গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বাংলাদেশে ফোরজি বা চতুর্থ প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ সেবার তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর সাথে সাথে ৪জি যুগে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করল বাংলাদেশ। ৪জি নেটওয়ার্ক চালু হলে মোবাইলে থ্রিজির চেয়েও দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে। তখন আরও ঝকঝকে ও স্পষ্ট ভিডিও/অডিও কল করা যাবে। চলুন জেনে নিই বাংলাদেশে ফোরজি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য।
৪জি এর সুবিধা কী?
ফোরজি হচ্ছে ৪র্থ প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা। ৪জি/এলটিই’র মাধ্যমে দ্রুতগতির তারবিহীন নেটওয়ার্ক কাভারেজ দেয়া যায়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বর্তমানে চলমান সর্বাধুনিক মোবাইল নেটওয়ার্ক হচ্ছে ফোরজি, যার মাধ্যমে ইন্টারনেটে নিরবিচ্ছিন্ন এইচডি ভিডিও, ঝকঝকে ভিডিও কল, লাইভ টিভি স্ট্রিমিং, এবং অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ব্রাউজিং ও ফাইল ডাউনলোড/আপলোড করা যায়।
ফেব্রুয়ারিতেই ৪জি চালু
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ আনুষ্ঠানিকভাবে ফোরজি চালুর লাইসেন্স পাবে আবেদনকারী মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো। এর পর যত দ্রুত সম্ভব ৪জি সেবা চালু হবে। ঢাকায় ২০ ফেব্রুয়ারি থেকেই ৪জি সেবা দিতে প্রস্তুত গ্রামীণফোন, রবি-এয়ারটেল, বাংলালিংক ও টেলিটক। বন্ধ হয়ে যাওয়া অপারেটর সিটিসেল তরঙ্গ নিলামে অংশ নেয়নি। ফলে সিটিসেলের পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনা দৃশ্যত আর রইলনা।
প্রাথমিকভাবে বড় শহরে
আশা করা যায় ফেব্রুয়ারির ২০ বা ২১ তারিখ থেকেই ঢাকা সহ দেশের বড় শহরগুলোতে ফোরজি সেবা চালু হবে। বিটিআরসির ৪জি নীতিমালা অনুযায়ী, মোবাইল অপারেটরগুলো লাইসেন্স পাওয়ার দেড় বছরের মধ্যে দেশের সব জেলা শহরে সেবাটি চালু করতে হবে, তিন বছরের মধ্যে সব উপজেলায় ৪জি নিতে হবে।
কমপক্ষে থ্রিজির দ্বিগুণ স্পিড
প্রথম আলো জানাচ্ছে, অপারেটরগুলো বলছে তারা মোবাইলে থ্রিজির চেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ গতির ইন্টারনেট সেবা দেবে ফোরজির মাধ্যমে। সেটা হতে পারে ৭ মেগাবিট/সেকেন্ড বা তার আশেপাশে (সেকেন্ডে কমপক্ষে ১ মেগাবাইট ডেটা ট্র্যান্সফার হবে; ৫এমবি একটি ফাইল ৫ সেকেন্ডে ডাউনলোড হবে)। মোবাইল নেটওয়ার্ক পারফর্মেন্স নিরূপণকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওপেনসিগনালের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে ফোর-জি প্রযুক্তির অ্যাভারেজ স্পিড ১৬.৬ এমবিপিএস। সাইটটি বলছে, গড়ে ভারতে বর্তমানে ৬.১৩ এমবিপিএস এবং পাকিস্তানে ১১.৬৭ এমবিপিএস ফোরজি স্পিড আছে। সিঙ্গাপুরে সবচেয়ে বেশি ৪৬.৬৪ এমবিপিএস ফোরজি স্পিড।
সিম রিপ্লেসমেন্ট/বিশেষ ৪জি সিম দরকার হবে
প্রযুক্তিগত কারণে আপনার বিদ্যমান সিম কার্ডের সাহায্যে শুধুমাত্র ২জি এবং ৩জি নেটওয়ার্ক রিসিভ করতে পারবেন। টুজি/থ্রিজি স্পেসিফিক সিম ৪জি নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করবেনা। সুতরাং ফোরজি উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ফোরজি সাপোর্টেড সিম কার্ড (প্রয়োজনে রিপ্লেস করে) নিতে হবে। সিম রিপ্লেস করলে আপনার মোবাইল নম্বর আগেরটাই থাকবে। সিম কার্ডটা নতুন পাবেন। ৪জি সাপোর্টেড সিমগুলো ইউসিম / USIM নামে পরিচিত। এগুলো ২জি, ৩জি এবং ৪জি নেটওয়ার্ক সাপোর্ট করে। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যের দরকার হলে মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার সার্ভিসে যোগাযোগ করুন। সিম রিপ্লেস করতে ১০০ টাকার মত খরচ হবে। তবে অপারেটরগুলো অফার দিলে খরচ নাও লাগতে পারে, এবং ফ্রি ডেটা পেতে পারেন। নতুন সংযোগ নিলে শুরুতেই ৪জি সিম পাবেন বলে আশা করা যায়।
ফোরজি ইন্টারনেটে খরচ কেমন?
প্রযুক্তিগতভাবে থ্রিজি’র চেয়ে ফোরজিতে তুলনামূলক কম খরচ হয়। ফোরজি চালু হলে মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম বর্তমানের তুলনায় খুব বেশি বাড়বে না বলে জানিয়েছেন গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি।
আপনার মোবাইল কি 4G সাপোর্ট করবে?
বর্তমানে যেসব স্মার্টফোন বাজারে বিক্রি হচ্ছে, সেগুলোর বেশিরভাগই ফোরজি সাপোর্ট করে। আপনার স্মার্টফোনের স্পেসিফিকেশন চেক করলেই জানতে পারবেন এটি ৪জি/এলটিই সুবিধা সমর্থন করে কিনা।
ফোরজি এলে থ্রিজির স্পিডও বাড়বে!
ফোরজি চালু হলে ৪জি উপভোগকারী গ্রাহকরা নতুন নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবেন, তখন ট্রাফিক কমে যাওয়ায় টুজি ও থ্রিজি গ্রাহকরাও ভাল স্পিড পাবেন বলে জানিয়েছেন গ্রামীণফোন সিইও মাইকেল ফোলি।
EmoticonEmoticon