন মোবাইল বিক্রি করার আগে অবশ্যই দেখুন
- ক্লাউড কম্পিউটিং কি? ক্লাউড কম্পিউটিং এর বিস্তারিত জানুন
- চাইনিজ ফোন গুলো কেনো এত সস্তা হয়? চাইনিজ ফোন কি কেনা উচিৎ?
- কম্পিউটার প্রসেসর i3, i5, i7 এর বৃত্তান্ত জানুন – আপনি কোনটা কিনবেন?
- কি কারনে স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়? এটা কি স্বাভাবিক?
অনলাইনে নিরাপদ থাকতে আপনার পাসওয়ার্ডকে রক্ষা করুন
পাসওয়ার্ড হলো অনলাইন নিরাপত্তার প্রথম ধাপ। আপনি অবশ্যয় আপনার পাসওয়ার্ডটি যে কারো সাথে শেয়ার করতে পারেন না। হাঁ আপনাকে অবশ্যয় আপনার পাসওয়ার্ডটি নিরাপদে গোপন রাখতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে এমন একটি পাসওয়ার্ড নির্বাচন করুন যেটা কেও সহজে কল্পনা করতে না পারে। আমার মতে যতো সম্ভব বড় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, কমপক্ষে ২০-৩০ টি ক্যারেক্টার এর। পাসওয়ার্ড এর ভেতর ছোট হাতের অক্ষর, বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা, এবং কমা ডারি সেমিকোলন ইত্যাদির মতো বিশেষ ক্যারেক্টার ব্যবহার করুন।
কম্পিউটার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, Bruce Scheier সুপারিশ করেন এমন কিছু বাক্য পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে যা আপনার সহজেই মনে থাকবে। তারপর সেই বাক্য কে পাসওয়ার্ড এ পরিবর্তন করার কথা বলেন। আপনাদের বোঝার সুবিধার খাতিরে আমি একটি উদাহরন দিচ্ছি। মনে করুন “When I was 11, my sister was born” এটি আপনার একটি পরিচিত ঘটনা। তাহলে এ থেকে পাসওয়ার্ড হবে “Wiw11,mswborn” এই রকম। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
এ তো হলো কম্পিউটার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এর পরামর্ষ, আরে দাঁড়ান ভাই আমারো কিছু কথা আছে! আমি মনে করি এতো কষ্ট করে পাসওয়ার্ড বানিয়ে বা মনে রাখার ঝামেলা না করে ভালো একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করাই ভালো। পাসওয়ার্ড রক্ষা করার কথা বলতে গিয়ে কিন্তু আরেকটি সর্ত থাকে তা হলো প্রতিটি সাইট বা প্রতিটি অনলাইন একাউন্ট এ আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। এখন আপনি আমাকে বলুন যে আপনি কয়টা সাইট এর জন্য কয়টি বাক্য তৈরি করবেন এবং কয়টি কীভাবে মনে রাখবেন? এর জন্য প্রয়োজন একটি ভালো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার। এবং এমন একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার যেটি সবজায়গা অর্থাৎ সকল ডিভাইজ এর জন্য পাওয়া যাবে। হাঁ আপনি আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার এর নিজস্ব পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন তবে এর চেয়েও বেশি ভালো হয় আপনি যদি LastPass মতো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করেন। আমি এর কথা বলছি কেনোনা আমি নিজে এটিকে ব্যবহার করে থাকি। আপনাকে শুধু LastPass এর পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হবে। ব্যাস, আপনার সব পাসওয়ার্ড LastPass মনে রাখবে।
অনলাইনে নিরাপদ থাকতে আপনার ই-মেইল কে রক্ষা করুন
আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই বা করুন এই ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটস অ্যাপ এবং টেক্সট ম্যাসেজ এর যুগে মানুষ এখনো তাদের ভেতর যোগাযোগ রাখতে ই-মেইল ব্যবহার করে থাকে। এবং এটির ফল স্বরূপ, ই-মেইল এখনো হ্যাক হয়। তাই আপনি যদি একজন ই-মেইল ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তবে অনলাইনে নিরাপদ থাকতে এবং আপনার ই-মেইল কে নিরাপদ রাখতে কিছু সুরক্ষার কথা আপনার ভুলে গেলে একদমই চলবে না।
ই-মেইল এ আসা যেকোনো লিঙ্ক এ ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। আগে লিঙ্কটি দেখে নিন। অথবা যাচায় করে দেখুন যে ই-মেইল টি কার কাছ থেকে এসেছে, তারপর লিঙ্ক এ ক্লিক করুন। ই-মেইল এ আসা যেকোনো Attachments কখনোই তাড়াহুড়ো করে ওপেন করবেন না। এতে ক্ষতিকর সফটওয়্যার থাকতে পারে যা আপনার কম্পিউটার এর সকল তথ্য চুরি করে নিয়ে যেতে পারে বা আপনার সকল পাসওয়ার্ড হাইজ্যাগ হতে পারে।
সুতরাং খুব সাবধান থাকতে হবে। তবে আপনাকে যদি Attachment টি খুলতেই হয় তবে ভালো করে বুঝে দেখুন। ই-মেইল টি কার কাছ থেকে এসেছে সেটি দেখুন, তাকে আপনি বিশ্বাস করেন কি না। আপনার ই-মেইল কে রক্ষা করার জন্য আরো কিছু টিপস আমি পরে শেয়ার করবো আসা করি।
অনলাইন শপিং করার সময় কিছু জিনিস মনে রাখুন
আপনি যদি অনলাইন শপিং করতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন তবে সেখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় থেকেই যায়। তাই অনলাইনে নিরাপদ ভাবে শপিং করতে এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হওয়া থেকে বাঁচতে আপনাকে কিছু বিষয় অনুসরন করা প্রয়োজন।
আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে শুধু মাত্র সে সকল সাইট এ শপিং করুন যে সাইট এর নাম এর আগে “https” আছে। সেই সাইটটির “https” এর “s” বর্ণিত করে যে, আপনি এবং আপনার ব্যবহারকৃত সেই ওয়েবসাইটটির মাঝের তথ্য একটি নিরাপদ প্রোটোকল এর মাধ্যমে আদান প্রদান হচ্ছে। আপনি বেশির ভাগ সময়ই হয়তো লক্ষ্ করে থাকবেন যে বিভিন্ন ব্যাংকিং সাইট বা শপিং সাইট কিংবা এমন কনো সাইট যেখানে আপনি সংবেদনশীল তথ্য প্রবেশ করাচ্ছেন সেই সাইট গুলোতে “https” প্রোটোকল থাকে।
যে সাইট এ “https” নেই সেখানে ক্রেডিট কার্ড না প্রবেশ করানোই ভালো। তবে খুব তাড়াতাড়ি ক্রেডিট কার্ড এর নিরাপত্তা নিয়ে একটি বিস্তর পোস্ট করে ফেলবো আশা করছি।
আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট গুলো আরো নিরাপদ করুন
বেশির ভাগ সময় আমরা কোনো অ্যাকাউন্ট এ প্রবেশ করার সময় প্রথমে আমাদের ইউজার নেম প্রবেশ করাই এবং পরে পাসওয়ার্ড প্রবেশ করায় এবং অ্যাকাউন্ট এ লগইন করে ফেলি। এখন এই লগইন করার সিস্টেম কে single-factor authorization বলা হয়। এই সিস্টেম এ আপনার পাসওয়ার্ড যদি কোনো ভাবে হারিয়ে যায় বা কেউ চুরি করে তবে চোর সহজেই আপনার অ্যাকাউন্ট এ লগইন করে ফেলতে পারবে। আর পাসওয়ার্ড চুরি হওয়াটা তো আর নতুন কিছু না। তাই অনলাইনে নিরাপদ থাকতে অর্থাৎ আপনার অ্যাকাউন্ট গুলোকে আরো নিরাপদ করা প্রয়োজন।
যার জন্য আমি বলবো single-factor authorization এর উপর নির্ভর না হয়ে Tw0-factor authorization ব্যবহার করতে। Tw0-factor authorization সম্পর্কে আমার বিস্তারিত একটি আর্টিকেল আছে, আপনি পরে আসতে পারেন। তবুও যখন এখানে আলোচনা করছি সুতরাং এখানেও কিছু বলি। Tw0-factor authorization হলো আপনার অ্যাকাউন্ট এ প্রবেশ করার জন্য প্রথমে আপনাকে ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে এবং পরে আপনার ফোন এ একটি অস্থায়ী কোড পাঠানো হবে, সেটা প্রবেশ করাতে হবে। আপনার পাসওয়ার্ড কোনো ভাবে চুরি করে ফেললেও সে আপনার অ্যাকাউন্ট এ প্রবেশ করতে পারবে না। কেনোনা লগইন করার জন্য একটি অস্থায়ী কোড এর প্রয়োজন পড়বে আর সেটা আপনার ফোন এ পাঠানো হবে, কিন্তু ভাগ্যক্রমে আপনার ফোনটি চোরের কাছে থাকবে না।
অনলাইনে নিরাপদ থাকতে আপনার মোবাইল ডিভাইজটিকে রক্ষা করুন
নিজের মোবাইল ডিজাইজটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও কিন্তু অনলাইনে নিরাপদ থাকার একটি চাবি কাঠি। আমারা বর্তমান সময়ে প্রায় সকল প্রকার অনলাইন কাজ মোবাইল দিয়েই করে থাকি। ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটার ইত্তাদির সকল তথ্য বেশির ভাগ সময় মোবাইল এ ই থাকে। সুতরাং মোবাইল ডিজাইজটিকে সুরক্ষিত না রাখলে নিরাপত্তায় ছেঁদ হয়ে যেতে পারে।
আপনার মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন টিতে সুরক্ষা কোড ব্যবহার করুন। আপনার সকল প্রকার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা কোড ব্যবহার করে নিরাপদে রাখুন। আপনার ফোনটিকে Encrypted করে রাখুন, যাতে আপনার ফোনটি চুরি হয়ে গেলেও চোর আপনার ব্যক্তিগত ডাটা না পায়।
শেষকথা
দিনদিন প্রযুক্তির সকল বিষয় গুলো কেমন যেন ঘোরপ্যাঁচ হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রতিদিনের এর পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিতে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপর যখন কথা আসে অনলাইনে নিরাপদ থাকার তখন হালকা একটু অসাবধানতা আপানার নিরাপত্তা লঙ্ঘন করতে পারে। আমি অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে মাজে মাজেই পোস্ট করি। এবং সবাইকে এই যানা বিষয় গুলোই বেশি বেশি করে মনে করিয়ে দেই। কেনোনা অনেক সময় আমারা যানা বিষয়েও ভুল করে থাকি, অসাবধানতা পালন করি। আমি চাই আপনারা সবাই অনলাইনে নিরাপদ থাকুন। আর প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নিরাপত্তা টিপস শেয়ার করার জন্য তো আমি আছিই। আসা করি আজকেই এই পোস্ট থেকে আপনারা বেশ উপকৃত হবেন। আর হাঁ পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। আপনার কোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাকে কমেন্ট করা জানাবেন। ভালো থাকুন, নিরাপদ থাকুন।
EmoticonEmoticon