হাতের মুঠোয় চাকরি : জানতে হবে ১৬ প্রোগ্রামিং ভাষা

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের আবহাওয়া দেখা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত সব কিছুই এখন কয়েক ক্লিকেই দেখে ফেলা যায়। এটা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে। আরও সুস্পষ্ট করে বললে সফটওয়্যার ও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের কল্যাণে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সফটওয়্যার নির্ভরতা বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী মারসি অ্যান্ড্রেসেন বলেন, ‘সফটওয়্যার ইস ইটিং দ্য ওয়ার্ল্ড।’ এর সূত্র ধরে বলা যেতে পারে, সফটওয়্যারের হাতের কব্জায় এখন পুরো বিশ্ব।
অতি প্রয়োজনীয় কিংবা কাজের বা অকাজের এসব সফটওয়্যার তৈরি হয় কোডিং করে। প্রোগ্রামিং ভাষার ব্যবহার করে করা হয় এ কোডিং। এ প্রোগ্রামিংয়ের অনেক ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু ভাষা খুবই জনপ্রিয় ও চাকরি ক্ষেত্রে অধিক সহায়ক।
একটি প্রতিষ্ঠান প্রোগ্রামারদের কাজের ধরণ অনুযায়ী তাকে নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাই প্রোগ্রামিং শেখার আগে কাজের ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা উচিত। জনপ্রিয় ব্যবসা সাময়িকী বিজনেস ইনসাইডার স্টাক ওভারফ্লো ও টিওবি ইনডেস্কের জরিপের ভিত্তিতে ১৬টি জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষার তালিকা তৈরি করেছে।

এ প্রতিবেদনে বর্তমানে সময়ের জনপ্রিয় ও চাকরি খাতে চাহিদা থাকা এসব ভাষায় সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
জাভা
জাভা একটি প্রোগ্রামিং ভাষা। সান মাইক্রোসিস্টেম ৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে জাভা ডিজাইন করার পরে এটি অতি দ্রুত বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষার একটিতে পরিণত হয়।
এর জনপ্রিয়তার মূল কারণ বহনযোগ্যতা, নিরাপত্তা ও অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ও ওয়েব প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি পরিপূর্ণ সাপোর্ট। এ ভাষা ব্যবহার করে এখন মোবাইল প্লাটফর্ম অ্যান্ড্রয়েডের জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়। এ ছাড়া ব্যবসায়িক নানা সফটওয়্যার জাভার সাহায্যে তৈরি করা হয়।
the-coder-techshohor
সি
সি একটি প্রোগ্রামিং ভাষা। ৭০-এর দশকে কাজ করার সময় এটি তৈরি করেন ডেনিস রিচি ও বেল ল্যাবে। । ভাষাটি তৈরির প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের কোড লেখায় এর ব্যবহার। অচিরেই এটি একটি বহুল ব্যবহৃত ভাষায় পরিণত হয়।
অনেক প্রোগ্রামিং ভাষার উপর সি’র গভীর প্রভাব পড়েছে। এটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এর বহনযোগ্যতা। এ ভাষা দিয়ে রচিত প্রোগ্রাম যে কোনো অপাররেটিং সিস্টেমের কম্পিউটারে চালানো যায়।
পাইথন
পাইথন উচ্চস্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা। ১৯৯১ সালে গুইডো ভ্যান রস্যিউম এটি প্রথম প্রকাশ করেন। এটি তৈরির সময় প্রোগ্রামের পঠনযোগ্যতার উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে প্রোগ্রামারের পরিশ্রমকে কম্পিউটারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পাইথনের কোর সিনট্যাক্স ও সেমান্টিক্‌স খুবই সংক্ষিপ্ত। তবে ভাষাটির স্ট্যান্ডার্ড লাইব্রেরি অনেক সমৃদ্ধ। যেসব বড় প্রকল্পে পাইথন ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে জোপ অ্যাপ্লিকেশন সার্ভার, এমনেট ডিস্ট্রিবিউটেড ফাইল স্টোর, ইউটিউব ও মূল বিটটরেন্ট ক্লায়েন্ট উল্লেখযোগ্য।
যে সমস্ত বড় প্রতিষ্ঠান পাইথন ব্যবহার করে তাদের মধ্যে গুগল ও নাসা উল্লেখযোগ্য। তথ্য নিরাপত্তা শিল্পে পাইথনে বহুবিধ ব্যবহার লক্ষনীয়। এর মধ্যে ইমিউনিটি সিকিউরিটির কিছু টুলস, কোর সিকিউরিটির কিছু টুলস, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের নিরাপত্তা স্ক্যানার ওয়াপিটি ও ফাজার টিএওএফ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
পিএইচপি
পিএইচপি হচ্ছে একটি স্ক্রিপ্টিং প্রোগ্রামিং ভাষা। যা মূলত ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি কমান্ড লাইন ইন্টারফেস ক্ষমতাকে অন্তর্ভূক্ত করেছে ও স্ট্যান্ডআলোন গ্রাফিক্যাল আপ্লিকেশনকে ব্যবহার করতে পারে।
পিএইচপি ১৯৯৫ সালে রাস্মুস লারডরফ উদ্ভাবন করেন। এটির বেশিরভাগ ওয়েব সার্ভার তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি প্রায় সব অপারেটিং সিস্টেম ও অবস্থান ভেদে বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।
উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২০ লাখের বেশি ওয়েবসাইট ও ১০ লাখ ওয়েব সার্ভারে পিএইচপি ব্যবহৃত হচ্ছে।
php-techshohor
ভিজুয়াল বেসিক
ভিজুয়াল বেসিকে সংক্ষেপে বলা হয় ভিবি। সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট এ ভাষাকে বাজারে আনে পুরাতন বেসিক ভাষার উন্নত সংস্করণ হিসেবে ১৯৯১ সালে।
উইকিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, কম্পিউটারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ভাষা এটি। এটি একটি পুরানো প্রোগ্রামিং ভাষায় হলেও বর্তমানে সময়ে এখনও এর ব্যবহার রয়েছে।
জাভা স্ক্রিপ্ট
ওয়েবনির্ভর অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে জাভা স্ক্রিপ্ট প্রোগ্রামিং ভাষা বেশ জনপ্রিয়। এর সঙ্গে জাভার তেমন সম্পর্কে নেই। জাভা স্ক্রিপ্ট বিশ্বের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট সাইটগুলোতে ব্যবহার হচ্ছে।
আর‘আর’ একটি উন্মুক্ত কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষা, যা পরিসংখ্যান বিষয়ক কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। বিশ্বের বিখ্যাত পরিসংখ্যানবিদদের অক্লান্ত ও অবিরত পরিশ্রমের ফসল। এটি শুধু একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নয়, একই সঙ্গে একটি পরিসংখ্যানিক প্যাকেজ ও ইন্টারপ্রেটারও।
প্রথম দিকে শুধু পরিসংখ্যান বিষয়ক কাজের জন্য ‌’আর’ প্রোগ্রাম তৈরি করা হলেও এখন গ্রাফিকাল টেকনিকগুলো অত্যন্ত সহজে এ প্রোগ্রাম ব্যবহার করে করা যাচ্ছে।
গো
প্রোগ্রামিং ভাষা ‘গো’ ডেভেলপ করে গুগল। অন্যান্য অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ল্যাংগুয়েজের মত এটির কাঠামো মোটেই জটিল নয়। এখানে সাবক্লাসিংয়ের কোনো ব্যাপার নেই।
ইন্টারফেস ব্যবহারের মধ্যে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিংয়ে এটি ভিন্ন মাত্রা বা ভিন্ন স্বাদ এনে দিয়েছে। এতে পাইথন ল্যাংগুয়েজের ছাপ আছে। গুগল সবসময়ই পাইথনকে একটু বিশেষভাবে ফেভার করে।
পাইথনের মত গো ও স্লাইস সাপোর্ট করে, যার সুবাদে সহজ একটি সিনট্যাক্স দিয়ে একটি অ্যারের নির্দিষ্ট অংশকে রেফার করা যায়।
রুবি
রুবি আরেকটি জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা। এটি ব্যবহার করে ডেস্কটপ অ্যাপ ও ওয়েব অ্যাপ ডেভেলপ করা যায়। এটির নানা জনপ্রিয় ফ্রেমওয়ার্ক কাজকে করে আরও সহজ করে।
এ ভাষার কোড মেইন্টেইন করা অনেক সহজ। খুব বেশি কমেন্টের দরকার হয় না। কোডে চোখ বুলালেই বোঝা যায়- ওই কোড কি উদ্দেশ্যে লেখা । রুবিতে কোনো সেমিকোলন নেই। এটি হোয়াইট স্পেস ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ব্রাকেটের ব্যাবহার খুবই কম।
apple-code-techshohor
সুইফট
সুইফট স্টিভ জবস খ্যাত টেক জায়ান্ট অ্যাপলের প্রোগ্রামিং ভাষা। এ ভাষা অবজেক্টিভ সি- এর চেয়েও দ্রুত কাজ করে। এটি সহজেই শেখা যাবে।
প্রোগ্রামাররা একই সময় কোড লিখে তার আউটপুট দেখতে পারবেন। সুইফট যেমন কম্পাইলড ল্যাঙ্গুয়েজের মতো শক্তিশালী ও ইফিশিয়েন্ট, তেমনি অন্য জনপ্রিয় ভাষার মতো সহজ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ।
অবজেক্টিভ সি
অবজেক্টিভ সি একটি রিফ্লেকটিভ, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা। এত সি ভাষার সঙ্গে স্মলটকের মেসেজ আদান পদ্ধতির সম্মিলন ঘটেছে। বর্তমানে এটি মূলত ম্যাক ওএস এক্স, আইফোন ওএসে ব্যবহৃত হয়।
এটি তৈরি করা হয়েছে ওপেন স্টেপ স্ট্যান্ডার্ডের ওপর ভিত্তি করে- যা নেক্সটস্টেপ, ওপেনস্টেপ ও কোকোয়া ফ্রেমওয়ার্কের প্রধান ভাষা।
পার্ল 
পার্ল ভাষার উদ্ভাবন করেন ল্যারি ওয়াল। ১৯৮৭ সালে এটি প্রথম প্রকাশ করা হয়। এ ভাষায় সি, বোর্ন শেল, অক, সেড ও লিস্প থেকে ফিচার ধার করা হয়েছে।
গাঠনিকভাবে এ ভাষায় অক ও সি ভাষায় প্রচলিত দ্বিতীয় বন্ধনীতে আবদ্ধ কোড ব্লকের ধারণা অনুসরণ করা হয়েছে। এটি স্ট্রিং প্রক্রিয়াকরণে একটি অত্যন্ত কার্যকরী।
বিজনেস ইনসাইডারের তালিকায় থাকা বাকি পাঁচটি প্রোগ্রামিং ভাষা হলো গ্রেবি,এসেম্বলি ল্যাংগুয়েজে,প্যাসকেল,ম্যাটল্যাব ইত্যাদি।এগুলো ভালোভাবে জানা থাকলে বিশ্বব্যাপী কাজ পেতে কোনো সমস্যা হবে না। এসব ভাষার পুরোপুরি দখল থাকলে একজন প্রোগ্রামারকে বেকার থাকতে হবে না।


EmoticonEmoticon