মডার্ন কম্পিউটিং ডিভাইজ স্মার্টফোন—প্রতিদিনের টুথপেস্ট আর খাওয়া দাওয়া করার মতোই জরুরী বিষয়; কারো কাছে নিশ্চয় এর চেয়েও বেশি কিছু। কিন্তু বাজারে আজকাল এতোবেশি ফোন বেড় হচ্ছে, এতে একজন সাধারন ইউজারের নিজের জন্য সঠিক ফোনটি যাচায় করা খুবই মুশকিলের কাজ। তারপরেও আজকের দিনে আমরা অনেকটাই বুঝতে এবং জানতে শিখেছি। স্মার্টফোন কেনার আগে আমরা রিভিউ দেখে নেই, স্পেসিফিকেশন দেখে নেই এবং অনেকেরই একটি ফোনের সাথে আরেকটি ফোনের তুলনা করার মতো জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের দেশে অনলাইন মার্কেট এখনো এতোটা জনপ্রিয়তা পায়নি, বেশিরভাগ স্মার্টফোন অফলাইন মার্কেট (বাজার) থেকেই কেনাবেচা হয়ে থাকে। এই অবস্থায় আপনি যদি একজন সাধারন ইউজার হোন এবং কোন দোকানে গিয়ে ফোন দেখাতে বলেন, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দোকানী আপনাকে যেকোনো ফোন চিপকিয়ে দিতে পারে। দোকানী মোটে ভেবে দেখবে না, আপনার জন্য ফোনটি উপযুক্ত হলো কিনা, সে সর্বদা প্রফিটের কথায় চিন্তা করবে। আজ আমি কিছু স্মার্টফোন কেনার টিপস বা স্মার্টফোন কেনার গাইড লাইন শেয়ার করবো—যে গুলো অনুসরন করলে, আপনি ইনস্ট্যান্টলি যেকোনো ফোন নিজেই রিভিউ করতে পারবেন এবং নিঃসন্দেহে নিজের জন্য বাজেট অনুসারে সবচাইতে পারফেক্ট স্মার্টফোনটি পছন্দ করতে পারবেন। তো চলুন আলোচনা শুরু করা যাক…
অপারেটিং সিস্টেম

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনার ফোনের জন্য কোন অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহার করবেন? এই সিদ্ধান্তটি নির্ভর করে আপনার বাজেট, আপনার পছন্দ এবং আপনার ব্যাবহারের উপর। এক কথায় যদি এর উত্তর শুনতে চান তবে আমি বলবো যেকোনো ফোনের জন্য অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম বেস্ট হবে। তবে আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড চালাতে চালাতে বিরক্ত হয়ে থাকেন বা অ্যান্ড্রয়েডের উপর ঘৃণা করেন, তবে উইন্ডোজ ফোন ইউজ করে দেখতে পারেন। উইন্ডোজ ফোনে সম্পূর্ণ আলাদা ইউজার ইন্টারফেস দেখতে পাবেন (উইন্ডোজ পিসি ইউজারদের কাছে সুবিধা জনক মনে হতে পারে), যেটি আপনার মন কারতে পারে। তবে একজন ইউজার হিসেবে আমি নিজে উইন্ডোজ ফোনের উপর তেমন সন্তুষ্ট নয়, এটি আপনাকে স্মার্টফোন ব্যবহার করার আসল স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করবে। মানে আপনি একটু ট্রিকি টাইপের ইউজার হলে উইন্ডোজ ফোন আপনার জন্য নয়। যেহেতু এই অপারেটিং সিস্টেম একদম ক্লোজ, তাই ফোনের সাথে বেশি কিছু ওস্তাদি (অ্যাডভানস ইউজ) করতে পারবেন না। আবার উইন্ডোজ ফোনের অ্যাপ্লিকেশনের (অ্যাপস) যথেষ্ট কমতি রয়েছে, হতে পারে আপনার পছন্দের গেমটি বা সফটওয়্যারটি উইন্ডোজ ফোনের জন্য নেই। সত্যি বলতে মাইক্রোসফটকে তাদের ফোন প্ল্যাটফর্ম নিয়ে নেক্সট চিন্তা করতে দেখতে পাচ্ছি না। তাই এক কথায়; আপনি যদি আগে অনেক ফোন ব্যবহার করে থাকেন এবং এবার নতুন কিছু ব্যবহার করতে চাচ্ছেন সে অবস্থায় উইন্ডোজ ফোন ট্রাই করে দেখতে পারেন।
আইওএস এর কথা তেমন বেশি আলোচনা করবো না। আপনারা প্রায় সকলেই জানেন, আইওএস বা অ্যাপেল আইফোন ব্যবহার করতে সবচাইতে যেটি বেশি প্রয়োজনীয় তা হলো টাকা। আপনার কাছে যদি যথেষ্ট পরিমানে টাকা থাকে তবে ব্যাপার না, নিঃসন্দেহে আইফোন কিনে ফেলতে পারেন। অ্যাপেল সবসময়ই প্রোডাক্ট কোয়ালিটি এবং কাস্টমার সাপোর্টের জন্য বেস্ট হয়ে থাকে। আইফোন কেনার সময় সবচেয়ে লেটেস্ট ফোন গুলোই কেনা ভালো। অনেকে শুধু অ্যাপেল আইফোন কিনবে বলে (বলতে পারেন অ্যাপেলের লগো কিনবে বলে) পুরাতন মডেলের আইফোন কিনে ফেলে। দেখুন আপনার টাকার অবশ্যই মূল্য রয়েছে, আর আজকের দিনে আইফোন ৪ বা আইফোন ৫ কেনাটা একদম বেকার প্রমানিত হতে পারে। পুরাতন আইফোন গুলো তাদের নিজের জামানায় ঠিক ছিল, ভুলে গেলে চলবে না আমরা এখন ২০১৭ সালে রয়েছি। ২০ হাজার টাকা দিয়ে পুরাতন আইফোন না কিনে এই বাজেটে আজকের দিনে অনেক ভালো অ্যান্ড্রয়েড ফোন পেয়ে যাবেন এবং অবশ্যই এটি আপনার টাকার সঠিক মূল্যায়ন হবে। আর আইফোনের কনফিগারেশন নিয়ে তেমন আলোচনা করবো না, কেনোনা লেটেস্ট আইফোনে সবসময়ই বর্তমান সময়ের লেটেস্ট হার্ডওয়্যার গুলোই দেখতে পাওয়া যায়।
এবার আসি অ্যান্ড্রয়েড নিয়ে। হ্যাঁ, একটি ভালো অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার আগে অনেক ব্যাপার মাথায় রাখা প্রয়োজনীয়। গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের মালিক হলেও এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার লাইসেন্স বহু ফোন কোম্পানির কাছে রয়েছে। বাজারে একদম লো বাজেট থেকে শুরু করে হাই বাজেট পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েড ফোন দেখতে পাওয়া যায়। উইন্ডোজ এবং আইওএস নিয়ে আলোচনা এখান থেকেই শেষ করলাম এবং বাকী আর্টিকেলে একটি ভালো অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন কেনার টিপস গুলো শেয়ার করবো।
অ্যান্ড্রয়েড ওএস
তো অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম তো পছন্দ করেই নিলেন, কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডের ও রয়েছে নানান ভার্সন। আমি বলবো; ফোন কেনার সময় সবচাইতে লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম পছন্দ করায় উত্তম। যদি লেটেস্ট সম্ভব না হয় তবে এক ধাপ পুরাতন অপারেটিং সিস্টেম পছন্দ করতে পারেন। যেমন বর্তমানের সবচাইতে লেটেস্ট হলো অ্যান্ড্রয়েড ৭.০, যদিও মাত্র কতিপয় মডেলের ফোনে এই ওএস রয়েছে। তবে অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ বা মার্সম্যালো বর্তমান সময়ের সর্বউত্তম পছন্দ হওয়া উচিৎ। ললিপপ বা কিটক্যাট এখনকার দিনে একেবারে ব্যাকডেট। দেখুন লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেম থাকার অনেক ফায়দা রয়েছে। একে তো বর্তমানে প্রায় সকল অ্যাপস ডেভেলপাররা শুধু লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেমকে টার্গেট করেই তাদের অ্যাপস গুলো আপডেট করছে বা নতুন অ্যাপস তৈরি করছে আর দ্বিতীয়ত নতুন অপারেটিং সিস্টেম একটু বেশি নিরাপদ হয়ে থাকে। হ্যাকাররা কোন অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতা খুঁজে বেড় করার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন পড়ে, এতে লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহারে হয়তো হ্যাকাররা এখনো কোন ত্রুটি খুঁজে পাই নি। এখনকার সদ্য রিলিজ হওয়া যেকোনো ফোনেই প্রায় অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি লো বাজেটের ফোন গুলোতেও অ্যান্ড্রয়েড ৬.০ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।
প্রসেসর

মিড বাজেটের ফোন গুলোর ক্ষেত্রেও যতো নতুন প্রসেসর দেখতে পাওয়া যাবে ততোই ভালো। এখন ১৫-২০ হাজার টাকার ফোন গুলোতেই লেটেস্ট প্রসেসর দেখতে পাওয়া যায়। লো বাজেটের ফোন গুলোতে সাধারনত স্ন্যাপড্রাগন ৪১০, বা স্প্রেডট্র্যামের প্রসেসর দেখতে পাওয়া যায়। প্রসেসরের ক্ষেত্রে আরো দুটি বিষয় হচ্ছে এর ফ্রিকোয়েন্সি (কাজ করার ক্ষমতা; সাধারনত GHZ বা গিগাহার্জ রূপে প্রদর্শিত থাকে) এবং কোর। প্রসেসর কোর মানে বলতে পারেন এর আরো হাত। একটি প্রসেসরে যতোবেশি কোর থাকবে, প্রসেসরটি ততোবেশি দ্রুতগামী হতে পারবে এবং ফোনে স্মুথ এক্সপেরিয়েন্স দেখতে পাওয়া যাবে। বর্তমানে বাজারে ৪ কোর থেকে শুরু করে ৮, ১০, ইত্যাদি প্রসেসর দেখতে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে যতো কোর বেশি হবে ততোই ভালো। কিন্তু বেশি কোর হলেই যে সবসময়ই ভালো সেটা কিন্তু নয়। বেশি কোরের প্রসেসরকে ঠিকঠাক মতো পারফর্মেন্স দেখানোর জন্য প্রয়োজন বেশি র্যাম এবং সাথে বেশি ব্যাটারি লাইফ। অর্থাৎ আপনার ফোনের প্রসেসরে কোর বেশি থাকলে র্যাম ও বেশি থাকা প্রয়োজনীয় এবং ফোনের ব্যাটারিও বেশি খরচ হবে। যদিও ওভার ক্লক বা অ্যান্ডার ক্লক করে প্রসেসরের পারফর্মেন্স বাড়ানো বা কমানো সম্ভব। আরেকটি বিষয় হলো; প্রসেসরে যতোবেশি কোর থাকবে আপনার ফোন ততোবেশি গরম হবে, হ্যাঁ, বেশি প্রসেসিং প্রক্রিয়া বেশি গরম উৎপন্ন করে। তো সেই দিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজনীয়। তাছাড়া স্মার্টফোন গরম হওয়ার আরো কারণ গুলো এখান থেকে জেনে নিতে পারেন।
প্রসেসরে একটি ঘড়ি লাগানো থাকে, যেটা সর্বদা নির্দেশ করে প্রসেসরটি প্রতি সেকেন্ডে কতটা কাজ করতে পারে। বাজারে ১ গিগাহার্জ থেকে শুরু করে ১.৩, ১.৫, ২.০, ৩.০ ইত্যাদি স্পীডের প্রসেসর দেখতে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে যতোবেশি গিগাহার্জ স্পীড হবে ততোই ভালো, তবে বেশি স্পীড মানে বেশি ব্যাটারি পাওয়ারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে প্রসেসর কোম্পানিরা এই ব্যাপারটি এখন বিশেষ লক্ষ্য রাখছে। তারা যদি ৮ কোর প্রসেসর তৈরি করে তবে ৪ কোরের ফ্রিকোয়েন্সি কম রাখে এবং ৪ কোরের ফ্রিকোয়েন্সি বেশি রাখে। এতে কম ফ্রিকোয়েন্সির কোর ব্যাটারি সেভ করে এবং বেশি ফ্রিকোয়েন্সির কোর গুলো পারফর্মেন্স টাইমে কাজে লাগে। তো এই ব্যাপারটিও মাথায় রাখা প্রয়োজনীয়।
জিপিইউ
স্মার্টফোনে সিপিইউ বা প্রসেসরের পাশাপাশি আরেকটি টার্ম রয়েছে সেটি হচ্ছে জিপিইউ বা গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট। প্রসেসর ফোনের অভ্যন্তরীণ সকল বিষয় গুলোকে হ্যান্ডেল করলেও ফোনের গ্রাফিক্স, গেমিং পারফর্মেন্স, ফ্রেম পার সেকেন্ড ইত্যাদি জিনিষ গুলোকে জিপিইউ ম্যানেজ করে থাকে। তাই ভালো প্রসেসরের পাশাপাশি ভালো জিপিইউ থাকাটা প্রয়োজনীয়। লক্ষ্য করে দেখবেন, আপনার ফোনে জেনো লেটেস্ট জিপিইউ লাগানো থাকে। লেটেস্ট জিপিইউ লিস্ট পেতে, “Latest Smartphone GPU” লিখে গুগল করলেই পেয়ে যাবেন। বর্তমানে অ্যাড্রিনো ৫৩০, ম্যালি টি ৮৮০, পাওয়ার ভিআর এর লেটেস্ট সিরিজের জিপিইউ গুলো অনেক ভালো। তবে আপনি গুগল করলে আরো ভালো আইডিয়া পেয়ে যাবেন। ভালো বাজেট এবং মিড বাজেটের ফোন গুলোতে জিপিইউ এর উপর বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজনীয়—কেনোনা পিসির মতো আপনি স্মার্টফোনে পরে ডেডিকেটেড জিপিইউ লাগাতে পারবেন না। যারা ফোনে গেমিং করতে ভালো বাসেন তাদের ফোনের ভালো জিপিইউ থাকা একদম ফরজ (আবশ্যক)। লো বাজেটের ফোনে জিপিইউ নিয়ে তেমন চিন্তা না করলেও হবে, তবে যতো লেটেস্ট জিপিইউ থাকে ততোই ভালো। তাছাড়া জিপিইউ নিয়ে আরো জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।
র্যাম

হ্যাঁ, ফোনে বেশি মাল্টি টাস্কিং করতে চাইলে একটু বেশি র্যাম প্রয়োজন পড়বে, কিন্তু একটু ভেবে দেখুন; ফোনে আর আমরা কতই মাল্টি টাস্কিং করি? হতে পারে একসাথে ইমেইল চেক করলাম, ইন্টারনেট ব্রাউজ করছি, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে রয়েছে এবং মিউজিক প্লে করছি। এই কাজ গুলোর জন্য ২ জিবির বেশি র্যাম প্রয়োজনীয় হবে না। তো র্যামের ক্ষেত্রে একটায় চয়েজ; ২ জিবি র্যাম থাকতেই হবে।
ডিসপ্লে
স্মার্টফোনে ডিসপ্লে এমন একটি যন্ত্রাংশ; যার সাথেই আমরা বেশিরভাগ সময় কাটায়। একটি ভালো মানের ফোনের সাথে ভালো কোয়ালিটির ডিসপ্লে থাকা আবশ্যক এবং অবশ্যই সেটি ভালো কালার এবং ভালো ভিউইং অ্যাঙ্গেলের সাথে। স্মার্টফোন ডিসপ্লে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে আগেই একটি আর্টিকেল রয়েছে, সেটি আগে পড়ে নিতে পারেন। বর্তমানে সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে হলো সবচাইতে ভালো। স্যামসাং সহ বিভিন্ন কোম্পানির ফোনে সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে দেখতে পাওয়া যায়। আপনি যদি ভালো বাজেটের ফোন কেনার চিন্তা করেন তবে অবশ্যই সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে রয়েছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লের পরে আরে অ্যামোলেড ডিসপ্লে এবং এলইডি ডিসপ্লে। মিড বাজেটের ফোন গুলোতেও সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে পেয়ে যাবেন সাথে শুধু অ্যামোলেড ডিসপ্লে হলেও সমস্যা নেই। লো বাজেটে এলইডি ডিসপ্লে থাকতেই হবে। এখনো অনেক ফোনে এলসিডি প্যানেলের ডিসপ্লে দেখতে পাওয়া যায়; সেগুলোকে শ্রদ্ধার সাথে ইগ্নোর করাতেই আপনার ভালাই।
ডিসপ্লের সাথে আরো দুইটি টার্ম হয়েছে, তা হলো ডিসপ্লে রেজুলেসন এবং পিক্সেল প্রতি ইঞ্চি বা পিপিআই। বর্তমান চাহিদা অনুসারে প্রথমত অবশ্যই ফোনের ডিসপ্লেটির রেজুলেসন এইচডি (৭২০পি বা ১২৮০x৭২০) হতে হবে তবে ফুল এইচডি (১০৮০পি বা ১৯২০x১০৮০) হলে বেশি ভালো হয়। তাছাড়া বর্তমান মার্কেটে ৪কে রেজুলেসনের ডিসপ্লেও ফোনে ব্যবহার হতে দেখতে পাওয়া যায়। সাধারন ব্যবহারের জন্য ফুল এইচডি ডিসপ্লেই যথেষ্ট তবে যারা ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি) হেডসেট উপভোগ করতে চান; তাদের জন্য ২কে বা ৪কে ডিসপ্লে বেশি ভালো হবে। মিড বাজেট থেকে শুরু করে লো বাজেটের ফোনেও এইচডি রেজুলেসন ডিসপ্লে দেখতে পাওয়া যায়।

এবার কথা বলি ডিসপ্লে সাইজ নিয়ে। ডিসপ্লে সাইজের ব্যাপারটা নির্ভর করে সম্পূর্ণ আপনার রুচির উপর। অনেকে ছোট স্ক্রীন পছন্দ করে আবার অনেকে হিউজ ফোন পছন্দ করে। আমার মতে ফোনে ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে থাকলে বেশি ভালো হয় তবে আপনার প্রয়োজন অনুসারে এর চেয়ে ছোট বা বড় ডিসপ্লে পছন্দ করতে পারেন। ডিসপ্লে বড় হওয়ার সাথে সাথে রেজুলেসনের দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজনীয়। ৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে এইচডি হলেও সমস্যা নেই কিন্তু ৫.৫ বা ৬ ইঞ্চি ডিসপ্লে ফুল এইচডি হতেই হবে, না হলে ঝাপসা মনে হতে পারে। আবার ছোট সাইজের ডিসপ্লে ৪কে হলে কোন লাভ হবে না, আপনার চোখ সেখানে কোন পার্থক্যই লক্ষ্য করতে পারবে না।
ক্যামেরা
একসময় যেকোনো সাধারন ক্যামেরা ফোনের অনেক কদর ছিল, কিন্তু সেটা আজ থেকে ৮-১০ বছর আগের কথা। এখনকার স্মার্টফোনে অনেক শক্তিশালী ক্যামেরা ব্যবহার করতে দেখতে পাওয়া যায়। ৫ মেগাপিক্সেল থেকে শুরু করে ২০ মেগাপিক্সেল এবং তার উপরের পর্যন্ত ক্যামেরা দেখতে পাওয়া যায়। যদিও কোন ক্যামেরার মেগাপিক্সেলই সর্বশেষ বিষয় নয়। ক্যামেরা ভালো বা খারাপ হওয়ার পেছনে ক্যামেরা সেন্সর, ইমেজ প্রসেসর, অ্যাপারচার, লেন্স ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রাখা প্রয়োজনীয়। ক্যামেরা সেন্সর, ইমেজ প্রসেসর, অ্যাপারচার, লেন্স এবং মেগাপিক্সেলের গুরুত্ব নিয়ে আলাদা দুটি পোস্ট রয়েছে, যেটা পড়ে নেওয়া আবশ্যক।

ব্যাটারি
র্যাম, প্রসেসর, ডিসপ্লের মতো স্মার্টফোন ব্যাটারিতেও রয়েছে অনেক প্রকারভেদ। আর সঠিক কনফিগারেশন অনুসারে সঠিক ক্ষমতার ব্যাটারি থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। স্মার্টফোনে বর্তমানে ৪ হাজার থেকে শুরু করে ৬ হাজার এমএএইচ পর্যন্ত ব্যাটারি রয়েছে। মাথায় রাখবেন, ব্যাটারির এমএএইচ যতোবেশি হবে ততোই ভালো এবং ততোবেশি ব্যাকআপ পাওয়া যেতে পারে। আপনার ফোনের প্রসেসর শক্তিশালি হলে এবং প্রসেসরে কোর বেশি থাকলে অবশ্যই বেশি ব্যাটারি থাকা প্রয়োজনীয়। সর্বনিম্ন ফোনে সাড়ে ৩ হাজার এমএএইচ এর ব্যাটারি থাকতেই হবে তবে ৪ হাজার বা সাড়ে ৪ হাজার এমএএইচ হলে ভালো হয় এবং এর চেয়ে বেশি হলে তো কথায় নাই।
অনেকে আবার রিমুভেবল এবং নন রিমুভেবল ব্যাটারি নিয়ে চিন্তা করেন। ফোনের সবকিছুই ভালো লাগলো কিন্তু নন রিমুভেবল ব্যাটারি হওয়ার কারণে অনেকেই ফোনটি কেনা থেকে বিরত থাকেন। এটি মূলত ঘটে থাকে কিছু প্রচলিত এবং মনগড়া ভুল ধারণার কারণে। অনেকে মনে করেন নন রিমুভেবল ব্যাটারির ফোন হ্যাং হয়ে গেলে সমস্যা হয়ে যেতে পারে আবার অনেকে মনে করেন ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে বা কোন সমস্যা হলে বুঝি আর পরিবর্তনই করা যাবে না। আসলে এই দুইটিই ভুল ধারণা। একে তো ফোন হ্যাং হলেও ফোন সহজেই রিবুট করতে পারবেন এবং দ্বিতীয়ত কেয়ার থেকে ফোনের ব্যাটারিও পরিবর্তন করা যাবে সহজে। আমি মনে করি একটি ফোনে প্রিমিয়াম ফিল পাওয়ার জন্য নন রিমুভেবল ব্যাটারিই সর্বউত্তম। রিমুভেবল এবং নন রিমুভেবল ব্যাটারি নিয়ে একটি বিস্তারিত আর্টিকেলে আমি আরো কিছু আলোচনা করেছি, পড়ে নিতে পারেন।
আর ফোনের ব্যাটারি লিথিয়াম পলিমার বা লিথিয়াম আয়ন—যেই প্রযুক্তিরই হোক না কেন, সেটা নিয়ে আপনার চিন্তা করার কোন বিষয় নেই। দুইটি ব্যাটারি প্রযুক্তিই অনেক ভালো এবং চোখ বন্ধ করে যেকোনো একটির উপর ভরসা করতে পারেন। লিথিয়াম পলিমার বা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি প্রযুক্তি নিয়ে আরেকটি আর্টিকেলে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি, পড়ে নিতে পারেন।
হাই বাজেট এবং মিড বাজেটের ফোন গুলোতে কুইক চার্জিং প্রযুক্তি থাকলে বেশ ভালো হয়। এতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমান কিছু চার্জ করে নিতে পারেন। কিছু কিছু সময়ে এই প্রযুক্তি আপনার ফোনে থাকাটা লাইফ সেভার বলে প্রমানিত হতে পারে। সাথে আপনি চাইলে ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি ওয়ালা ফোনও কিনতে পারেন, যদি আপনি নতুন প্রযুক্তি প্রেমি হয়ে থাকেন তো।
চাইনিজ ব্র্যান্ড নাকি ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ড?
মিড বাজেট এবং হাই বাজেট স্মার্টফোন ক্রেতাদের কাছে এই প্রশ্নটি কোন স্কুল কলেজের বার্ষিক পরীক্ষার চেয়ে কম কিছু নয়। যদি আপনি বন্ধুদের কাছে দেখানোর জন্য স্যামসাং বা অ্যাপেল ফোন কিনতে চান তবে সেটি আলাদা ব্যাপার, তবে যদি আপনি একটি ভালো মানের ফোন কিংবা টাকার সঠিক মূল্যায়ন দিয়ে ফোন কিনতে চান তবে চাইনিজ ব্র্যান্ড এবং যেকোনো ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ডেই আপনার পছন্দের উপযুক্ত ফোনটি খুঁজে পেতে পারেন।
চাইনিজ ব্র্যান্ড যেমন— সাওমি, ওয়ান প্লাস, মিজু ইত্যাদি অনেক ভালো কোয়ালিটির ফোন সরবরাহ করে থাকে। এদের কাছে লো রেঞ্জ থেকে শুরু করে হাই বাজেট পর্যন্ত যেকোনো ফোন পাওয়া যায় এবং সত্যি বলে ফোন গুলো অনেক ভালো এবং টেকসই। আর আমার পার্সোনাল অভিজ্ঞতা অনুসারে মিড বাজেটের স্যামসাং ফোন কখনোই কেনা উচিৎ নয়। এর চেয়ে চাইনিজ ব্র্যান্ডে আপনি সেই সবকিছু পেতে পারেন যা আপনার সত্যিই দরকার। তাছাড়া চাইনিজ ফোন গুলো কেন এতো সস্তা হয় এ ব্যাপারে একটি বিস্তারিত পোস্ট রয়েছে, পড়ে নিতে পারেন।
শেষ কথা
তো এই ছিল স্মার্টফোন কেনার টিপস গুলো বা গাইড লাইন গুলো। নিঃসন্দেহে আর্টিকেলটি অনেক বড় ছিল কিন্তু এটি বড় হওয়ার মূল্য রাখে। একটু সময় ব্যয় করে আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারলেন আসলে কিভাবে এবং ঠিক কোন বিষয় গুলোর উপর লক্ষ্য রেখে আপনার জন্য সঠিক স্মার্টফোনটি নির্বাচন করবেন। যদি আমি কোন পয়েন্ট মিস করে থাকি তবে অবশ্যই আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানাবেন, সাথে আমার অনুরোধ অবশ্যই আর্টিকেলটিকে যতটা পারেন আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
EmoticonEmoticon