ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন
ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ারকে সস্তায় ও বিশ্বস্ততার সাথে গ্রাহক পর্যায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে সমগ্র ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেমকে একটি কমন নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়, এই নেটওয়ার্কটি দুটি অংশ ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন।
- প্রাইমারি ট্রান্সমিশন কি?
উৎপাদন কেন্দ্রের প্রেরণ প্রান্ত থেকে রিসিভিং প্রান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ অতি উচ্চ ভোল্টেজ লাইনকে প্রাইমারি ট্রান্সমিশন (লাইন) বলা হয়। প্রাইমারি ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ 110KV, 132KV, 230KV, 400KV পর্যন্ত বা আরও বেশি হতে পারে।
- সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন কি?
রিসিভিং স্টেশন থেকে সাব- স্টেশন পর্যন্ত দীর্ঘ উচ্চ ভোল্টেজ লাইনকে সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন (লাইন) বলা হয়। সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ 33KV, 66KV হতে পারে।
- বাংলাদেশে প্রাইমারি ডিস্ট্রিবিউশন ভোল্টেজ কত?
11KV, 6.6KV, 3.3KV ইত্যাদি।
- সেকেন্ডারি ডিস্ট্রিবিউশন কি?
যে পদ্ধতিতে ১১কেভি প্রাইমারি ডিস্ট্রিবিউশন লাইন হতে শহর বা লোকালয়ে বা কারখানা এলাকায় অবস্থিত ডিস্ট্রিবিউশন ট্রান্সফরমারে ভোল্টেজ কমিয়ে 400 V অথবা 230 V সিস্টেমে বিভিন্ন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার বেবস্থা করা হয় তাকে সেকেন্ডারি ডিস্ট্রিবিউশন বলা হয়।
- ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন এর জন্য সর্বাপেক্ষা ভাল পদ্ধতি কি ?
সর্বাপেক্ষা ভাল পদ্ধতি হল উৎপাদন ও বিতরণের জন্য AC ব্যবস্থা এবং ট্রান্সমিশন এর জন্য DC ব্যবস্থা।
- এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বচ্চো ট্রান্সমিশন ভোল্টেজ কত?
400kV (বিবিয়ানা- কালিয়াকৈর)
- ফিডার কি?
জনবহুল এলাকা, কারখানা বা আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষে উচ্চ ভোল্টেজ উপকেন্দ্র বা গ্রিড উপকেন্দ্র হতে বিভিন্ন লোড সেন্টারে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রদানের জন্য যে untapped লাইন নির্মাণ করা হয় তাকে ফিডার বলে।
- ফিডার ও ডিস্ট্রিবিউটরের মূল তফাৎ কি?
জেনারেটিং স্টেশনের সহিত সংযোগ সাধনকারী মোটা পরিবাহীকে ফিডার বলে, যার কোন ট্যাঁপিং থাকেনা। পক্ষান্তরে গ্রাহকের সার্ভিস মেইনের সহিত সংযোগ সাধনকারী ট্যাঁপিং যুক্ত পরিবাহীকে ডিস্ট্রিবিউটর বলে, যার সমস্ত দৈর্ঘ্য বরাবর কারেন্টের মান বিভিন্ন হয়।
- ডিস্ট্রিবিউটর ও ফিডার এর মাঝে পার্থক্য কি?
সার্ভিস মেইন অপেক্ষাকৃত চিকন ক্যাবল বিশেষ যার মাধ্যমে গ্রাহকদের পাওয়ার সরবরাহ করা হয়। এটি ডিস্ট্রিবিউটরের সহিত সংযোগ থাকে। কিন্তু ডিস্ট্রিবিউটর সরাসরি ফিডারের সহিত সংযোগ থাকে।
- উচ্চ ভোল্টেজ পাওয়ার ট্রান্সমিশনের সুবিধা কি?
সুবিধাগুলো নিন্মরুপঃ
1) লাইন লস কম হয়।
2) ট্রান্সমিশন দক্ষতা বৃদ্ধি পায়
3) লাইনের ভোল্টেজ ড্রপ কম হয়
4) রেগুলেশন উন্নত হয়।
5) কম আয়তনের পরিবাহী লাগে।
6) পাওয়ার ট্রান্সমিশন ব্যয় কম হয়।
1) লাইন লস কম হয়।
2) ট্রান্সমিশন দক্ষতা বৃদ্ধি পায়
3) লাইনের ভোল্টেজ ড্রপ কম হয়
4) রেগুলেশন উন্নত হয়।
5) কম আয়তনের পরিবাহী লাগে।
6) পাওয়ার ট্রান্সমিশন ব্যয় কম হয়।
- ফ্রিকুয়েন্সি উঠানামার শতকরা হার কত?
ফ্রিকুয়েন্সি উঠানামা 2.5% এর মধ্যে থাকা উচিত।
- ডিস্ট্রিবিউটরের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ ভোল্টেজ ড্রপের হার কত?
ডিস্ট্রিবিউটরের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ ভোল্টেজ ড্রপের হার 6%
- সিস্টেম লস কি?
উৎপাদন কেন্দ্রের নিজস্ব ব্যবহার সহ যন্ত্রপাতির অপচয়, পরিবহন তারের রেজিসটেন্স জনিত অপচয় এবং অন্যান্য কারিগরি-অকারিগরি অপচয়ের কারনে সামগ্রিক ভাবে যে বৈদ্যুতিক পাওয়ার অপচয় হয় তাকে সিস্টেম লস বলে।
- পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান কম হলে সিস্টেমে কি অশুবিধা হয়?
পাওয়ার ফ্যাক্টর এর মান কম হলে অনেক বেশি আয়তনের পরিবাহীর প্রয়জন হয়, লাইন লস বৃদ্ধি পাওয়ায় সিস্টেমের দক্ষতা কমে যায় , প্রাথমিক খরচ বেড়ে যায় তাই পার ইউনিট কষ্ট বেশি হয়।
- অর্থনৈতিক পাওয়ার ফ্যাক্টর কাকে বলে?
পাওয়ার ফ্যাক্টর যে মানে উন্নিত করলে বাৎসরিক সরবচ্চ সাশ্রয় হয়, উক্ত পাওয়ার ফ্যাক্টরকে সর্বোত্তম পাওয়ার ফ্যাক্টর বলে।
- ওভার হেড লাইনের উপাদান কি কি?
ওভার হেড লাইনের উপাদান প্রধানত বার টি , যথাঃ
(১) সাপোর্ট (২) ক্রস-আরম ও ক্লাম্প (৩) ইনসুলেটর (৪) কন্ডাকটর (৫) গাই ও স্টে (৬) লাইটনিং এরেস্টর (৭) ফিউজ ও আইসুলেটিং সুইস (৮) অবিচ্ছিন্ন আর্থ তার (৯) গার্ড ওয়ার (১০) পাখি রক্ষক (১১) জাম্পার (১২) ভাইব্রেশন ড্যাম্পার
(১) সাপোর্ট (২) ক্রস-আরম ও ক্লাম্প (৩) ইনসুলেটর (৪) কন্ডাকটর (৫) গাই ও স্টে (৬) লাইটনিং এরেস্টর (৭) ফিউজ ও আইসুলেটিং সুইস (৮) অবিচ্ছিন্ন আর্থ তার (৯) গার্ড ওয়ার (১০) পাখি রক্ষক (১১) জাম্পার (১২) ভাইব্রেশন ড্যাম্পার
- কোন ধরনের পোলে টানা ব্যাবহার করা হয়?
টার্মিনাল পোলে এবং এঙ্গেল পোলের দুদিকে টানের সমতা রক্ষার জন্য টানা বা stays ব্যাবহার করা হয়।
- “H” টাইপ পোল কোথায় ব্যাবহার করা হয়?
দীর্ঘ স্পান বিশিষ্ট (১৬০ মিটার পর্যন্ত) ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনে “H” টাইপ পোল ব্যাবহার করা হয়। লাইনের যে স্থানে সুইস গিয়ার বা ট্রান্সফরমার ব্যাবহার করার দরকার পড়ে সেখানে “H” টাইপ পোল ব্যবহার করা হয়।
- ট্রান্সমিশন লাইন আর্থ করা হয় কেন?
বজ্রপাতের ফলে অথবা অন্য কোন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ইনসুলেশন ব্রেকডাউন হতে পারে। এই সম্ভাব্য দুর্ঘটনা থেকে লাইনকে রক্ষা করার জন্য ওভার হেড লাইনের শীর্ষে একটি অবিচ্চিন্ন আর্থ তার ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে অতিরিক্ত ভোল্টেজ মাটিতে ডিসচার্জ হতে পারে।
- ক্রেডল গার্ড কোথায় এবং কেন ব্যবকার করা হয়?
ওভার হেড লাইনের তার – যেখানে রাস্তা , রেল লাইন কিম্বা বাড়ীর উপর দিয়ে টানা হয়, সেখানে নিরাপত্তার জন্য কেবলমাত্র এটি ব্যবহার করা হয়। তার ছিঁড়ে যাওয়ার পর তা যেন মাটিতে পরার সুযোগ না পায়, সে জন্য এ সব যায়গায় এই ক্রেডল গার্ড ব্যবহার করা হয়।
- ওভার হেড লাইনের জন্য সাধারণত কি কি কন্ডাকটর ব্যবহার করা হয়?
(১) স্টিল কোরড অ্যালুমিনিয়াম (২) কপার (৩) অ্যালুমিনিয়াম ও (৪) গ্যালভানাইজড স্টিল কন্ডাকটর
এছাড়া কতোগুলি বিশেষ ক্ষেত্রে ফসফার ব্রোঞ্জ, কপার ক্ল্যাড, ক্যাডমিয়াম কপার ইত্যাদি তার ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া কতোগুলি বিশেষ ক্ষেত্রে ফসফার ব্রোঞ্জ, কপার ক্ল্যাড, ক্যাডমিয়াম কপার ইত্যাদি তার ব্যবহার করা হয়।
- C.S.R বলতে কি বুঝ?
একে Steel cored aluminium-ও বলে। উচ্চ ভোল্টেজ পরিবহন করার জন্য অ্যালুমিনিয়াম কন্ডাকটরের কেন্দ্রে প্রলেপ যুক্ত ষ্টীল কোর ব্যবহার করে A.C.S.R তার তৈরি করা হয়। এতে অ্যালুমিনিয়াম তারের টান সহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- ওভার হেড লাইনের পরিবাহী পদার্থের কি কি গুণাবলী থাকা দরকার?
নিন্মক্ত গুণাবলী থাকা দরকারঃ
(১) উচ্চ বিদ্যুৎ পরিবাহিতা অর্থাৎ কম আপেক্ষিক রোধ।
(২) উচ্চ টেনসাইল স্ত্রেংথ।
(৩) স্বল্প ব্যয়ী হতে হবে।
(৪) তার সক্ত ও নমনীয় হতে হবে।
(৫)উচ্চ গলনাংক সমপন্ন হতে হবে ।
(৬) তার টেকসই ও স্ক্রাব বিক্রয়যোগ্য হতে হবে।
(১) উচ্চ বিদ্যুৎ পরিবাহিতা অর্থাৎ কম আপেক্ষিক রোধ।
(২) উচ্চ টেনসাইল স্ত্রেংথ।
(৩) স্বল্প ব্যয়ী হতে হবে।
(৪) তার সক্ত ও নমনীয় হতে হবে।
(৫)উচ্চ গলনাংক সমপন্ন হতে হবে ।
(৬) তার টেকসই ও স্ক্রাব বিক্রয়যোগ্য হতে হবে।
- ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন লাইনের জন্য কপার অপেক্ষা C.S.R তার ব্যবহার করা হয় কেন?
সমান রোধ সম্পন্ন কপারের তুলনায় A.C.S.R কন্ডাকটরের ব্যাস বেশি কিন্তু ওজনে হালকা। এছাড়া সর্বোচ্চ টান সহন ক্ষমতা কপারের তুলনায় বেশি।
- স্কিন ইফেক্ট
AC বিদ্যুৎ প্রবাহ কোন পরিবাহির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় সে পরিবাহির ভিতরে প্রবেশ না করে উহার সারফেস দিয়ে প্রবাহিত হতে চেস্টা করে, এটাকে স্কিন ইফেক্ট বলে। এই স্কিন ইফেক্ট এর ফলে লাইনের রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায় যার ফলে লাইন লসও বেড়ে যায়।
- করোনা ইফেক্ট
যখন দুইটি কন্ডাক্টর এর স্পেসিং ব্যাসের তুলনায় বেশি অবস্থায় রেখে তাদের আড়াআড়িতে AC ভোল্টেজ প্রয়োগ করে ধিরে ধিরে বাড়ানো হয় তখন একটি পর্যায় আসে। এই বিশেষ পর্যায় কন্ডাক্টরের চারপাশে বাতাস ইলেক্ট্রস্ট্যাটিক স্ট্রেস হয়ে আয়নিত হয় এবং বাতাসের ইন্সুলেশন স্ট্রেংথ ভেঙ্গে যায়। এই অবস্থায় কন্ডাক্টরের চারপাশে জিম জিম শব্দসহ হালকা অনুজ্জ্বল বেগুনী রস্মি দেখা যায় এবং ওজন গ্যাসের সৃষ্টি হয়, এই অবস্থাটিকে করোনা নামে পরিচিত।
- প্রক্সিমিটি ইফেক্ট
সমান্তরাল দুইটি পরিবাহীর কারেন্ট যদি পরস্পর বিপরীতমুখী হয়, তাহলে উভয় পরিবাহীর নিকটবর্তী অংশে কারেন্ট ডেনসিটি বেড়ে যায়। আবার একমুখী কারেন্ট হলে দূরবর্তী অংশে কারেন্ট ডেনসিটি বেড়ে যায়। এ ঘটনাকে প্রক্সিমিটি ইফেক্ট বলে। ইহার প্রভাবে অসম কারেন্ট প্রবাহিত হয়, লাইনের রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধি পায় এবং সেলফ রিয়াক্ট্যান্স এর মান কমে যায়।
- স্যাগ (SAG) কাকে বলে?
দুইটি পোল বা টাওয়ারের মধ্যে কন্ডাকটর লাগানো হলে কন্ডাকটরটি কিছুটা ঝুলে পড়ে। পোল বা টাওয়ার দুইটির যে বিন্দুতে কন্ডাকটর লাগানো হয়েছে সেই বিন্দু দুইটির সংযোগকারি কাল্পনিক রেখা হতে কন্ডাকটরটির সর্বোচ্চ ঝুলকে স্যাগ (SAG) বা ঝুল বলে।
এটির সংজ্ঞা ইংরেজিতে জেনে রাখবেন-
“The difference in level between points of support and the lowest conductor is called sag”
- লোড পাওয়ার খুব কম হলে ট্রান্সমিশন লাইনে কি প্রভাব দেখা দেয়?
লোড পাওয়ার খুব কম হলে লাইনে ক্যাপাসিট্যান্সের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই অবস্থায় লাইনে সর্বদা একটি ৯০ ডিগ্রি লিডিং চার্জিং কারেন্ট। এর প্রভাবে ট্রান্সমিশন লাইনের প্রেরন প্রান্ত অপেক্ষা গ্রহন প্রান্তে ভোল্টেজ বেশি দেখা দেয় ফলে ভোল্টেজ রেগুলাশন এর মান নেগেটিভ হয়।
- ফেরান্টি ইফেক্টি কি?
মিডিয়াম বা লং ট্রান্সমিশন লাইনে ওপেন সার্কিট বা লোড শুন্য অবস্থায় কিংবা অল্প লোডে চলার সময় প্রেরন প্রান্ত অপেক্ষা গ্রহন প্রান্তের ভোল্টেজের মান বেশি হতে দেখা দেয়। এই ঘটনা বা phenomenon কে ফেরান্টি ইফেক্ট বলে।
EmoticonEmoticon