জমি বা প্লট কেনার আগে জেনে নিন

জমি কিনতে গিয়ে ক্রেতা যদি কিছু ব্যাপারে ভুল করে বসেন এবং এ কারণে যদি জমিতে তার অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, সেক্ষেত্রে কেবল বিক্রেতার ওপর দোষ চাপিয়ে তিনি পার পেতে পারেন না। কেনাবেচা চুক্তিতে ক্রেতাকে কিছু বিষয় যাচাই করে নিতে হয়, নয়তো বোকামির খেসারত ক্রেতাকেই দিতে হবে।
জমি বা প্লট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকেই। ঢাকা ও আশপাশে তো বটেই, সারাদেশে হরহামেশাই ঘটছে প্রতারণার ঘটনা। জমি-জমা নিয়ে জাল জালিয়াতি, প্রতারণা, পারিবারিক ও সামাজিক কলহ, মামলা, মারামারি লেগেই আছে। জমি বা প্লট কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
তিনটি বিষয় অতি জরুরি-
১. বিক্রেতার আইনানুগ দখল (যা সরেজমিন তদন্ত করে বুঝতে হয়);
২. ভূমি অফিসের রেকর্ড মোতাবেক মালিকানার স্বচ্ছতা;
৩. রেজিস্ট্রেশন অফিসের রেকর্ড মোতাবেক মালিকানার চেইন দলিল; 

প্রস্তাবিত বিক্রেতাই কি জমির প্রকৃত মালিক?
এটাই মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন। নিছক দখল ও মৌখিক দাবি যথেস্ট না। নানানভাবে আপাত: সঠিক মালিকানা দুষিত হতে পারে। যেমন-
-প্রকৃতপক্ষে মালিক হলেও, মালিকানার স্বপক্ষে কাগজপত্র ঘাটতি
-প্রকৃতপক্ষে মালিক কিন্তু সরকারী রেকর্ডে ভুল
-মালিকানার অন্য শরীক (ভাই, ভাস্তে, বোন, ফুফু ইত্যাদি) আছে
-এ মালিক সঠিক কিন্তু পূর্ববর্তী বিক্রেতা ঘাপলা করেছেন
-জমিতে খাস অংশ আছে
-প্রতিবেশীর সাথে সীমানা বিরোধ আছে
-জমি কোন ব্যাংকে বন্ধক
-জমি অলরেডি আরেক জায়গায় বায়না/বেচা/আমমোক্তারনামা হয়ে গেছে
-পুরোপুরি ভুয়া/ জবরদখল। গায়ের জোরে বিক্রি করছেন
-বাপ থাকতে পোলায় জমি বেচে দিচ্ছে 

মালিকানার স্বপক্ষে একক বৃহত্তম দলিল কি?
-খুবই ছোট একটা স্লিপ। খাজনা রশিদ বা ল্যান্ড ট্যাক্স রিসিপ্ট। জোত-জমির মালিকরা তহশীলদার অফিসে গিয়ে বছরে একবার খাজনা দেন। এ রশিদ তার প্রমাণ। একটি এসি (ল্যান্ড) অফিসের আন্ডারে ১০/১২ টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস থাকে। সেখানে তহশীলদার বসে। বলাবাহুল্য ২০/২৫ টাকার খাজনা গ্রহন করার জন্য ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়! না হলে বতহশীলদার খাজনা নিতে টালবাহানা করে! সিটি এলাকায় কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স রিসিপ্ট মালিকানার বড় দলিল। তবে কুইক এ রিসিপ্টই শেষ কথা না। এটা আসলে ফিনিশিং টোকেন। এটার লেজ ধরে এবার জমির গোড়ায় চলে যান। ২টি অফিসের কাজকর্মের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের সকল জমিখন্ডের মালিকানা নিয়ন্ত্রিত হয়। ভূমি মন্ত্রনালয় অধীনস্ত থানা পর্যায়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি)র কার্যালয় ভায়া জেলা প্রশাসন ও আইন মন্ত্রনালয়ের অধীনস্ত রেজিস্ট্রেসন অধিদপ্তরের সাব-রেজিস্টার অফিস (সাধারনত থানা পর্যায়ে)।

ভূমি অফিসে কি কি ডকুমেন্ট পাব?
-মৌজা ম্যাপ
-বিএস/ (বা ঢাকায় মহানগর জরিপ) খতিয়ান, না থাকলে জাবেদা নকল
-এস এ খতিয়ান
-আর এস খতিয়ান
-সি এস খতিয়ান
এগুলো সকল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনলাইনে আবেদন করেই আজকাল পাওয়া যেতে পারে। তবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

জেনে নিই-খতিয়ান কি?
জেলা>উপজেলা> মৌজা>দাগ নং। একটি মৌজায় একজন মালিকের ১ বা একাধিক দাগে সকল জমির পরিমানের সনদ হল খতিয়ান। খতিয়ান একটি বালাম বইয়ের পাতার অবিকল নকল। এর সিরিয়াল নং ই হল খতিয়ান নং। লেটেস্ট মৌজা ম্যাপের সাথে আপনার খতিয়ান নিয়ে বসলে সহজেই নিজের জমির আকার আয়তন আন্দাজ করতে পারবেন।
ব্রিটিশ আমলের জনৈক ক্যাডেস্টাল করা জরিপের নামানুসারে সিএস জরিপ ও তারপরের পাকি ও বাংলাদেশ আমলের জরিপের ফলে নতুন দাগ ও খতিয়ান নং সৃজিত হতে পারে। তবে দেখার বিষয় সিএস থেকে বিএস পর্যন্ত মালিকানার যে পরিবর্তন তা যৌক্তিক ও আইন সংগত কিনা? সাধারণ বিচারে দাদার জমি ভাগ হতে হতে নাতি পর্যায়ে কমে যাবে। বিক্রয়ের কারনে দাগে জমির পরিমান কমবে। তবে ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে একই দাগে ক্রয় ও হেবা (দান) পাওয়ার কারনে জমি বাড়তে পারে। যাই হোক সিএস টু বিএস খতিয়ানে মালিকানার পরিবর্তনগুলোর স্বপক্ষে যথাযথ দলিল (ঘটনা) জানার জন্য যেতে হবে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: জমির দলিলের আর্কাইভ
ক্রয়, দান বা বাটোয়ারা -এ তিনভাবে কথিত বিক্রেতা জমির মালিক হতে পারে। আর এ ৩ টি ক্ষেত্রেই যথাযথ দলিল ও তার রেজিস্ট্রেশন মাস্ট। বাপ-চাচার হেবা কিবা ভাই বোনের বাটোয়ারার দলিল না থাকার চান্স হাই। ক্রেতাদের কাজ হল এ ধরনের গর্তে পা না দেয়া। বিক্রেতাকে অনুরোধ করা ফর্মালিটি শেষ করতে। সর্বশেষ দলিলের লেজ ধরে আগালে বায়া দলিল-১, বায়া-২, বায়া-৩ পাওয়া যাবে। এভাবে খতিয়ান সমূহে জমির মালিকানার তালে তালে দলিলসমূহ পরখ করে দেখলেই একখন্ড নির্ভেজাল জমির চিত্র ফুটে উঠবে।

মিউটেশন কি?
-মিউটেশন মানে পৃথকীকরণ। সকল ঝামেলা শেষে জমির মালিককে সরকারীভাবে মালিকানার ব্যাপারে এক ধরনের ডিক্লারেশন সনদ। 
আরও কিছু নিয়মকানুন জানতে এখানে দেখুন-

শেয়ার করুন


EmoticonEmoticon